কতই রঙ্গ

বেশ কিছু দোকান ক্রেতার সুবিধা বাড়াইবার অভিপ্রায়ে ‘সেল্ফ চেক আউট’ প্রক্রিয়া চালু করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে কোনও ক্যাশিয়ার থাকেন না, কাউন্টারে যাইয়া ক্রেতা নিজেই সকল হিসাব ও অর্থপ্রদান মিটাইয়া লন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৩
Share:

সময় বদলাইয়া যাইতেছে, তাহার অন্যতম লক্ষণ হিসাবে দোকানপাটে ক্রয় করিবার ধরন পাল্টাইয়া গিয়াছে। অনেকে তো দোকানের ধার না মাড়াইয়া অনলাইন কেনাকাটা সারিয়া লইতেছেন। কিছু দোকান ক্রেতার প্রতি আকর্ষক হইয়া উঠিবার তাড়নায়, সেলফি তুলিবার স্বতন্ত্র স্থান নির্মাণ করিতেছে, যেখানে বর্ণ ও নকশা স্বতন্ত্র, বা হয়তো কোনও ভিডিয়ো চলিতেছে, যাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া নিজ ছবি তুলিয়া ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করিলে, হইহই পড়িয়া যাইবে! বেশ কিছু দোকান ক্রেতার সুবিধা বাড়াইবার অভিপ্রায়ে ‘সেল্ফ চেক আউট’ প্রক্রিয়া চালু করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে কোনও ক্যাশিয়ার থাকেন না, কাউন্টারে যাইয়া ক্রেতা নিজেই সকল হিসাব ও অর্থপ্রদান মিটাইয়া লন। তাঁহাকে দ্রব্যগুলির ‘বার কোড’ স্ক্যান করিতে হয়, ফল বা সব্জির ক্ষেত্রে কী লইলেন নথিবদ্ধ করিতে হয় (মূলত ‘টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে’র মাধ্যমে, অর্থাৎ পর্দায় ফুটিয়া উঠা দ্রব্যের নামে আঙুল স্পর্শ করিলেই হইবে), তাহার পর দ্রব্যগুলিকে ‘ব্যাগিং এরিয়া’য় রাখিতে হয়, সেইখানে একটি ওজন-যন্ত্র মাপিয়া দেখে, নথিবদ্ধ দ্রব্যের ওজন আর এই দ্রব্যগুলির ওজন মিলিতেছে কি না। পয়সা দেওয়া হয় কার্ডের সাহায্যে, বা নগদেও, সেই ক্ষেত্রে ‘কয়েন স্লট’ ও ‘ব্যাঙ্ক নোট স্ক্যানার’ কাজে লাগে। ব্যবস্থাটির সুবিধা হইল, দোকানে কম সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করিতে হয়, এক জন কর্মীই হয়তো চারিটি বা ছয়টি সেল্ফ চেক আউট যন্ত্রের তত্ত্বাবধান করেন। যন্ত্রগুলি কম জায়গা জু়ড়িয়া থাকে, ফলে দোকানে অধিক পণ্য রাখা যায়।

Advertisement

কিন্তু অনেক পণ্ডিত বলেন, ইহাতে চুরির সুযোগ বৃদ্ধি তো পায়ই, প্রবণতাও বাড়ে। এমনিতে যাঁহার চুরি করিবার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না, চুরি এমন সহজ দেখিয়া তিনি, প্রায় মজা পাইবার জন্যই, চুরি শুরু করিবেন। এমনও দেখা গিয়াছে, এক জন একটি অতি সস্তা ডিভিডি-র দামের স্টিকারটি একটি অত্যন্ত দামি প্লাজ়মা টিভির উপর লাগাইয়া, সেইটি স্ক্যান করিয়া লইয়া যাইবার জোগাড় করিয়াছেন। এই নিন্দা তো রহিয়াছেই যে ইহাতে বেকারত্ব বাড়িবে, বহু মানুষ ছাঁটাই হইবেন। অনেকে বলেন, মানুষের সহিত আদানপ্রদান কমিয়া আসা এই যুগের এক বিশেষ লক্ষণ, ইহার পর লোকে যদি বাজারে যাইয়াও কাহারও সহিত না মিশিতে পান, তবে মানুষের ‘সামাজিক জীব’ পরিচয়টি লুপ্ত হইবার আর কিছু বাকি থাকে না। কিন্তু এই সকল প্রতিবাদ উড়াইয়া ব্যবস্থা হইয়াছে বহনযোগ্য ক্ষুদ্র স্ক্যানারের, যাহা দিয়া ক্রেতা তাঁহার থলি বা ট্রলিতে দ্রব্য রাখিবার সময়ই স্ক্যান করিয়া লইতে পারিবেন, এমনকি খুলিয়াছে ‘অ্যামাজ়ন গো’ নামক আশ্চর্য দোকান, যেখানে ঢুকিবার সময় কেবল একটি ‘কিউ আর কোড’ স্ক্যান করিয়া লইতে হইবে, তাহার পর ক্রেতা কী কী লইতেছেন, তাহা নজর করিবে সিসিটিভি ও বিভিন্ন তাদৃশ ‘সেন্সর’, এবং বাহির হইয়া যাইবার সময় ক্রেতার অ্যামাজ়নের অ্যাকাউন্টে খরচটি দেখাইয়া দেওয়া হইবে। অর্থাৎ, কোনও প্রথাগত হিসাবনিকাশ ও অর্থপ্রদান করিতেই হইল না।

