অবশেষে মুক্তি পেল ‘দি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এর ট্রেলার। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই আরও এক বার তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ টের পেল এই দেশ। দিনের গোড়ায় হুঙ্কার ও পাল্টা হুঙ্কার, গর্জন ও পাল্টা গর্জনে মুখোমুখি সংঘাতের আরও একটা আবহ তৈরি হচ্ছিল। দিনের শেষে, স্বস্তির কথা একটাই, বুদ্ধি, বিচার ও বিচক্ষণতার জয় হল, অন্তত আপাতত। ‘দি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ মুক্তি ও প্রদর্শন ঘিরে না-বিক্ষোভের ঘোষণা করল কংগ্রেস। এদেশের গণতন্ত্র কিছুটা সাবালকত্ব অর্জন করল, সংশয় নেই সে বিষয়ে।
পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার উপাদান মজুত হচ্ছিল কিছুদিন ধরেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের একদা উপদেষ্টা সঞ্জয় বারুর লেখা বইয়ের উপর নির্ভর করে তৈরি হচ্ছিল ফিল্ম, যার মুখ্য চরিত্রে অনুপম খের এবং ফিল্মে গাঁধী পরিবারের প্রতি যে কটাক্ষ-বিদ্রুপ-অভিযোগের শাণিত বাণ থাকবে— ওয়াকিবহাল মহল সে সম্পর্কে অবগতই ছিলেন। সে আগুনে ঘি ঢালবার কাজটা নিপূণ ভাবে শুরু হল বিজেপি শিবির থেকে। গাঁধী পরিবারের উদ্দেশে কটাক্ষ করে এই ফিল্মের ঢালাও প্রশংসা বেরিয়ে এল বিজেপির টুইটে। পাল্টা গর্জন শুরু হল কংগ্রেস শিবির থেকেও। মহারাষ্ট্র প্রান্ত থেকে তুমুল বিক্ষোভের আওয়াজ উঠল। সদ্য ক্ষমতায় আসা মধ্যপ্রদেশ থেকে এল ফিল্ম প্রদর্শন করতে না দেওয়ার হুমকি। এল ভোটের আগে ‘গাঁজাখুরি গল্পের’ অবতারণার অভিযোগও। বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই বলল, কংগ্রেস বাক স্বাধীনতা তথা শিল্পীর স্বাধীনতার কথা বলে। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন?
আখ্যান যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত, তাহলে আরও একবার ভারতের সেই চেনা ছবিটাই দেখতাম আমরা। শিল্পের কোনও একটা মাধ্যমকে কেন্দ্র করে অভিযোগের বন্যা, তীব্র অসহিষ্ণুতা এবং শেষে লাগাম ছাড়া গুন্ডামির প্রদর্শনী। সেই গল্প থেকে সাবালকত্বের দিকে পা বাড়ালাম আমরা। সৌজন্যে কংগ্রেস, অন্তত আজকের মতো। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হল, এই ফিল্ম প্রদর্শনে কোথাও বাধা দেওয়া হবে না। একই বক্তব্যের অনুরণন শোনা গেল সর্বভারতীয় মুখপাত্রের গলাতেও, এই ফিল্মকে ‘অযথা অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার’ পক্ষপাতী নয় কংগ্রেস। অর্থাৎ শেষ বিচারের ভার মানুষের উপরেই ছেড়ে দেওয়াটা যে উচিত, সেই বোধে ফিরলেন কংগ্রেস নেতারা। এই বোধের অভাবেই বারংবার ভোটে অথবা না-ভোটে গুন্ডামির আস্ফালনের চূড়ান্ত উচ্ছৃঙ্খল প্রদর্শনী দেখেছে এই দেশ। কোনও এক বার এর থেকে উত্তরণের একটা ইঙ্গিতও যে পাওয়া গেল, তাও খুব কম নয়।
নেতিবাচকতার এই পরিবেশে আশার কথা শোনা গেল আজ। আশা করি, তা জীবিতই থাকবে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: মনমোহনকে নিয়ে ছবির প্রতিবাদ করে গুরুত্ব দিতে চায় না কংগ্রেস