সম্পাদক সমীপেষু: ‘‘যেতে নাহি দিব’’

সৎকারের সময়টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে শব আঁকড়ে থাকে, কারণ এক বার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share:

পুরাতত্ত্ববিজ্ঞানীরা ফসিল নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন, প্রাচীন মানুষ আগুনে ঝলসে অনেক সময় নিজ প্রজাতির মানবের মাংসও খেত। কিন্তু সে সময়ে জন্তু-জানোয়ারের অভাব ছিল না এবং তাদের শিকারে সেই আদিম মানব ছিল পটু। তা হলে কেন তারা মানুষের মাংস খেত? বিজ্ঞানীদের অনুমান, এর পিছনে আছে এই বিশ্বাস যে, মৃত মানুষের মাংস খেলে মৃতদের শক্তি তারা নিজেদের ভেতর যুক্ত করতে পারবে এবং মৃতেরা তাদের সঙ্গেই থাকবে। প্রাচীন গুহাতে জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, মৃতের সঙ্গেই, বা খুব কাছেই জীবিতেরা বাস করত। মৃত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার সংস্কার চালু হয় প্রায় কুড়ি হাজার বছর আগে। এর পর কিছু মানুষের দেহ, আত্মা ও প্রেতাত্মা এই ত্রিস্তরীয় বিশ্বাস জন্মাল। প্রাচীন মিশরে মৃতদেহ পোড়ানো বন্ধ হল। ইতিহাসবিদ হিরোডোটাসের মতে, ব্যাবিলনবাসীরা মৃতদেহ সুগন্ধি বস্তু দ্বারা সংরক্ষণ করতে শুরু করে। সেটাই মমি প্রথা হয়ে গেল, যদিও তার রূপ পাল্টেছে সময়ে সময়ে। এরই কাছাকাছি সময় থেকে কিছু ধর্মে মাটির নীচে কবর দেওয়া প্রথা চালু হল। ফলে নিকট পরিজনেরা বিভিন্ন ধর্মের সংস্কার মেনে মৃতদেহ সৎকার করতে শুরু করে।

Advertisement

সৎকারের সময়টা খুবই কঠিন, বিশেষত নিকটজনের কাছে। সে শব আঁকড়ে থাকে, কারণ এক বার ছেড়ে দিলে আর পাওয়া যাবে না। এই ভাবাবেগ থেকেই স্মৃতি রক্ষার ভাবনা শুরু। মৃতের ব্যবহৃত জিনিস রেখে দেওয়া, যেমন চুল কিছুটা কেটে যত্ন করে রেখে দেওয়া ছিল পুরনো প্রথা। অনেকে দাঁত সংরক্ষণ করত। বুদ্ধের দাঁত কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। প্রাক-ফটো যুগে অনেকের স্কেচ করে বাঁধিয়ে রাখা হত। মৃত ব্যক্তিদের হাত ও পায়ের ছাপ ভুসো কালি অথবা পাতা বা পাথরের রং দিয়ে ছাপ নিয়ে রাখত। ফটোগ্রাফি যুগ এসে গেলে স্মৃতি রাখা সহজ হয়ে গেল। এই আবেগের কিছু রূপ অন্য ভাবে মাঝেমধ্যে মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সে মৃতদেহের সঙ্গেই থাকতে শুরু করে, দূষিত পরিবেশে তার কিছু যায়-আসে না, আসল কথাটা হল “যেতে নাহি দিব”। ছবি বা চশমা নয়, গোটা দেহটাকেই ঘরে রেখে দেয় সে। পার্থ দে-র ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। পার্থ চিকিৎসাশাস্ত্রের মতে মানসিক অসুস্থ। আমরা মানসিক অসুস্থ বা অপূর্ণ মানসিক বিকাশের লোকেদের অতি সহজেই ‘পাগল’ বলে দাগিয়ে দিই। সম্প্রতি শুভব্রত মজুমদারের মা বীণা মজুমদার মারা গেলে ছেলে মায়ের দেহ ক্রায়োনিক্স পদ্ধতিতে রেখে দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর মতে চিকিৎসা-পদ্ধতির উন্নতি হলে বীণা দেবীকে হয়তো জাগানো যাবে।

হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করলে কিছু দিন আগেও কোনও ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হত। এখন বলা হয়, ব্রেন বা মস্তিষ্কের মৃত্যুই প্রকৃত মৃত্যু। ক্রায়োনিক্স এটা মানে না। বরং বলে যে, নিষ্ক্রিয় মস্তিষ্ক নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। যত ক্ষণ পর্যন্ত মস্তিষ্কের কাঠামো অটুট আছে, ভৌতবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহে মৌলিক কোনও বাধা থাকতে পারে না। যখন তথ্য সংগ্রহ আর কোনও ভাবেই সম্ভব হয় না, তখনই ‘মৃত্যু’ হয়। ক্রায়োনিক্সবিদরা এ-ও বলেন যে, মস্তিষ্ক থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা যায় বলেই ডাক্তাররা মৃত্যু ঘোষণার একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্যে কেটে রাখেন, কারণ মস্তিষ্কই দেহের সব খবরাখবর রাখে। ডাক্তার ঘোষিত মৃত্যুর পর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অতি শীতল জায়গায়, প্রায় মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে, এবং কিছু রাসায়নিক দ্রবণ বা মলম প্রয়োগ করে দেহ ক্রায়ো পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়, কারণ তাঁদের বিশ্বাস, চিকিৎসাবিজ্ঞান উন্নত হলে ভবিষ্যতে মস্তিষ্ককে আবার চালু করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য তরল নাইট্রোজেনে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখতে হবে। তবে আইনত মৃত্যু ঘোষণার পরই এই ভাবে দেহ রাখা যায়। আমেরিকার মনোবিদ ড. জেমস বেডফোর্ডের দেহ ১৯৬৭ সালে প্রথম ক্রায়োপদ্ধতি ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয় এবং এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০০ দেহ রাখা আছে। সারা পৃথিবীতে ১৫০০ ব্যক্তি আবেদন করেছেন, যাতে তাঁদের মৃত্যুর পর দেহ এই ভাবে সংরক্ষিত হয়। আমেরিকায় তিনটে, রাশিয়াতে একটা এ রকম সংস্থা আছে, যারা ক্রায়ো পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে। কিন্তু এই ভাবে দেহ রাখা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ, কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ভারতে এই ভাবে সংরক্ষণ নিয়ে এখনও কোনও আইন নেই, আইনত বাধাও নেই। ভারতে প্রথম ক্রায়োনিক্স নিয়ে কাজ করে এ রকম একটা প্রাইভেট সংস্থা দক্ষিণ কলকাতায় জোকা-র কাছে কয়েক বছর আগে তৈরি হয়েছে।

Advertisement

মরণের পরে স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আর্থিক সঙ্গতি থাকলে পুরো দেহটাকেই রেখে দেওয়ার মতো ব্যবসা গড়ে উঠতেই পারে। আজ শুভব্রত মানসিক অসুস্থ বলে চিকিৎসা চললেও আমরা কিন্তু অনেকেই নিজে ‘শেষ’ হয়ে যেতে চাই না বা পরমাত্মীয়কেও আগুনে পুড়িয়ে দিতে বা কবরে শুইয়ে রাখতে চাই না। ভাবাবেগের এই চরম মানসিক অবস্থা আমরা অনেকেই মনে মনে পোষণ করি, ‘পাগল’ হয় পার্থ বা শুভব্রতেরা।

‘কেঠো ব্যাঙ’ (wood frog / Rana sylvatica) প্রধানত বরফজমা শীতপ্রধান দেশে থাকে। অতিরিক্ত শীতে তারা দীর্ঘ সাত মাস ঘুমিয়ে থাকে। এমনকী শক্তি সঞ্চয়ের জন্য তাদের হৃদস্পন্দন, রক্তপ্রবাহ ও শ্বাসপ্রশ্বাস থেমে থাকে ওই দীর্ঘ সময়। এই সময় তাদের ‘ব্রেন ডেথ’ হয় কি না জানা নেই, কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে মস্তিষ্কের কাজ শুরু হয় এবং তারা খাবারের সন্ধানে ও প্রজনন-প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রকৃতির বৈচিত্র ও আশ্চর্যকে খতিয়ে দেখলে, মনে হতে পারে, সবই সম্ভব!

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-১০৪

সাম্মানিকের হাল

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য, খাতা পিছু পাঁচ টাকা ও স্ক্রুটিনি করার জন্যে এক টাকা করে দেওয়া হয় দীর্ঘ কয়েক বছর আগে থেকে। শিক্ষকরা তাঁদের বিদ্যালয়ের পরীক্ষা-খাতা দেখার পরও অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে এই উত্তরপত্রগুলি দেখে থাকেন। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসাবে ওই পরীক্ষার খাতাগুলি দেখতে বাধ্য, এই বিষয়ে আপত্তির কিছুই নেই। কিন্তু বর্তমানে দেওয়া ওই সাম্মানিক— এক টাকা ও পাঁচ টাকা কি যুগোপযোগী?

মহম্মদ মগদুম কালিন্দি, পূর্ব মেদিনীপুর

সিভিক পুলিশ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একলপ্তে লক্ষাধিক বেকার ছেলেমেয়েকে সিভিক পুলিশ পদে নিয়োগ করে বড় সংখ্যক কর্মসংস্থান করেছিলেন। ট্র্যাফিক-পরীক্ষাকেন্দ্র-সমাবেশ-মিছিল-উৎসব-অনুষ্ঠান সর্বত্রই এখন সিভিক পুলিশদের কর্তব্যরত অবস্থায় চোখে পড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা কম হওয়ায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এঁদের ভূমিকা কম নয়। অনেক সময় এঁদের বাড়ি থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানেও ডিউটি করতে যেতে হয়। অথচ এঁরা মাসের শেষে হাতে পান মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। আজকের গগনচুম্বী দ্রব্যমূল্যের বাজারে এই সামান্য অর্থে কিছু হয় না।

সুভাষ ঘোষ হাজরা পাঁচথুপী, মুর্শিদাবাদ

বন্দিমৃত্যু

সম্প্রতি ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (এনএইচআরসি) প্রদত্ত এক সমীক্ষায় জানা যায়, গত বছর ২০১৭-র ১ এপ্রিল থেকে ২০১৮-র ২৮ ফেব্রুয়ারি— এই সময়ে দেশব্যাপী কারাগারে বন্দিমৃত্যুর যে তালিকা, তাতে সবার প্রথমে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ: বন্দিমৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৫। পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যা ১২৭। এটা কি এ রাজ্যের পুলিশের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করে না?

পৃথ্বীশ মজুমদার কোন্নগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement