Education system

মা কর্মণি কদাচন

বাম আমল থেকেই এ রাজ্যে অবরোধের সংস্কৃতি চলে আসছে, বর্তমান শাসক দলের প্রশ্রয়ে যা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২২ ০৫:০৪
Share:

পথ অবরোধ করল উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য স্কুলপড়ুয়াদের একাংশ। দাবি, তাদের পাশ করাতে হবে। অভিযোগ নানাবিধ— ভাল পরীক্ষা দেওয়ার পরেও সঠিক মূল্যায়নের অভাবে পাশ নম্বর মেলেনি, শিক্ষাবর্ষের মাঝেই পাঠ্যক্রমের নানা পরিবর্তন হয়েছে, অফলাইন-অনলাইন পরীক্ষা পরিচালনা নিয়ে অহরহ দ্বন্দ্ব, আগের বছর পরীক্ষা না দিয়েও যখন ছেলেমেয়েরা পাশ করেছে, তখন এ বছরও কেন তা করা হবে না ইত্যাদি। মোট কথা, তাদের দাবি হল যে, তারা পরীক্ষা যেমনই দিক না কেন, তার প্রতিফলন যেন ফলাফলে না ঘটে। কর্মের সঙ্গে ফলের এই বিচ্ছেদপ্রত্যাশাকে কেউ ভগবদ্‌গীতার প্রতিস্পর্ধী হিসেবেও দেখতে পারেন— কর্মের প্রয়োজন নেই, শুধু ফলের দাবি করে যাওয়াই যথেষ্ট। সন্দেহ নেই যে, ফেল করা ছাত্রছাত্রীরা এই ‘দার্শনিকতা’টি সমাজের চলন থেকেই আয়ত্ত করেছে। কার্যত কোনও ক্ষেত্রেই যখন আর দক্ষতা, জ্ঞান বা যোগ্যতার বিচারের বালাই নেই, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই বা এগুলির প্রয়োজন কেন, তারা বুঝতে পারেনি।

Advertisement

অনস্বীকার্য যে, অতিমারি কালে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় গোটা শিক্ষাব্যবস্থার উপরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষাদান থেকে পরীক্ষা— বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যে পথে চলছে, তা যে আদর্শ নয়, সে কথাও সংশয়াতীত। কী করে এই ব্যবস্থার ভুলত্রুটি কাটিয়ে উঠে পুনরায় যথাযথ পথে চালিত করা যায়, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। কিন্তু এই সব যুক্তি ‘পাশ করিয়ে দেওয়া’র অন্যায্য দাবিকে কোনও মতেই বৈধতা দিতে পারে না। কোনও শিক্ষার্থী কী শিখল, প্রচলিত পদ্ধতির পরীক্ষাই তার মূল্যায়নের শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি কি না, সেই তর্কও থাকতে পারে— কিন্তু, কোনও মূল্যায়ন না হওয়ার তুলনায় প্রচলিত পরীক্ষা যে অধিকতর গ্রহণযোগ্য, তাতে সংশয়ের অবকাশ নেই। ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার তুলনায় উন্নততর মূল্যায়নের দাবিতে এই আন্দোলন করছেও না— তাদের দাবি শুধুই ফাঁকিবাজির অধিকারের। তেমন দাবি মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

বাম আমল থেকেই এ রাজ্যে অবরোধের সংস্কৃতি চলে আসছে, বর্তমান শাসক দলের প্রশ্রয়ে যা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। সর্ব ক্ষেত্রেই এখন ধরে নেওয়া হয় যে, ধর্না, বিক্ষোভ, ভাঙচুর করলেই কাঙ্ক্ষিত দাবিটি পূরণ হবে। এবং অন্যায়কারীর উপযুক্ত শাস্তিও হবে না। শিক্ষাও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই কারণেই ছাত্ররা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না, স্কুলের সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়, টুকতে বাধা দিলে পরিদর্শককে দেওয়া হয় হুমকি। এটাই এখন ‘স্বাভাবিক’। যেমন, গত বছরও উচ্চমাধ্যমিকে অসফল হওয়া ছাত্রছাত্রীরা ধর্নায় বসলে, অধিকাংশকেই পাশ করিয়ে দিতে বাধ্য হয় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু সেটা ছিল অতিমারির বিশেষ পরিস্থিতি। এ বছর সেই দায় সরকারের থাকার কথা নয়। অথচ এই বছরও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে সব বিষয়ে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ করে দিল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। যেখানে আগে মাত্র দুটো বিষয়ে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ পাওয়া যেত। এই ‘পাইয়ে দেওয়া’র রাজনীতিতে যে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা তারা এবং রাজ্য সরকার যত দ্রুত বুঝবে, ততই মঙ্গল।

Advertisement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement