Newsletter

প্রধানমন্ত্রীর রাজধর্মে অটল থাকা অত্যন্ত জরুরি

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণের উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই লোকসভায় তুমুল হট্টগোল শুরু করল সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গাঁধী বললেন, এ ভাষণ রাজনৈতিক ভাষণ, নির্বাচনী জনসভার ভাষণ।

Advertisement

আদ্যন্ত অযৌক্তিক কথা বলেননি কংগ্রেস সভাপতি। বাজেট অধিবেশনে যে উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণ দিয়েছেন প্রথা মাফিক। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণ দিতে গিয়ে বিরোধী দলকে এত তীক্ষ্ণ আক্রমণে বিঁধতে হয়, এমনটা আগে অনেকেরই জানা ছিল না। তাই বিরোধীদের তরফ থেকে কটাক্ষ অবধারিতই ছিল।

দশকের পর দশক দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশের জন্য কী করেছে কংগ্রেস? প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী কখন তুললেন? যখন প্রেক্ষাপটে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক হিংসা। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেবই বলছে, দেশে ক্রমশ বাড়ছে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা। বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার তার মধ্যেই বলছেন, মুসলিমদের ঠাঁই নেই ভারতে। বিজেপি শাসিত রাজস্থানে তার মধ্যেই কোনও মুসলিমকে পঁচিশ বার থাপ্পড় মারা হচ্ছে, ‘জয় শ্রী রাম’ বলার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলুন, তিনি আদৌ উদ্বিগ্ন কি না জানান, চেয়েছে সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে পথে হাঁটেননি। কর্মসংস্থান হবে কোন পথে, প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে কথা বলুন, চেয়েছিল সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে পথে হাঁটেননি। কৃষকদের উন্নতি কী ভাবে হবে, তাঁদের ঋণ মকুব করা হবে কি না, প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে মুখ খুলুন, চেয়েছিল সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে পথে হাঁটেননি। রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে অবস্থান ব্যক্ত করুন, চেয়েছিল সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে মুখ খোলেননি। দশকের পর দশক শাসন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস কী করেছে আর কী করেনি, প্রধানমন্ত্রী সেই চর্চাতেই সময় কাটিয়ে দিয়েছেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে চর্চার অবকাশ কি আজ আর রয়েছে? প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতেন, ব্যর্থতার অভিযোগ আনতেন, সে মেনে নেওয়াই যায়। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের মসনদে প্রায় চার বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরে তো আর কংগ্রেসের সমালোচনা শোভা পায় না মোদীর মুখে। গত চার বছরে কী করলেন প্রধানমন্ত্রী? দেশকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারল তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার? এই সব প্রশ্নের জবাব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেওয়াই তো এখন প্রধান কাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সংসদের দুই কক্ষেই দীর্ঘ ভাষণ দিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর রাজত্বে দেশের মৌলিক উন্নতি কতখানি হয়েছে, সেই ছবিটা তুলে ধরার কোনও চেষ্টাই করলেন না। ছবিটা দেখানোর অবকাশগুলো এড়িয়েই গেলেন বরং।

আরও পড়ুন: দেশে সাম্প্রদায়িক হিংসা বেড়েছে, সবার উপরে উত্তরপ্রদেশ

দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে অনেকের কাছেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই আচরণ। সরকারের অর্জনগুলোকে তুলে ধরছেন না কেন মোদী? কেন সরকারের সাফল্যকে প্রচারে আনছেন না? এ সব প্রশ্নের জবাব নরেন্দ্র মোদীরা কিন্তু দেবেন না। কারণ মিথগুলো ভাঙতে শুরু করেছে একে একে। ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। দু’কোটি কর্ম সংস্থানের প্রতিশ্রুতি এখনও অধরা। কৃষকের রোজগার দ্বিগুণ করা হবে বলে ঘোষণা রয়েছে, কিন্তু কোন পথে দ্বিগুণ হবে রোজগার, তার দিশা নেই। বিজেপির রাজত্বে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ায় না, এমন এক মিথও অস্তিত্বশীল ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সে মিথও ভেঙে চুরমার। উত্তর দেওয়া অতএব খুব স্বস্তিদায়ক নয় নরেন্দ্র মোদীদের পক্ষে। বর্তমানটা কেমন, সে উত্তর দেওয়ার বদলে অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনেক নিরাপদ বরং। নরেন্দ্র মোদী সেই পথেই হাঁটছেন।

আরও পড়ুন: এ কি সংসদ! ভোট ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর

জওহরলাল নেহরু থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী পর্যন্ত অনেক প্রধানমন্ত্রীকেই সংসদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ভাষণ দিতে দেখেছে এ দেশ। নরেন্দ্র মোদীর এই ভাষণ কিন্তু সে সবের ধারেকাছেও আসে না। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণ নির্বাচনী জনসভার বয়ানের সমতুল হয়ে উঠেছে, বিরোধী পক্ষের তরফ থেকে এমন অভিযোগ আগে কখনও তোলা হয়েছে কিনা সহজে মনে করা যায় না। অতএব আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে শাসকের।

আরও পড়ুন: জনতার দরবারে রাহুল, মোদীকে হটানোর বার্তা

রাজধর্মের প্রতি অনুগত থাকাটা অত্যন্ত জরুরি আসলে। নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ীই কিন্তু রাজধর্ম পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে। ২০০২ সালের ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সে কথা বলেছিলেন অটল। আজও কিন্তু প্রেক্ষাপটে সামাজিক তথা সাম্প্রদায়িক কাঠামোটা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। কিন্তু মোদীকে আজ রাজধর্মের কথা মনে করিয়ে দেবেন কে? এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement