Anjan Bandyopadhyay

ক্ষতস্থানে লবণ পড়ল, কাকতালীয় নয় বোধহয়

হতে পারে কোনও এক অদ্ভুত সমাপতন এ। আবার অদৃশ্য কোনও যোগসূত্রও থাকতে পারে এর নেপথ্যে। যখনই কোনও সঙ্কটকাল উপস্থিত হয়, যখনই পরিস্থিতি টালমাটাল হয়, ঠিক তখনই কোনও না কোনও গুজবের আমদানি হয় অনুষঙ্গে, দাবানলের মতো ছড়াতে শুরু করে সে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৪
Share:

হতে পারে কোনও এক অদ্ভুত সমাপতন এ। আবার অদৃশ্য কোনও যোগসূত্রও থাকতে পারে এর নেপথ্যে। যখনই কোনও সঙ্কটকাল উপস্থিত হয়, যখনই পরিস্থিতি টালমাটাল হয়, ঠিক তখনই কোনও না কোনও গুজবের আমদানি হয় অনুষঙ্গে, দাবানলের মতো ছড়াতে শুরু করে সে। চঞ্চল সময়ের স্থিতিশীলতাকে আরও টাল খাইয়ে দেয়।

Advertisement

মুদ্রা বাতিলজনিত পরিস্থিতিতে চাঞ্চল্য গোটা ভারতে। অস্থির এই সময়কে আরও অস্থির করে তুলে আচমকা ক্ষতস্থানে নুনের ছিটে। দেশে লবণ অমিল হয়ে পড়ছে। দোকানে-বাজারেও মিলবে না আর— এমনই গুজবে চঞ্চল হয়ে উঠল ভারত। উত্তরপ্রদেশ হোক বা দিল্লি, বিহার হোক বা পশ্চিমবঙ্গ, ভারতভূমির বিস্তীর্ণ বিস্তারে আতঙ্ক জাগাল লবণ-গুজব। অতএব, অনিবার্য কালোবাজারি, দামে হু হু ঊর্ধ্বগতি, দোকানে দোকানে কাড়াকাড়ি।

দেশের সরকার স্পষ্ট হিসাব প্রকাশ করে জানিয়েছে, লবণের জোগানে কোনও ঘাটতি নেই। লবণ উৎপাদন ও চাহিদার যে হিসাব সামনে আনা হয়েছে, লবণের জোগানে ঘাটতি না পড়ার তত্ত্বে বিশ্বাস রাখার প্রশ্নে সে হিসাব বেশ সন্তোষজনক। তাও গুজবের আগুন ইতিউতি উস্কে উঠছে মাঝেমধ্যেই। প্রশ্নটা তাই উঁকি দিচ্ছে আবার— নেহাৎ গুজব? নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

Advertisement

পরিস্থিতি যে আজ টালমাটাল, তার দায় অবশ্য ভারত সরকার এড়াতে পারে না পূর্ণতঃ। দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে কয়েক দিনের কৃচ্ছ্রসাধন মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল ভারতবাসী। কিন্তু মুদ্রা সঙ্কট দ্রুত অতিক্রমের আশ্বাস দিয়েও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। পরিকল্পনাহীনতার ছাপ স্পষ্ট বেশ। বিশ্বাসভঙ্গের একটা তিক্ততা তাই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে বাতাসে। পরিস্থিতির চাঞ্চল্যে তাই সরকারের দায় অনেকটাই। সেই কারণেই হয়তো লবণ-গুজবের আগুনটাও থেকে থেকে দাউদাউ করে উঠছে। ভরসা পাচ্ছে না ভারতবাসী। সরকারের এ আশ্বাসবাণীও বৃথা যাবে না তো? সংশয় তৈরি হচ্ছে মনে।

সংশয় আমাদের কাটিয়ে উঠতেই হবে। কারণ এই অস্থির সময়টা আসলে সতর্ক থাকার সময়, গুজবে গা ভাসানোর সময় এ নয়। সময়ের অস্থির ঢেউয়ের আড়ালে অনেক চোরাস্রোত ঘনিয়ে ওঠার চেষ্টায় থাকে। সে সব স্রোত কখনও অর্থনীতিকে অস্থির করতে চায়, কখনও প্রশাসনকে টলিয়ে দিতে চায়, আবার কখনও আমাদের সামাজিক সম্প্রীতির ভিতটাকে কাঁপিয়ে দিতে চায়। অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই বার বার এই ঘূর্ণিপাকগুলো ঘনিয়ে ওঠে। সেই কারণেই লবণ সংক্রান্ত গুজবকে আদ্যন্ত সমাপতন বলে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।

অতঃ কিম? বিষাক্ত নিঃশ্বাসের কোনও অস্তিত্ব যদি থেকে থাকে, তা হলে তার নির্গমণটাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে। আপাতত ভারসাম্য ফেরানোই একমাত্র লক্ষ্য হোক। সরকার পারুক বা না পারুক, আমাদের সফল হতেই হবে। নিজেদের স্বার্থেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement