ফাইল চিত্র।
কলিকাতায় দূষণের ভয়াবহতা কিছুটা স্পষ্ট করিল জাতীয় পরিবেশ আদালত, দুইটি পৃথক মামলায়। তাহার একটি ধাপা লইয়া। শুধুমাত্র এই একটি স্থান হইতেই ২০১৩ হইতে ২০২২ সাল— নয় বৎসরের মধ্যে প্রত্যাশিত কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ দাঁড়াইবে আড়াই লক্ষ টন। দীর্ঘ দিন ধরিয়া শহরের বর্জ্য ধারণ করিতেছে ধাপা, যাহার অবস্থান এখন কার্যত শহরের অভ্যন্তরে। ইহাতে সংলগ্ন এলাকায় দূষণ কত বাড়িয়াছে, তাহা দেখিতে কমিটি গড়িবার নির্দেশ দিয়াছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। সংশ্লিষ্ট কমিটি ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পাশাপাশি সংস্কারের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, তাহাও স্থির করিবে। অপর মামলাটির বিষয় আদিগঙ্গা। নদীটি সমগ্র দেশের সর্বাপেক্ষা দূষিত নদীগুলির অন্যতম। আদালত জানাইয়াছে, সেই নদীর সংস্কার এবং পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে যাহাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তাহা নিশ্চিত করিবার দায়টি লইতে হইবে রাজ্য পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, কলিকাতা পুরসভা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে।
দুইটি পৃথক স্থান, অথচ দূষণের প্রশ্নে একসূত্রে মিলিয়াছে। মিলিয়াছে আরও একটি ক্ষেত্রে— উভয় ক্ষেত্রেই পরিবেশ ও স্বাস্থ্যহানি হইতেছে রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রতায়। দূষণের বহর সম্পর্কে সরকার অবগত; কী করিতে হইবে, তাহাও বহু আলোচিত; অথচ সুনির্দিষ্ট কর্তব্যগুলি পালন করা হয় নাই। ধাপায় সঞ্চিত আবর্জনার পরিমাণ যে তাহার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করিয়াছে, সেই বিষয়ে বহু পূর্বেই সতর্ক করিয়াছিলেন পরিবেশবিদরা। সরকার যথোচিত গুরুত্ব দেয় নাই। সঞ্চিত আবর্জনার উপরই অবৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতি দিনের বর্জ্য জমা হইতেছে। বিষাক্ত গ্যাসে ভরিতেছে সংলগ্ন অঞ্চল। যে কোনও মুহূর্তে বিপর্যয়ের প্রবল সম্ভাবনা। অবহেলিত হইয়াছে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কাজটিও। আদিগঙ্গা লইয়াও একই রকম উদাসীনতার চিত্র বর্তমান। ইতিপূর্বে আদিগঙ্গার দূষণ প্রতিরোধে কী কী কাজ হইয়াছে, এবং ভবিষ্যতে কী করা হইবে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট কলিকাতা পুরসভার জমা দিবার কথা ছিল জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিকট। সেই রিপোর্ট সময়মতো জমা পড়ে নাই। এই কারণে আদালতের নিকট কড়া ধমকও শুনিতে হইয়াছে পুরসভাকে। তাহার পরও তৎপরতা বাড়ে নাই।
এই উদাসীনতা কেন? ধাপা ব্যতীত জঞ্জাল ফেলিবার জমির ব্যবস্থা করা যায় নাই, অথবা মেট্রো রেলের স্তম্ভ এবং বেআইনি দখলদারদের কারণে আদিগঙ্গার সংস্কার করা যাইতেছে না— রাজ্য সরকারের এই যুক্তি ধোপে টিকিবে না। সমস্যাগুলি সর্বজনবিদিত, প্রয়োজন সমাধান। তাহার জন্য যে জ্ঞান, পারদর্শিতা, অর্থ, ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, তাহা কি রাজ্য সরকারের নাই? নদী সংস্কার, দূষণমুক্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থও রাজ্য কেন ব্যয় করিতে পারিতেছে না, প্রশ্নটি পীড়াদায়ক। কর্মহীনতা যখন ব্যাপক আকার ধারণ করিয়াছে, তখন কর্মসংস্থানের উপায় হইতে পারে দূষণমুক্তি প্রকল্পগুলি। রাজ্য যদি পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি রূপায়ণে তৎপর হয়, তাহা হইলে কর্মসংস্থান হইবে, সদ্ব্যবহার হইবে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থের, বাঁচিবে জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। দূষণমুক্ত পরিবেশে বাঁচিবার অধিকার নাগরিকের জীবনের অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ।