নক্ষত্র হয়ে ওঠা মানুষও দিনের শেষে আমাদেরই মতো এক জন।
সুশান্ত সিংহ (রাজপুত) থাকলেন না। বলা যথাযথ হবে, থাকতে পারলেন না। পারলে, কে না থাকে। স্বভাবতই, দেশ জুড়ে এই প্রশ্ন উঠছে, চলে যেতে হল কেন তাঁকে? খ্যাতি, প্রতিপত্তি, একের পর এক প্রশংসিত অভিনয়, সাধারণ দর্শকদের উপচে পড়া ভালবাসা সত্ত্বেও, এই প্রাণঘাতী পথ কেন তাঁকে ডেকে নিল?
প্রাণঘাতী পথ বেছে নেওয়া যদিও নতুন কিছু নয়। মহাভারতের ভীষ্ম থেকে মহাতারকা মেরিলিন মনরো, নানা সময়ে, নানা কারণে, নানা মানুষ আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু চিত্রতারকাদের কথাই কেবল যদি ধরি, আমরা দেখব, তাঁদের জীবনে এক বিশেষ ধরনের ট্র্যাজেডি জড়িয়ে থাকে। তাই, মেরিলিন মনরো একাই নন, আত্মঘাতের তালিকায় আছে আরও সব উঁচু নাম। এমনিতে, মানুষমাত্রেই বিষাদের শিকার। জীবনে নিরাশা, ব্যর্থতা তো থাকেই। এ সবেরই ধারাবাহিক আঘাতে এক সময়ে অবসাদ আসে। কিন্তু সেই অবসাদ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ভারসাম্য টলে যেতেও পারে। আর তখনই মানুষ বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, নক্ষত্ররা ভিন্ন। তাঁদের রূপের বিচ্ছুরণই হোক, আর পর্দায় সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারার কারণেই হোক, তাঁরা সাধারণ দর্শকের কাছে রোল মডেল। আদর্শ জীবনের প্রতিরূপ। তাই আমরাও তাঁদের অনুকরণ করতে চাই প্রতি পদক্ষেপে। কিন্তু মনে রাখি না, নক্ষত্র হয়ে ওঠা মানুষও দিনের শেষে আমাদেরই মতো এক জন। হয়তো আমাদের চেয়ে বেশি রূপবান, বা বিত্তশালী তাঁরা, আমাদের চেয়ে খ্যাতিও তাঁদের বহু গুণ বেশি, কিন্তু শেষমেশ তাঁরাও আমাদেরই মতো।
আরও পড়ুন: লকডাউন উঠছে, ফেসবুকে ঝাঁটা-ন্যাতা ধরা পুরুষচিত্র উধাও হল বলে
অনেকেই ডায়েরি লেখেন, উজাড় করে দেন মনের কথা। কিন্তু যাঁরা লেখেন না, তাঁদের মনে কথার পাহাড় জমতে থাকে। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
যদি কাছ থেকে দেখি, তা হলে কি বুঝতে পারব কিছুটা, নক্ষত্রদের অবসাদকে? ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের আড়ালে থাকা কারণগুলোকে? রুপোলি পর্দার মানুষদের খ্যাতিই তাঁদের বিড়ম্বনার কারণ। সাফল্য পাওয়া মানেই স্বাভাবিক জীবনকে বন্দি করে ফেলা। আজীবনের লকডাউন। সহজ ভাবে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা যাবে না, রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া যাবে না, কেনাকাটা করতে বাজারে যাওয়া যাবে না, এই ‘না’-এর ফিরিস্তি বেশ দীর্ঘ। ভিড়ের স্বীকৃতি নেওয়া মানেই নিঃসঙ্গতার দলিলে সই করে দেওয়া।
অনেকেই এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন দ্রুত, অনেকেই হয়তো এই জীবনটাই চেয়ে এসেছেন চিরকাল। কিন্তু বিহারের ছোট্ট এলাকার একটি দামাল বন্ধুবৎসল ছেলের পক্ষে এমন জীবন সব সময় কাঙ্ক্ষিত না-ও হতে পারে। হয়তো সেই কারণেই মির্জা গালিব থেকে মিলান কুন্দেরায় ডুবিয়ে রাখতেন নিজেকে সুশান্ত, রাতের পর রাত জেগে ব্যালকনির টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে দেখতে চাইতেন দূরের তারাদের। নক্ষত্রের নিঃসঙ্গতা বোঝার জন্য কি? হবেও বা।
আরও একটু গভীরে যাওয়া যাক এ বার। নিজের জন্য লেখালেখির পাশাপাশি যেহেতু আমি ছবির জগতেও কিছু কাজ করি, তাই লেখার সুবিধের কারণে, এ-লেখার বাকি অংশকে কিছুটা চিত্রনাট্যেরই ঢঙে ভেঙে নিচ্ছি। হয়তো তাতে লিখতে সুবিধে হবে আমার।
প্রথম অঙ্ক
আমার মনে পড়ে যাচ্ছে সুবিখ্যাত একটি ফরাসি ছবির কথা, যার নাম A Very Private Affair। তবে, তারও আগে মনে পড়ছে লাস্যময়ী, সুন্দরী, ফরাসি অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো’র কথা, আপামর দর্শক তো বটেই, এমনকি, খোদ পাবলো পিকাসোও যাঁর রূপমুগ্ধ ছিলেন। সুশান্তের মতো, ব্রিজিতও এসেছিলেন ইয়োরোপের এক ছোট শহর থেকে প্যারিসে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। সুশান্তের মতো, তাঁর জীবনেও ছিল ওঠাপড়ার ঢেউ। তাঁর সেই অবসাদকে ঘিরেই তৈরি হয় এই ছবি।
ফরাসি চলচ্চিত্র ও মডেলিং দুনিয়ার নক্ষত্র নায়িকা ব্রিজিত বার্দো।
ইয়োরোপের নিউওয়েভ সিনেমা’র অন্যতম অংশীদার, পরিচালক লুই মাল-এর (Louis Malle) কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের? যিনি এই শহর কলকাতা নিয়ে ১৯৬৯ সালে বানিয়েছিলেন তাঁর তথ্যচিত্র Calcutta? সেই থেকে লুই আমাদের সংস্কৃতির আরও কাছের জন। তাঁরই তৈরি A Very Private Affair। M S Dhoni যে অর্থে বায়োপিক, এ ছবি সে অর্থে নয়। এখানে ব্রিজিত নিজেরই ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন এক রকম। যেখানে সুইৎজারল্যান্ডের ছোট শহরের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়ে প্রেমে পড়ে চলে আসে প্যারিসে। সেখানে এক প্রভাবশালী প্রযোজকের সঙ্গে আলাপ হয় তার। সামান্য কয়েক দিনের মধ্যে হাতে চলে আসে মডেলিং-এর দারুণ সব অফার ও বেশ কিছু ছবির কাজ। দেখতে দেখতে সাধারণ আটপৌরে অচেনা মুখ থেকে ফরাসি চলচ্চিত্র ও মডেলিং দুনিয়ার নক্ষত্র নায়িকা হয়ে ওঠে সেই মেয়ে। আর খ্যাতির চাপে অবসাদ গ্রাস করে তাকে। সেই অবসাদ এতখানিই যে, সমস্ত কিছু পেয়ে যাওয়ার পরেও সে আত্মঘাতী হতে চায়।
ইংরেজিতে একখানা কথা আছে, Art Imitates life imitates art। এ-ও প্রায় সেই রকমই। যদিও ব্রিজিত এখন থাকেন প্যারিস শহরে, সুস্থ অবস্থায়।
সুশান্ত সিংহ রাজপুত কিন্তু থাকলেন না। আকাশের চেয়ে একটু নিচু মুম্বই শহর তাঁকে চিরস্থায়ী ঠিকানা দিতে পারল না। ছোট শহরের ছেলে, দু’চোখে আনকোরা স্বপ্ন নিয়ে আরব সাগরের তীরে পাড়ি জমানো ছেলে, একের পর এক সিঁড়ি টপকে কোটি হৃদয়ের মালিক হয়ে ওঠা ছেলে, এক দিন নিঃশব্দে কাউকে কিছু না বলে মিলিয়ে গেল। মৃত্যুও আসলে এক Very Private Affair। দূর থেকে তাকে বিচার করার চেষ্টা বৃথা।
দ্বিতীয় অঙ্ক
এ বার চলে আসব, বহু পরে তৈরি অন্য একটি ছবির কথায়। তবে, তার আগে বলি, এক এক পেশার সমস্যা একক রকম। আমরা যারা লেখালেখি করি, উপন্যাস হোক, প্রবন্ধ হোক, বা কবিতা হোক, তাদেরও কি অবসাদ ঘিরে ধরে না কখনও? অবশ্যই ধরে। অবসাদ থেকে আত্মঘাতী হয়েছেন, এমন কবি-লেখকের সংখ্যা পৃথিবীতে কম নয়। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, আমাদের সারা ক্ষণ ওই রকম তীব্র আলোর নীচে থাকতে হয় না। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত খবর হয়ে যায় না, আমাদের গোপনীয়তা বিক্রি হয় না বাজারে। আমাদেরও প্রমাণ করতে হয় নিজেদের, বার বার। কিন্তু তার বেশির ভাগটাই সাদা পাতার সামনে। নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ায়। রুপোলি পর্দা আর সাদা পাতার মধ্যে ফারাক বিস্তর। হ্যাঁ, বাংলা ভাষায় লেখালেখিকে সারাটা সময় দিতে গেলে উপার্জন ভারী অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, যেমন বহু বার হয়েছে আমার। শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ কবি সাহিত্যিককেও উপার্জনের জন্য দীর্ঘকাল চাকরি করতে হয়েছে, আনন্দবাজারে। সকলের ভাগ্যে সেই লেখালেখির চাকরি তো থাকে না। তাকে যখন মাথায় ফুটন্ত লেখা বয়ে বেড়াতে বেড়াতে একেবারে ভিন্ন কোনও কাজে সময় ব্যয় করতে হয় মাইনের খাতিরে, তখন অবসাদ আসে। আসতেই পারে। কিন্তু তাকে কাটিয়ে ওঠা হয়তো তুলনামূলক কম কঠিন, কেননা এক জন কবি বা লেখকের ‘পাবলিক লাইফ’ তেমন নয়, যেমন এক জন নায়কের।
মুশকিল হচ্ছে, অত সহজে ‘শালা পাবলিক’ বলবার ক্ষমতা সকলের থাকে না। ‘নায়ক’-এ উত্তমকুমার।
নায়ক বলতেই মনে পড়ল, এই নামাঙ্কিত ছবিতে উত্তমকুমারের মুখে একটি সংলাপ রেখেছিলেন সত্যজিৎ রায়, যেখানে ছবি কিঞ্চিৎ মার খাওয়ায় দাঁতে দাঁত চেপে উত্তম ওরফে অরিন্দম মুখার্জি বলছেন, ‘শালা পাবলিক!’ কাকে বলছেন? যে-পাবলিক তাঁকে তিলে তিলে নায়ক বানিয়েছে, তাকেই। এখন মুশকিল হচ্ছে, অত সহজে ‘শালা পাবলিক’ বলবার ক্ষমতা সকলের থাকে না। উত্তমকুমার নিজেই যে অরিন্দম মুখার্জি হয়ে উঠেছেন, তা নয়। বরং উত্তমকুমার এ ছবিতে পর্দায় উত্তমকুমারই হয়ে উঠছেন, নায়ক ছবির পরতে পরতে তা বোঝা যায়। তিনি নিজের জীবনে সাফল্যের যে-শিখরে থাকতেন, সেখান থেকে এই অবজ্ঞা ছোড়া গেলেও, সুশান্তের জন্য সেই মিনার ছিল না। তাই অবজ্ঞার ভার তাঁকে চাপাতে হয়েছে নিজেরই কাঁধে। সে-ভার নেহাত কম নয়।
আরও পড়ুন: ‘শুধু সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড নয়, অঙ্কিতা ছিল তাঁর মা, স্ত্রী, সবকিছুই’
এ ক্ষেত্রে ব্রিজিত-এর চরিত্রের সঙ্গেও অরিন্দমের চরিত্রের একটি মূলগত পার্থক্য থেকে যায়, আর তা হল এই যে, এক জন অবসাদের কাছে হেরে যাচ্ছেন, আর এক জন অবসাদ ঠেলে উঠে দাঁড়াচ্ছেন। সময় থেকে সময়ে, ছবি থেকে গল্পে, এই লড়াইয়ের কাহিনি বদলে বদলে যায়। যেমন বদলেছে, সুশান্তের জীবনের কাহিনি। ‘ছিছোরে’ ছবিতে যে মানুষটি আত্মহননের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, জীবনে সেই মানুষটি বেছে নিচ্ছেন সেই আত্মহননকেই। এর চেয়ে বড় নিষ্ঠুর পরিহাস জীবন তাকে উপহার দিতে পারত কি? মনে হয় না।
তৃতীয় অঙ্ক
‘অটোগ্রাফ’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র অরুণ চ্যাটার্জি, ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি অবলীলায় বলতে পারেন, ‘‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি।’’
এ সময়ে দাঁড়িয়ে, পর্দার নক্ষত্র অন্তত অন্য কথা বলছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় যে ছবি দিয়ে কাজ শুরু করলেন, সেই ‘অটোগ্রাফ’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র অরুণ চ্যাটার্জি, ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যিনি অবলীলায় বলতে পারেন, ‘‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি।’’ যদিও মনে রাখা ভাল, সে ছবিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পাঁচ প্রযোজক। ষষ্ঠ প্রযোজকের রাজি হওয়ায় সৃজিত ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন। যে কথা বলছিলাম, উত্তমকুমারের মুখে ‘শালা পাবলিক’ সংলাপে যদি বা নিজের ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কিছু ফাঁক ছিল, অটোগ্রাফের অরুণ চ্যাটার্জি সেটুকুও রাখতে চাননি। গোটা টালিগঞ্জকেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে, নিজের মধ্যস্থ করে নিয়ে নিজেই হয়ে উঠেছেন ইন্ডাস্ট্রি, লার্জার দ্যান লাইফ। এ কথা যিনি বলতে পারেন, তাঁর মধ্যেও কি হতাশা নেই? বিষাদ নেই? নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তাকে অবসাদ পর্যন্ত যেতে না দেওয়ার উপায়ও জানা আছে তাঁর। তাই শেষমেশ অরিন্দম মুখার্জি বা অরুণ চ্যাটার্জিরা টিকে যান। থাকতে পারেন না সুশান্ত সিংহেরা। লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে ওঠা হয় না তাঁদের।
তিনটি ছবির তিনটি চরিত্র। কিছুটা জীবনের, কিছুটা সিনেমার। তিন জনের সফরে, গন্তব্যে, পরিণতিতে ফারাক আছে। কিন্তু অস্বীকার করতে পারি কি, তিন জনেই আসলে ভিড়ের মধ্যে নিঃসঙ্গ মানুষ? সেই নিঃসঙ্গতায়, এমনকি অবসাদ ভাগ করে নেওয়ার মতোও বন্ধু নেই তাঁদের। বন্ধু বলতে এক কালো চশমা, যা তাঁদের সারা ক্ষণ এঁটে রাখতে হয় চোখে, যাতে চোখের নীচের কালি সামনের মানুষের চোখে না পড়ে। অনেকেই ডায়েরি লেখেন, উজাড় করে দেন মনের কথা। কিন্তু যাঁরা লেখেন না, তাঁদের মনে কথার পাহাড় জমতে থাকে। সেটা ভাল নয়।
লেখার কথায় মনে পড়ল, কত সময় এমনও তো হয়, একটামাত্র শব্দের অভাবে আটকে আছে গোটা একখানা কবিতা, কিন্তু সেই শব্দটা ধরা দিচ্ছে না কিছুতেই। এক বার, আমাদেরই এক পূর্বসূরি এক দিন ভোরবেলা লিখতে ব’সে তাঁর শ্লোকের পদটি সম্পূর্ণ করতে পারছেন না কিছুতেই। শব্দ চাইছেন, আসছে না। অপেক্ষায় বেলা গড়িয়ে গেল, লেখার খাতা খুলে রেখেই নদীতে স্নানে গেলেন তিনি। ফিরে দেখলেন, ইতিমধ্যে কে যেন এসে তাঁর পদটি সম্পূর্ণ করে দিয়ে গিয়েছে। এই সৌভাগ্য তো সকলের হয় না, তাই অনেক সময়ে শব্দের অভাবে কবিতা হাতছাড়া হয়ে যায়। পরপর সাতখানা কবিতাও চলে যেতে পারে হাত থেকে, এক জন কবির খাতা খালি করে দিয়ে। সে-যন্ত্রণা সহনীয় তবু। কিন্তু এক জন প্রতিশ্রুতিমান নায়কের হাত থেকে পর পর সাতখানা ছবি চলে যায় যদি? সমীকরণটা বদলে যায় এক লহমায়। আর সেখানেই, নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় খোদ অবসাদ।
শেষমেশ অরিন্দম মুখার্জি বা অরুণ চ্যাটার্জিরা টিকে যান। থাকতে পারেন না সুশান্ত সিংহেরা।
হ্যাঁ, ফিরে এলাম সেই নায়কের কাছেই। মনে পড়ছে, নায়ক ছবির শুরুতে, টেলিফোনে কথা বলবার সময় কালো চশমাটি পরে নিয়েছিলেন উত্তমকুমার। ছবি শেষ হচ্ছে যখন, অগণিত মানুষের ভিড় তাঁকে ঘিরে ধরেছে, তখন আবার তিনি পরে নিচ্ছেন সেই কালো চশমা, সেই আড়াল, সেই স্বেচ্ছা-নির্বাসন। এই চশমার পিছনে, এই মুখোশের পিছনে, একলা মানুষটাকে চিনতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। অনেক সময় চিনে ওঠাও হয় না। যেমন হল না সুশান্ত সিংহ রাজপুতকেও। তাই চিরকালীন এক আড়ালকে সঙ্গী করে তাঁকে পাড়ি দিতে হল। সেই কালো চশমা তাঁর চোখ থেকে খুলে ফেলবার আর কোনও উপায় থাকল না আজ।