Breastfeeding

স্বাভাবিকের অধিকার

একটি জনস্বার্থ মামলায় আদালতের বক্তব্য, মা যাতে শিশুকে স্তন্যদান করতে পারেন, তার জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি দায়বদ্ধ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ০৬:০০
Share:

গণপরিসরে স্তন্যদানকে ঘিরে অস্বস্তি ও অসহিষ্ণুতার সঙ্গে মেয়েরা দীর্ঘ দিন লড়ে চলেছেন। আশার কথা, সুপ্রিম কোর্ট আবার তাঁদের হাত শক্ত করেছে। একটি জনস্বার্থ মামলায় আদালতের বক্তব্য, মা যাতে শিশুকে স্তন্যদান করতে পারেন, তার জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি দায়বদ্ধ। বস্তুত, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ লিঙ্গবান্ধব করে তুলে সেখানে মেয়েদের আলাদা বিশ্রামকক্ষ ও সন্তানলালনের সুবিধার ব্যবস্থা রাখাকে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মত দিয়েছে শীর্ষ আদালত। স্তন্যদান নবজাতকের টিকে থাকা, বেড়ে ওঠা ও রোগপ্রতিরোধের জন্য যে অপরিহার্য, কারও অজানা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ছ’মাস শিশুকে কেবলমাত্র মাতৃদুগ্ধে প্রতিপালনেরই পক্ষে। তা সত্ত্বেও, ঘর থেকে বাইরে বেরোলেই শিশুকে স্তন্যদান সমাজের কাছে নিন্দনীয়, বর্জনীয়।

Advertisement

প্রশ্ন ওঠে, খিদেয় কাতর শিশুর শারীরবৃত্তীয় চক্রে বাধা তৈরি করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশকে কি ব্যাহত করতে চায় সমাজ ও রাষ্ট্র? নারীর কর্মপরিসর সঙ্কুচিত করে চায়? গণপরিসর, কর্মক্ষেত্রের পরিকাঠামোয় স্তন্যদানের সুব্যবস্থার অভাবে মায়েরা সন্তানকে ছেড়ে কাজের জগতে ফিরতে দেরি করেন বা ফেরেনই না। জনসম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের সুযোগ হারায় রাষ্ট্র। তবে এই লাভ-ক্ষতির হিসাবেরও আগে আসে মায়ের অধিকারের প্রশ্ন। শিশুর যেখানে যখন খিদে পাবে, সেখানে তখনই তাকে স্তন্যদান প্রতিটি মায়ের অধিকার। স্কটল্যান্ড, আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া গণপরিসরে এই অধিকার রক্ষায় আইনও এনেছে। সেখানেও ভারতের মতোই শপিং মল, রেস্তরাঁয়, পার্কে, যানবাহনে স্তন্যদানের সময় অপমানের ইতিহাস রয়েছে। ভারতে অবশ্য বাসস্টপ, রেলস্টেশন, ব্যাঙ্কের লাইন, শপিং মলের বেঞ্চ এবং বেশির ভাগ দফতরের কোথাও শিশুক্রোড়ে মায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা তো দূর, বিশ্রামাগারের আবডালটুকুও চোখে পড়ে না। শহরাঞ্চলের বাইরে শৌচালয়ই আণুবীক্ষণিক। তখনই পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে আজন্মলালিত লজ্জা ভেঙে মা প্রকাশ্যে স্তন্যদানে বাধ্য হন। অথচ সব এলাকাতেই একফালি ঘেরাটোপ মেয়েদের জন্য রাখা কঠিন নয়। রাখা হয় না, কারণ দেশের মনের পরিচালক পুরুষতন্ত্র, যা মেয়েদের বাইরে বেরোনোর পথ মসৃণ রাখতে নারাজ। ঘরে ঢোকানোরই প্রচ্ছন্ন ফাঁদ বিছানো সবখানে।

শীর্ষ আদালত সম্প্রতি জানিয়েছে, প্রকাশ্যে স্তন্যদানকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা অনুচিত। নারীর অঙ্গকে পিতৃতন্ত্র কেবলই কামনার সঙ্গে যুক্ত করে, যেন স্বাভাবিক কাজগুলিই গৌণ। সেই ছকেই ঋতুস্রাব, সন্তানসম্ভাবনার স্ফীতি, স্তন্যদান সবই তার লজ্জার, লুকানোর বিষয়। স্তন্যপান করাতে দেখলেও তাই ‘অশোভন’ অভিযোগে হেনস্থা চলে। অথচ বাস্তবে বিষয়টি ঠিক বিপরীত। মা শিশুকে স্বাভাবিক জৈব প্রক্রিয়ায় লালিত করছেন— এই দৃশ্যই মাতৃত্ব, মমত্ব, অপত্য স্নেহের সর্বোচ্চ প্রতীক। কিন্তু সেই দৃষ্টি অর্জনে চাই হৃদয়বৃত্তি, সারল্য এবং সমানুভূতি। এই গুণগুলি প্রকৃত মানুষের থাকে, মনুষ্যত্ববিহীনের থাকে না। তাই সমাজ যত দিন না ‘মানুষ’ হচ্ছে, তত দিন প্রশাসনকেই গ্রাম, শহর, মফস্‌সল সর্বত্র সর্বস্তরের মেয়েদের জন্য দৃষ্টিগোচর জায়গায় সুস্থ, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ বিশ্রামকক্ষের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেখানে নিশ্চিন্তে, নিখরচায় তাঁরা সন্তানের পরিচর্যা করবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement