Evo Morales

প্রত্যাবর্তন

বিগত বৎসরের গণ-আন্দোলনের প্রধান কারণ মোরালেসের স্বৈরাচারী আচরণ হইলেও ইহার পশ্চাতে আমেরিকার ভূমিকাও অস্বীকৃত নহে।

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪০
Share:

ইভো মোরালেস। ছবি: এএফপি।

আক্ষরিক অর্থেই রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটাইলেন বলিভিয়ার সমাজতন্ত্রী নেতা ইভো মোরালেস। বৎসরকাল পূর্বে প্রেসিডেন্ট পদ ত্যাগ করিয়া দেশ ছাড়িতে বাধ্য হইয়াছিলেন তিনি, এক্ষণে সেই দেশের নূতন প্রেসিডেন্টকে পদে বসাইবার পশ্চাতে প্রধান ভূমিকা তাঁহারই। নবনির্বাচিত সরকারে মোরালেসের ভূমিকা থাকিবে না, ইহা আপাতত স্পষ্ট; কিন্তু রাজনৈতিক নির্বাসন কাটাইয়া তিনি দেশে ফিরিবেন, ইহাও প্রায় নিশ্চিত। সদ্য অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও মোরালেসের দীর্ঘ ছায়াই ছিল শেষ সত্য। সমর্থকেরা তাঁহার নামে ভোট চাহিয়াছিলেন, বিদেশভূম হইতে প্রচার করিয়াছিলেন স্বয়ং মোরালেস। বিরোধিতার যাবতীয় উপকরণও ছিল তাঁহাকে ঘিরিয়াই। বিগত বৎসরের নির্বাচনের পর— যেখানে তাঁহার বিরুদ্ধে কারচুপি করিয়া জয়লাভের অভিযোগ উঠিয়াছিল এবং জঙ্গি আন্দোলনে উৎখাত হইতে হইয়াছিল— সেই দেশের রাজনীতি বিশেষ অগ্রসর হয় নাই। অনামা সেনেটর জানিনে আনিয়েস অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট পদে শপথ লইয়া এক বৎসর দেশ চালাইলেন বটে, কিন্তু এই নির্বাচনেও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোরালেসের প্রার্থী লুইস আর্কে এবং গত বারের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী কার্লোস মেসা।

Advertisement

যদিও ব্যক্তি মোরালেস অপেক্ষা তাঁহার ‘মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজ়ম’ (মাস) পার্টির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন জনতার পক্ষে অধিক জরুরি। ‘মাস’-এর ফিরিয়া আসিবার অর্থ আসলে তাহাদের নীতিসমূহের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। স্বভাবতই দ্রুত লয়ে দীর্ঘ দিনের সমাজতান্ত্রিক নীতিগুলি হইতে সরিয়া আসিতেছিল আনিয়েসের দক্ষিণপন্থী সরকার। অনুমান করা যায়, বলিভিয়া ফের বাম অভিমুখে বাঁক লইবে। উল্লেখ্য, মোরালেসের নেতৃত্বে দীর্ঘকালীন হীনাবস্থা পার করিয়া সমৃদ্ধির স্বাদ পাইয়াছিল দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশ। স্থিতিশীল ঘরোয়া রাজনীতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে ক্রমোন্নতি, মহাদেশের ভিতর সর্বাধিক বৃদ্ধির হার, সর্বনিম্ন অপরাধের তালিকায় প্রথম সারি ইত্যাদি সকল লক্ষণীয় উন্নয়নই মোরালেসের শাসনকালের অভিজ্ঞান। জনশিক্ষার প্রসার ও দারিদ্র দূরীকরণে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ও বলিভিয়ার প্রথম জনজাতিভুক্ত প্রেসিডেন্টকে নয়নের মণি বানাইয়াছিল।

এই কারণেই ‘মাস’-এর জয় আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন ফেলিয়াছে। স্মরণীয়, বিগত বৎসরের গণ-আন্দোলনের প্রধান কারণ মোরালেসের স্বৈরাচারী আচরণ হইলেও ইহার পশ্চাতে আমেরিকার ভূমিকাও অস্বীকৃত নহে। অতএব মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, কিউবা, ভেনেজ়ুয়েলার ন্যায় যে সকল দেশে বর্তমানে বামপন্থী সরকার ক্ষমতাসীন, তাহারা কেবল উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন নাই, এই ফলাফলকে কোভিড-১৯ সঙ্কটের পরবর্তী কালে লাতিন আমেরিকার সমাজতন্ত্রের পথে প্রত্যাবর্তন বলিয়া চিহ্নিত করিতেও উৎসুক। এমনকি ওয়াশিংটনও ‘বলিভিয়ানরা যাঁহাকে নির্বাচিত করিবেন’ তাঁহার সহিতই কাজ করিবার কথা জানাইয়াছে। সুতরাং, মোরালেসের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আর্কের দায়িত্বটি পর্বতপ্রমাণ। পর্যাপ্ত হাইড্রোকার্বন রাজস্ব, যাহা প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজে সমৃদ্ধ দেশটির মূল সম্পদ, তাহার ঘাটতি লইয়া উন্নয়নের কার্য সমাধা করিতে হইবে; এবং, অতিমারিদীর্ণ অর্থনীতিকে বাঁচাইতে হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement