Narendra Modi

কর্তার ইচ্ছায়

আত্মশুদ্ধির যে বার্তা সরকার প্রচার করিতে চাহিতেছে, তাহা কত দূর নির্ভরযোগ্য? কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

মন্ত্রিসভায় বড় রকমের রদবদল ঘটাইয়া নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার্তা দিতে চাহিয়াছেন। প্রথম বার্তা: ব্যর্থ মন্ত্রীদের বিদায় করা হইবে। দ্বিতীয় বার্তা: অতঃপর সরকার নব উদ্যমে কাজে নামিবে। অচিরেই তাঁহার সম্প্রচার-যন্ত্রটি হয়তো বার্তাগুলির ভাব সম্প্রসারণ শুরু করিবে, সেই যন্ত্রে প্রস্তুত হইবে ‘মন কি বাত’। তাহাতে দোষের কিছু নাই। মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন ঘটিতেই পারে, তাহাতে সরকারের দেহে নূতন রক্ত সঞ্চালিত হয়। ব্যর্থতার দায়ও সদ্য-প্রাক্তন মন্ত্রীরা অনেকেই অস্বীকার করিতে পারেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কীর্তি সর্বজনবিদিত, কিন্তু শিক্ষা বা শ্রমের মতো মন্ত্রকগুলির কৃতকর্মের হালও শোচনীয়। যাঁহাদের মন্ত্রিত্ব রদ হইল তাঁহারা অনেকেই আপন বিষাদের সমব্যথী বিশেষ খুঁজিয়া পাইবেন না।

Advertisement

দুষ্ট লোকে অবশ্য বলিতে পারে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো মুষ্টিমেয় ব্যতিক্রম ছাড়া, মন্ত্রীরা তো ‘সকলই তোমার ইচ্ছা’ গাহিতে গাহিতে দিনগত পাপক্ষয় করিয়া থাকেন, তাঁহাদের কী বা পাশ কী বা ফেল। দুষ্ট লোকে আরও বলিতে পারে, ঘরে বাহিরে ধিক্কার এবং নিন্দার সম্মুখীন হইয়া নিজের চূড়ান্ত ব্যর্থতা ঢাকিতেই প্রধানমন্ত্রী কয়েক জনকে শাস্তি দিলেন, যাহাতে তাঁহার দায় আড়াল করা যায়, জনপ্রিয়তার অধোগামী রেখাটিকে থামানো যায়। তবে দুষ্ট লোকের কথায় কান দিতে নাই।

কিন্তু, আত্মশুদ্ধির যে বার্তা সরকার প্রচার করিতে চাহিতেছে, তাহা কত দূর নির্ভরযোগ্য? কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? সরকার যে কার্যত সমস্ত ক্ষেত্রে সুশাসনে ব্যর্থ, তাহা কোনও মন্ত্রী-বিশেষের কৃতি বা অক্ষমতার কারণে নহে, দুঃশাসনই এই শাসকদের ধর্ম। সমস্ত ক্ষেত্রেই তাঁহারা সঙ্কীর্ণ এবং অ-গণতান্ত্রিক আধিপত্যবাদের অনুশীলন করিয়া আসিতেছেন, জনকল্যাণের প্রতি তাঁহাদের ঔদাসীন্য অতি প্রকট। মন্ত্রিসভায় যে পরিবর্তনই হউক, এই মৌলিক চরিত্র পরিবর্তনের কিছুমাত্র ভরসা নাই। একই কারণে মন্ত্রিসভায় মেয়েদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি কিংবা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির বেশ কিছু সদস্যের অন্তর্ভুক্তি আপাতদৃষ্টিতে শুভলক্ষণ মনে হইলেও সরকারি নীতি ও কর্মকাণ্ডে তাহার কোনও সুপ্রভাব পড়িবে, তাহার আশা ক্ষীণ। মনে করিবার বিলক্ষণ কারণ আছে, এই ‘প্রগতিশীল’ পদক্ষেপগুলি ভোটের হিসাব কষিয়াই করা হইয়াছে। ইহা রাজনীতির অঙ্ক। ক্ষুদ্র রাজনীতি।

Advertisement

রাজনীতির অঙ্ক অন্য ভাবেও প্রকট। যেমন, উত্তরপ্রদেশ হইতে পনেরো জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী! ইহা যদি আগামী বৎসরের বিধানসভা নির্বাচনের অঙ্ক না হয়, তবে আর কী যুক্তি থাকিতে পারে, দেবা ন জানন্তি। মনে রাখিতে হইবে, যোগীর কীর্তিতে সেই রাজ্যে বিজেপির তরণী টলায়মান, দল বিধানসভায় ডুবিলে অন্য রাজ্যে তাহার প্রভাব পড়িবেই, আগামী লোকসভা নির্বাচন লইয়াও দলের দুশ্চিন্তা বাড়িবে। আবার, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী নির্বাচনে রাজ্যের বিশেষ বিশেষ অঞ্চল এবং জনগোষ্ঠীকে তুষ্ট করিয়া বিশেষ বিশেষ ভোটব্যাঙ্ক ধরিয়া রাখিবার ও বিস্তার করিবার পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ নেতাদের সামলাইয়া দলত্যাগ রোধের কৌশল অতিমাত্রায় প্রকট। এবং, সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কি পশ্চিমবঙ্গের বিভাজনের ভয়ঙ্কর দাবিতে উস্কানিও শাসক দলের মহানায়কদের টনক নড়াইতে পারে না? ক্ষমতা দখলের তাড়নায় এমন সর্বনাশা রাজনীতির পথে যাঁহারা চলিতে পারেন, তাঁহাদের নিকট কোনও নৈতিকতার প্রত্যাশা করাই বাতুলতামাত্র। অতএব, ‘ন্যূনতম সরকার’-এর উদ্গাতা শ্রীমোদী কোন হিসাবে মন্ত্রিসভার আয়তন প্রায় সাংবিধানিক ঊর্ধ্বসীমায় পৌঁছাইয়া দিলেন— সেই প্রশ্ন তুলিয়াও কোনও লাভ নাই। স্পষ্টত, তাঁহার প্রশাসনিক পদক্ষেপের পিছনে একটিই লক্ষ্য কাজ করিয়া থাকে। তাহার নাম: রাজনৈতিক ক্ষমতা। মন্ত্রিসভা এবং তাহার সদস্যরা সেই লক্ষ্য পূরণের প্রকরণমাত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement