বিশ্বাস এবং দ্বিচারিতা হাত ধরাধরি করে পথ চলতে পারে না। তাই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্কের বা উন্নত সম্পর্কের কোনও আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসই হল উন্নত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রথম এবং অপরিহার্য শর্ত।
পাকিস্তান বার্তা দিল, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কে আগ্রহী তারা। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমন আগ্রহ মৃদু ভঙ্গিতে আগেও দেখিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব কোনও দিনই তা পছন্দ করেনি। এ বার শোনা গেল, পাক সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তাই সুসম্পর্ক চাইছেন। দেশের সরকার যদি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে চায়, তা হলে দেশের সেনা সে প্রয়াসে সহযোগিতা করবে— পাকিস্তানের জাতীয় আইনসভায় দেওয়া এক ভাষণে জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া এমনই মন্তব্য করেছেন বলে খবর পাওয়া গেল।
বাস্তবে ঠিক উল্টো আচরণ দেখা গেল। নিয়ন্ত্রণরেখায় এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাকিস্তান আচমকা আগ্রাসন বাড়িয়ে দিল। রোজ সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন, বিনা প্ররোচনায় গোলাবর্ষণ বেড়ে গেল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ভারতীয় নাগরিক কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে তাঁর মা ও স্ত্রীকে দেখা করতে দিতে পাকিস্তান রাজি হল। কূটনৈতিক সৌজন্য এবং মানবিক আচরণের পথেই হাঁটতে চায় পাকিস্তান— শুধু ভারতকে নয়, গোটা পৃথিবীকে এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা হল।
বাস্তবে এ ক্ষেত্রেও ঠিক উল্টোটা ঘটল। পাকিস্তানে গিয়ে ভয়াবহ অসৌজন্যমূলক আচরণের মুখে পড়তে হল কুলভূষণ যাদবের মা ও স্ত্রীকে। শুধু অসৌজন্য নয়, অবন্তী যাদব ও চেতনকুল যাদবকে যে পরিস্থিতির মুখে ফেলা হল, তাতে অমানবিকতা এবং মর্ষকামের অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্তও তৈরি হল।
আরও পড়ুন: ‘বদলা’ নিল ক্ষিপ্ত বিএসএফ, পাক রেঞ্জার্সের অন্তত ১২ জওয়ান হত
এই দুই দ্বিচারিতা নিয়ে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি পাকিস্তানকে। সুযোগ্য এবং কঠোর ভাষায় নয়াদিল্লি বেআব্রু করেছে পাক সঙ্কীর্ণতা ও নীচতা। কিন্তু ইসলামাবাদ তাতে সঙ্কুচিত নয় একটুও। ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে কথা। নিয়ন্ত্রণরেখায় এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে সঙ্ঘাত আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।ভারতীয় বাহিনীর উপর যে কোনও হামলার জবাব ভারত উপযুক্ত ভঙ্গিতেই দেবে, এ কথা বোঝার পরে হামলায় তথা প্ররোচনায় আরও বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত। কুলভূষণ যাদব ইস্যুতেও ভারতের সঙ্গে তিক্ততা আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা পাকিস্তান চালিয়ে যাচ্ছে। কুলভূষণের বয়ান সম্বলিত আরও এক ভিডিও পাক কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে। সে ভিডিওয় কুলভূষণ যাদবকে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যাচ্ছে। ওই ভারতীয় কূটনীতিকের আচরণে তাঁর মা ও স্ত্রী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ করতে শোনা যাচ্ছে কুলভূষণকে। কূটনৈতিক আদান-প্রদানকে আরও তলানিতে ঠেলতেই যে কুলভূষণকে এমন কথা বলতে বাধ্য করা হচ্ছে, সে নিয়ে সংশয়ের অবকাশ কমই।
সীমান্তে কোন আচরণ মৈত্রী এবং সুসম্পর্কের বার্তাবহ, কোন আচরণ ঠিক তার বিপরীত, সে কথা বোঝার ক্ষমতা ভারতের রয়েছে। কূটনৈতিক পরিসরে সৌজন্য কাকে বলা হয় এবং অসৌজন্য তথা অভব্যতার রূপটা কেমন, ভারতীয় কূটনীতিকরা সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল। অতএব পাকিস্তানের চরম দ্বিচারিতা নিয়ে একটুও ধোঁয়াশার মধ্যে নেই ভারত। ধোঁয়াশা শুধু গাঢ় হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির ক্ষীণ সম্ভাবনাটাকে ঘিরে।