রাজনৈতিক দলের অংশ হলেই রাজনীতিক হয়ে ওঠা যায় না সম্ভবত। রাজনীতিক শব্দটায় যে সমীহের নিহিতি, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃস্থানীয়দের অনেকেই সেই সমীহের অযোগ্য। প্রায় প্রতি দিনই কেউ না কেউ এ সত্যকে প্রমাণ করে চলেছেন।
সকল নীতির শ্রেষ্ঠ হল রাজনীতি— কথিত অন্তত তেমনই। কিন্তু নীতি বা মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রাথমিক স্তরের ধারণা থাকলেও যে সব কাণ্ড ঘটানো প্রায় অসম্ভব, আমাদের অনেক ‘রাজনীতিক’ই সে সব সম্ভব করে দেখান। শিরঃপীড়ার সুরাহা কীসে? জবাবে কোনও কোনও ‘রাজনীতিক’ বলতে পারেন, সুরাহা শিরশ্ছেদে। কর্নাটক বিধানসভার নারী ও শিশু কল্যাণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা তেমনই এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। রাতের বেঙ্গালুরুতে মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে কী ভাবে? কমিটির সদস্যদের পরামর্শ, অফিস-কাছারিতে মেয়েদের দিয়ে রাতে কাজ করানো বন্ধ করতে হবে। অনুক্ত ভাবে বলা হল, মেয়েরা শুধু দিনেই কাজ করবেন, বিকেল গড়াতেই তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন। অর্থাৎ, রোগের নিরাময় নয়, অঙ্গচ্ছেদের পরামর্শ।
বিধায়কদের দেওয়া এই প্রস্তাব যদি মেনে নেয় সরকার, তা হলে মেনে নেওয়া হবে যে রাতের বেঙ্গালুরুতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন অপারগ। তবে পারগতা-অপারগতার প্রশ্ন দূরে সরিয়ে রেখে সরকার এ প্রস্তাব মেনে নিলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ দাক্ষিণাত্যেরই আর এক রাজ্য কেরলের এক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার মন্তব্য, রজস্বলা মেয়েরা পবিত্র নন, ওই সময়ে কোনও ধর্মস্থানে তাঁদের প্রবেশ অনুচিত। নারীর প্রতি, সমাজের প্রতি, ধর্মাচরণের প্রতি যাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও এতটা অস্বচ্ছ, তাঁদের হাতে রাজনীতির রাশ যত দিন, তত দিন রাজনীতির হাত ধরে খুব ইতিবাচক কোনও মোড়ে পৌঁছে যাওয়ার আশা না করাই ভাল।