মাসাধিক কাল পূর্বেই সতর্ক করিয়াছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাঁতারু ইয়ান থর্প। ফেব্রুয়ারির শেষেই তিনি মতপ্রকাশ করিয়াছিলেন, একটি অলিম্পিক্সে যোগদান অপেক্ষা খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আগে নিরাপত্তা, পরে খেলা। ইহার পর করোনার করাল গ্রাসে বিপদগ্রস্ত হইয়াছে সমগ্র পৃথিবী। অতি দ্রুত বাড়িতেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সেই কারণে এক বৎসর পিছাইয়া গিয়াছে অলিম্পিক গেমস। নূতন সূচি অনুসারে ২০২১ সালের ২৩ জুলাই শুরু হইবে টোকিয়ো অলিম্পিক্স ২০২০। কিন্তু বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়ানুষ্ঠান পিছাইয়া দিবার ফলে তাহার পরবর্তী বৎসর, অর্থাৎ ২০২২-এর নানা ক্রীড়া-আয়োজনের সূচি লইয়া একাধিক সঙ্কট তৈয়ারি হইয়াছে। ২০২১-এর অগস্টে অনুষ্ঠিত হইতে চলা বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ এক বৎসর পিছাইতে হইতেছে। অথচ ২০২২-এর অগস্টে দুইখানি অত্যন্ত জরুরি ক্রীড়ানুষ্ঠান হইবার কথা: কমনওয়েলথ গেমস এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। বহু পরিমাণ বিনিয়োগ, সর্বোপরি ঐতিহ্য যুক্ত থাকিবার ফলে কমনওয়েলথের পক্ষে তারিখ পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব। শেষাবধি যদি একই মাসে তিনটি সুবৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়, তাহা হইলে নিশ্চিত ভাবেই অ্যাথলিটদের কোনও একটি বাছিয়া লইতে হইবে। যাহা খেলোয়াড় এবং ক্রীড়ামোদী, কাহারও পক্ষেই সুখের নহে। বাতিল হইয়াছে উইম্বলডন, আইপিএল-এর ন্যায় জনপ্রিয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও।
অলিম্পিক্স পিছাইয়া দেওয়া যথাযথ হইবে কি না, ইহা লইয়া গত মাসের শেষ সপ্তাহ অবধিও সকলে নিশ্চিত ছিলেন না। এত বৃহৎ আয়োজন এক বৎসর পিছাইয়া দিলে কত পরিমাণ অর্থ অধিক ব্যয় হইতে পারে, সেই হিসাব লইয়া কাটাছেঁড়া চলিয়াছিল। কেহ কেহ বলিয়াছিলেন, চার মাস অবশিষ্ট আছে, এত বিচলিত হইবার কিছু নাই। বিশ্ব জুড়িয়া পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলিয়া যাইবার পরে অবশ্য তেমন আর কেহ বলিতেছেন না। এখন সূচি পরিবর্তনের পরিণতি লইয়া মতানৈক্য চলিতেছে। কিন্তু এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে যে সত্যটি উপলব্ধি করা দরকার, তাহা হইল ক্রীড়া একটি বিনোদনমাত্র। শারীরিক সুস্থতা, তৎসূত্রে চরিত্রগঠন, বহু মানুষের রোজগার ইহার সহিত জড়িত, সন্দেহ নাই, কিন্তু সেই কোনওটিই মহামারি-প্রতিরোধ অপেক্ষা জরুরি নহে। দর্শকই যদি না থাকেন, তাহা হইলে আর ক্রীড়া আয়োজনের অর্থ কী? খেলা কাহার জন্য? এবং এই পরিস্থিতিতে গ্যালারিতে দর্শক সমাগম যে যথার্থ হইবে না, বরং বিপদ ডাকিয়া আনিবে, তাহা তো প্রমাণিত। ইটালিতে কোভিড-১৯ মারাত্মক হইয়া উঠিবার পশ্চাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটি ম্যাচের ভূমিকা আছে। ইহা জানিবার পরেও কি ঝুঁকি লওয়া যায়? আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাণিজ্যিক দিকটিও বিপুল। খেলা বন্ধ থাকিলে বহু সহস্র কোটি ডলারের বাণিজ্য-লোকসান। কিন্তু, বাণিজ্যের বহুবিধ ক্ষতি দুনিয়া মানিতেছে। ক্রীড়া বাণিজ্যের ক্ষতিও মানিতে হইবে। সকলেরই বুঝিয়া লওয়া আবশ্যক যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকিবে, মতপার্থক্য হইবে, বহু সঙ্কটও ঘনাইবে, কিন্তু কোনওটিই অতিমারির তুল্য নহে। লকডাউনের কালে এই সকল বিতর্ক স্থগিত রাখিয়া খেলাধুলা কিছু দিন পিছাইয়া দেওয়াই শ্রেয়। সংশয়হীন ভাবে। কোনও অবস্থাতেই মহামারি লইয়া ছেলেখেলা নহে।