গত বুধবার ম্যানহাটানে একটি দোকান খোলা হইল, যেখানে বিভিন্ন প্রকারের স্বাস্থ্যবর্ধক পানীয় পাওয়া যাইবে। দোকানে কোনও কর্মী নাই, অর্থপ্রদানেরও ব্যবস্থা নাই। ক্রেতা দোকানে ঢুকিবেন, পছন্দসই পানীয় লইবেন, চলিয়া যাইবেন। তাহা হইলে অর্থ দিবেন কখন? কর্তৃপক্ষ আশা করিতেছেন, ক্রেতা তাঁহাদের একটি টেক্সট মেসেজ পাঠাইবেন, আমি অমুক অমুক লইয়াছি। প্রত্যুত্তর-মেসেজে লিঙ্ক দেওয়া থাকিবে, যেখানে ক্রেতা তাঁহার ক্রেডিট কার্ডের তথ্যাবলি দিবেন। তাহার পর টাকা কাটিয়া লওয়া হইবে। কিন্তু পূর্ণ ব্যবস্থাটিই দাঁড়াইয়া আছে এই অনুমানের উপর: ক্রেতা প্রথম টেক্সট মেসেজটি আদৌ পাঠাইবেন। তিনি যদি পানীয় লইয়া চলিয়া যান ও মেসেজটি কখনও না করেন, কিছুই করিবার নাই। দোকানের এক কর্তা জানাইয়াছেন, তাঁহারা বিশ্বাস করেন, অধিকাংশ মানুষ এই ভাবে চুরি করিবার ক্ষেত্রে অপরাধবোধে ভুগিবেন এবং এক-আধ বার চুরি করিলেও, তাহার পর হইতে আর করিবেন না। শেষে পুঁজিবাদ মানুষের প্রতি নিঃশর্ত বিশ্বাসে উপনীত হইল! তাহার ক্রয়-বিক্রয়ের সমীকরণে ঢুকিয়া পড়িল: ক্রেতার প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ— এই মন্ত্র! যে পুঁজিবাদ নাকি মানুষের লোভে সুড়সুড়ি দিয়া তাহাকে শোষণ করিয়া টাকা ঘরে তুলিবার চতুর যন্ত্র, সে বলিল, মানুষ এখন পণ্য লইয়া যান, পরে ঠিকই দেনা মিটাইবেন! কে বলিতে পারে, হয়তো প্রযুক্তিনির্ভর যুগ ক্রমে অধ্যাত্মবাদের সমীপবর্তী হইবে!

Advertisement

যৎকিঞ্চিৎ

বেঙ্কাইয়া নায়ডু বললেন, ইংরেজি ভাষা হচ্ছে ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া একটি ‘অসুখ’! বেশ, কিন্তু অসুখটি এত প্রবল, এবং এ অসুখে যে সংক্রামিত নয়, আধুনিক পৃথিবীতে তার সাফল্যের সম্ভাবনা এত কম, এই কটু কথাটুকুই হয়তো একমাত্র প্রতিবাদাস্ত্র। অনেকে বলতেই পারেন, ইংরেজি এক প্রবল সুখ! কারণ এই ভাষা পৃথিবীর সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়, যা শুধু ভারতীয় ভাষা জানলে দূর অস্ত্। সে ক্ষেত্রে ইংরেজি, অজ্ঞতা-অসুখের মহান ওষুধও বটে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement