Unemployment

গভীরতর বিপদ

কর্মসংস্থানের এমন হাঁড়ির হাল কেন? তাহার সহজ উত্তর, সামগ্রিক অর্থব্যবস্থারই কোমর গত কয়েক বৎসরে ভাঙিয়া গিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কথা ছিল, প্রতি বৎসর দুই কোটি নূতন কর্মসংস্থান হইবে। কার্যক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের হিসাব অনুসারে দেখা গেল, সাত বৎসরে নূতন চাকুরি হইয়াছে সাকুল্যে একাত্তর লক্ষ। বৎসরে গড়ে দশ লক্ষের সামান্য বেশি, অর্থাৎ প্রতিশ্রুতির মাত্র পাঁচ শতাংশ পূর্ণ হইয়াছে। এক কথায় ইহাই নরেন্দ্র মোদী জমানার প্রকৃত চিত্র। অতিমারির ঘাড়ে দোষ চাপাইবার উপায় নাই, কারণ পরিসংখ্যানটি তাঁহাদের ক্ষমতায় আসিবার পর হইতে সাত বৎসরের, সাম্প্রতিকতম দেড় বৎসরের নহে। বর্তমান ছবিটি ভয়ঙ্করতর। পরিসংখ্যান সংস্থা সিএমআইই-র হিসাব অনুসারে, শহরাঞ্চলের কর্মসংস্থানহীনতার হার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাইয়া গিয়াছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও কর্মসংস্থান বাড়তির দিকে। গ্রামেও বেকারত্ব বাড়িতেছে, ইহা ভয়ঙ্কর সংবাদ। মোদী জমানায় কৃষিতে নিযুক্ত মানুষের অনুপাত বাড়িয়াছে। ভারতীয় কৃষি তাহার ছদ্মবেশী বেকারত্বের কারণে কুখ্যাত— কৃষিতে নিযুক্ত বহু মানুষই প্রকৃত প্রস্তাবে উৎপাদনশীলতাহীন ভাবেই কাজ করেন, তাঁহাদের কাজে কৃষির উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে না বলিলেই চলে। তাহা সত্ত্বেও যদি গ্রামে বেকারত্ব বাড়ে, তবে বুঝিতে হয়, অ-কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে মারাত্মক টান পড়িয়াছে। প্রধানমন্ত্রী বা তাঁহার দোসর মুচকি হাসিয়া বলিতে পারেন, বৎসরে দুই কোটি কর্মসংস্থান করিবার প্রতিশ্রুতিটি নিছকই জুমলা ছিল। কিন্তু, সেই রসিকতা সহ্য করিবার সাধ্য অধিকাংশ ভারতীয়েরই আর নাই।

Advertisement

কর্মসংস্থানের এমন হাঁড়ির হাল কেন? তাহার সহজ উত্তর, সামগ্রিক অর্থব্যবস্থারই কোমর গত কয়েক বৎসরে ভাঙিয়া গিয়াছে। নরেন্দ্র মোদী যখন দিল্লির তখ্‌তে বসিয়াছিলেন, তখন ভারত বিশ্বের সর্বাগ্রগণ্য অর্থব্যবস্থাগুলির সারণিভুক্ত হইতেছিল। তাঁহাদের পরিচালনার এমনই মহিমা যে, বিশ্বের বৃহৎ অর্থব্যবস্থাগুলির মধ্যে অতিমারির ধাক্কাটি সর্বাপেক্ষা জোরে লাগিল ভারতেরই গায়ে। তাহার কারণ, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির জোরের জায়গাগুলি তাঁহারা মারিয়াই রাখিয়াছিলেন। বাজারে চাহিদা তলানিতে, মানুষের ব্যয়ের সামর্থ্য নিম্নমুখী। গ্রামাঞ্চলে ভোগব্যয়ের প্রকৃত পরিমাণ হ্রাসমান। অর্ধশতকে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ। এই সমস্ত ঘটনাই ঘটিয়াছে অতিমারির তাণ্ডব শুরু হইবার পূর্বেই। সামগ্রিক অব্যবস্থা তো বটেই, ভারতীয় অর্থনীতির সর্বনাশের জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী নোট বাতিল এবং অপরিকল্পিত ভাবে জিএসটি ব্যবস্থার প্রবর্তনের ঘটনা দুইটি। যে দেশে কর্মসংস্থানের সিংহভাগ অসংগঠিত ক্ষেত্রে হয়, সেখানে এই অবিমৃশ্যকারিতা কতখানি ভয়ঙ্কর হইতে পারে, কর্মসংস্থানহীনতার পরিসংখ্যান সেই সাক্ষ্য দিতেছে।

কিছু প্রবণতা গভীরতর উদ্বেগের জন্ম দিতেছে। যেমন, পরিসংখ্যান বলিতেছে যে, এই সময় স্বাভাবিক ভাবে যত মানুষের কর্মসন্ধান করিবার কথা, প্রকৃত হিসাবে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা তাহার তুলনায় কম। অর্থাৎ, বেশ কিছু মানুষ কাজ পাইবার আশা হারাইয়া ফেলিয়াছেন। সেই তালিকায় মহিলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, এমন একটি আশঙ্কার যথেষ্ট ভিত্তি আছে। পরিসংখ্যান বলিতেছে, মহিলাদের মধ্যে কাজ পাইবার হার কমিয়াছে। এই প্রবণতার সুদূরপ্রসারী ফল মারাত্মক। মহিলাদের কাজ পাইবার সম্ভাবনা কমিলে পরিবারের মধ্যে মেয়েদের শিক্ষার তাগিদও কমে, ফলে লিঙ্গবৈষম্যের পরিমাণ বাড়ে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের যুদ্ধটি দুষ্করতর হইয়া উঠে। অন্য দিকে, কর্মসংস্থানহীনতা বাড়িলে, অথবা আয় কমিলে, তাহার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে পুষ্টির খাতে। শিশুদের অপুষ্টি বাড়ে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহাদের উন্নয়নের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিই। ইহার প্রভাব পড়ে তাহাদের জীবনের কক্ষপথে। কল্যাণরাষ্ট্রের কর্তব্য এই দিকগুলিতে নজর দেওয়া। অর্থব্যবস্থার ধাক্কা যাহাতে উন্নয়নের ভিতকে কাঁপাইয়া না দেয়, তাহা নিশ্চিত করা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement