Reserve Bank of India

অপ্রত্যাশিত

সংশয়ের যথেষ্ট কারণও ছিল— ভারতীয় অর্থব্যবস্থার দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে আসীন হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা বা তত্ত্বজ্ঞান ইতিহাসে স্নাতকোত্তর শক্তিকান্ত দাসের ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৭
Share:

ছয় বছর আগে, সরকারের সঙ্গে লাগাতার মতানৈক্যের ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেলের পদত্যাগের পরে তৈরি হওয়া অস্থির সময়ে, যখন শক্তিকান্ত দাসকে বেছে নেওয়া হল তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে, তখন অনেকেই তাঁকে নিয়ে তেমন আশাবাদী ছিলেন না। সে সংশয়ের যথেষ্ট কারণও ছিল— ভারতীয় অর্থব্যবস্থার দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে আসীন হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা বা তত্ত্বজ্ঞান ইতিহাসে স্নাতকোত্তর শক্তিকান্ত দাসের ছিল না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পরবর্তী ছ’বছরে তিনি সংশয়ীদের অবাক করেছেন। সম্প্রতি দ্বিতীয় দফার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন শ্রীদাস পদটি ছাড়লেন, তত দিনে তিনি ব্যাঙ্কের ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘতম মেয়াদের গভর্নর। এবং, এই সময়কালেই ঘটে গিয়েছে কোভিড অতিমারি, বিশ্ব জুড়ে তৈরি হয়েছে বিপুল মন্দা, আন্তর্জাতিক মুদ্রার বাজার টালমাটাল হয়েছে। ভারতীয় অর্থব্যবস্থার জাহাজটি যে সেই উত্তাল সমুদ্র পার হতে পেরেছে, সেই কৃতিত্বের একটি বড় অংশ শক্তিকান্ত দাসের প্রাপ্য।

Advertisement

দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসাবে শক্তিকান্ত দাস গুরুত্ব দিয়েছেন মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিকেই। ফলে, আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদের হার কমানোর পরে যখন বিশ্বের বৃহৎ অর্থব্যবস্থাগুলিও একই পথে হেঁটেছে, তখনও ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অপরিবর্তিত রেখেছে সুদের হার। সিদ্ধান্তটি যুক্তিযুক্ত, যদিও সম্ভবত সে কারণেই তাঁর উপরে রুষ্ট হয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু, আর্থিক বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হারের মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়, তার স্পষ্ট আইনি নির্দেশিকা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে রয়েছে— শক্তিকান্ত দাস সেই পথ থেকে বিচ্যুত হননি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে বৃদ্ধির হার, মূল্যস্ফীতির হার ও সুদের হারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের গতি বজায় রাখা— এই সরু সুতোর উপর দিয়ে হাঁটার কাজটি বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককেই করতে হয়েছিল। দাস তাতে মোটের উপরে সফল। এবং, একই সময়কালে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল থেকেছে। বিদেশি মুদ্রাভান্ডার সামলানোর কাজটিও দাসের আমলে ভাল ভাবেই হয়েছে। এবং, এই সময়কালেই ভারতে তৈরি হয়েছে ইউপিআই ব্যবস্থা, যা ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে মডেল হয়ে উঠেছে।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার হিসাবে শক্তিকান্ত দাস বরাবরই সাবধানি। বেসরকারি ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে আপত্তিতে যেমন, ভারতের অভ্যন্তরীণ ঋণকে বৈদেশিক বাজারে ডেরিভেটিভ পণ্যে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলার নীতি’টিতেও তেমনই। সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে মনিটরি পলিসি কমিটির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাটিও তাঁর আমলেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তা সাবধানি হলে যেমন কিছু বিপদকে এড়িয়ে চলা যায়, তেমনই আবার কোনও অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়। শক্তিকান্ত দাসের আমলে দু’টি ঘটনাই ঘটেছে। ফলে, ব্যাঙ্কের ইতিহাসে কোনও বিপুল কৃতিত্বের অধিকারী হিসাবে তাঁর নাম লেখা হবে না। কিন্তু, সেই আপাত-তরঙ্গহীনতা বজায় রাখাটিই তাঁর বৃহত্তম কৃতিত্ব— ক্রিকেটের ভাষায়, তিনি রাহুল দ্রাবিড়সুলভ ইনিংস খেললেন। যে সময়ে তিনি মাঠে নেমেছিলেন, তাতে এই ইনিংসটি নিঃসন্দেহে স্মরণীয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement