মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে আরও একটি গণধর্ষণ।
টিটাগড়ে নিজের বাড়ির কাছে তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনাটি অনেকগুলি কারণে উদ্বেগজনক। দুষ্কৃতীদের বেপরোয়া ভাব দেখা গিয়েছে পুরো ঘটনাটিতে। তারা পাড়ার মধ্যে প্রকাশ্যে, তরুণীর ঠাকুরদার সামনে, মেয়েটির হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করে, তার প্রতি কটূক্তি করে। মেয়েটি তাদের পিছনে ছুটে গেলে তাকে নির্যাতন করে। সংবাদে প্রকাশ, এক দুষ্কৃতী নিজেকে স্থানীয় কাউন্সিলরের ভাই বলে দাবি করে তরুণীকে ভয় দেখায়, যাতে সে ধর্ষণের অভিযোগ না করে। সেই সঙ্গে, এক অভিযুক্ত মেয়েটির মায়ের হাতে কিছু টাকা দিয়ে তাঁকে মুখ বুজে থাকার নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধও ভয় দেখিয়ে, ঘুষ দিয়ে, রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ের জোরে চাপা দেওয়া যায়, এই বিশ্বাস শিকড় ছড়িয়েছে যুবসমাজে। গত এপ্রিলে নদিয়ার হাঁসখালিতে এক নাবালিকা গণধর্ষণেও এক প্রভাবশালী পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে অভিযুক্ত ছিল। অভিযোগ, ধর্ষকদের ভীতিপ্রদর্শনের জেরে নাবালিকার চিকিৎসা পর্যন্ত করানোর সাহস পাননি নিগৃহীতার বাবা-মা, রক্তপাতে মৃত বালিকার দেহ দাহ করা হয়েছিল পুলিশি তদন্তের আগেই। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে আরও একটি গণধর্ষণ ও ভীতিপ্রদর্শনের ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটা কার্যত ‘সংস্কৃতি’ হয়ে উঠেছে রাজ্যে। রাজনৈতিক সংযোগ আক্রান্তের বিচার পাওয়ার শর্ত, এই ধারণার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাগুইআটির দুই কিশোরের হত্যার ঘটনা থেকে টিটাগড়, সর্বত্র।
খুন-ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষিত কী করে তৈরি হয়েছে, ক্ষমতাসীন নেতারা সে প্রশ্ন এড়াতে পারেন না। সেই জন্যই নেতা-আধিকারিকরা যখন বলেন, ধর্ষণ ‘রাজনীতির বিষয় নয়’ তখন তা অসার উপদেশের মতো শোনায়। পুলিশ-প্রশাসন যদি নাগরিকের সুরক্ষা না দিতে পারে, তাকে সুবিচার পাওয়ার প্রত্যয় না দিতে পারে, তবে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো যে কোনও রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। নির্যাতিত বা নিহতের পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার, সুবিচারের দাবি তুলবেন বিরোধীরা, এটাই স্বাভাবিক নয় কি? এটা সত্য যে, রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়ই এমন ঘটনাকে সংবাদমাধ্যমে শাসক-বিরোধী প্রচারের জন্য ব্যবহার করে, কিন্তু গণতন্ত্রে সেই সমালোচনা সহ্য করাই শাসকের কর্তব্য।
আক্ষেপ, সমালোচনা এড়ানোর তাগিদে প্রায়ই শাসক-ঘনিষ্ঠ কিছু লোকের চাপে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারকে সরিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। ফলে মানবাধিকার কর্মী, সংবাদমাধ্যম অথবা বিরোধীদের কাছে নিজের সমস্যা তুলে ধরার সুযোগ থাকে না তাঁদের। কামদুনিতে গণধর্ষণে নিহত পরিবারটি গ্রাম ছেড়ে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় চলে গিয়েছিল। টিটাগড়ের তরুণী এবং তার অভিভাবকরাও ঘটনার অভিযোগ দায়ের করার পর অনেকখানি সময় কোথায় ছিলেন, তা পরিবারের অন্যরা জানতেন না। বিষয়টি স্বস্তিকর নয়। এর ফলে সুবিচারের দাবি, অপরাধীর শাস্তির দাবি সে ভাবে সামনে আসছে না। দলীয় ক্ষমতার প্রশ্রয়ে অপরাধ, এবং পুলিশ-প্রশাসনের পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্যাতিতাকে প্রভাবিত করার প্রবণতা দুষ্কৃতীদের আরও সাহস জোগাচ্ছে। আর আক্রান্তদের পরিবারকে সুবিচারের জন্য দরবার করতে হচ্ছে নেতা-মন্ত্রীদের কাছে। বিষয়টি গুরুতর।