Supreme Court of India

বঞ্চিত

২০২০ সালের মার্চ হইতে যে অভূতপূর্ব অতিমারির কবলে বিশ্ব, তাহাতে দুনিয়াময় অনলাইন-নির্ভরতা একটি বিপ্লব ঘটাইয়া দিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আরও এক বার স্পষ্ট ভাষায় জানাইল— অতিমারিকালীন অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা সমাজকে উপরে-নীচে দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া দিয়াছে: সুবিধাসম্পন্ন এবং সুবিধাবঞ্চিত। কথাটি অজানা নহে, স্বস্তিকর তো নহেই। দিল্লির সরকারি সেন্টারগুলিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, অনলাইন পঠনপাঠন হইতে পড়ুয়াদের বঞ্চিত করা চলিবে না। এমন পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত লাগিবে, যাহাতে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ছেলেমেয়েরাও অংশ লইতে পারে। বিচারপতিরা জানাইয়াছেন, সকলের হাতে মোবাইল বা ট্যাব তুলিয়া দেওয়া প্রয়োজন। কত দূর তাহা সম্ভব হইবে, সন্দেহ থাকিয়া গেল। ইহা তো কেবল কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রতি উদ্দিষ্ট মন্তব্য নহে, দেশব্যাপী সমস্ত সরকারি স্কুলে যদি এই পরিকাঠামো না থাকে, তাহা হইলে কোনও নির্দেশিকা বা ভর্ৎসনারই কোনও অর্থ থাকিবে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে এই সঙ্কট আরও বেশি, সমাধান বিষয়ে সংশয়ও বেশি। দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়েদের ওই স্তর পর্যন্তই অধিক সংখ্যায় দেখা যায়, এবং প্রায়শই আর্থিক বা পরিকাঠামোগত অসুবিধা ঘটিলে তাহারা ঝরিয়া পড়ে, ভবিষ্যতে আর কখনওই বিদ্যালয়মুখী হয় না। শিক্ষার জগৎ এই পড়ুয়াদের চিরতরে হারাইয়া ফেলে। এই সত্য জানা থাকিবার পরও প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্র যে ভাবে অতিমারির মধ্যে সম্পূর্ণ অকেজো অচল হইয়া পড়িয়াছে, এবং সরকার সেই অচলতা কাটাইবার কোনও বিকল্প পথ বাহির করে নাই, সমগ্র দেশের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেই তাহা চরম বিপজ্জনক। ইহা কেবল সক্ষমতার প্রশ্ন নহে, ইহা ভারতীয় সমাজের স্থিতি ও সচলতারও প্রশ্ন। সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অবস্থান নিম্নের দিকে ধাবিত হইলে সমাজের গতিও নিম্নমুখী টানে স্থিতিশীলতা হারাইবে, স্বাভাবিক ভাবেই।

Advertisement

এই পরিস্থিতি কেবল ভারতের নহে। ২০২০ সালের মার্চ হইতে যে অভূতপূর্ব অতিমারির কবলে বিশ্ব, তাহাতে দুনিয়াময় অনলাইন-নির্ভরতা একটি বিপ্লব ঘটাইয়া দিয়াছে। গত বৎসরের দ্বিতীয় ভাগে নেচার পত্রিকা মন্তব্য করিয়াছিল, যে প্রযুক্তি-বিপ্লব শিক্ষাক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরিয়া ধীরে প্রত্যাশিত ছিল, তাহা যেন হঠাৎ একটি বাঁধভাঙা প্লাবনের মতো ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছে বিশ্বকে। কেহই জানিতেন না এমন ঘটিবে। তাই কোনও দেশই প্রস্তুত ছিল না ইহার জন্য। কিন্তু যখন এত বড় একটি পরিবর্তন ঘটিলই, তখন কোন দেশ কী ভাবে তাহার সহিত যুঝিল, ইহাতেই সেই দেশের শক্তি ও স্বাস্থ্যের পরিচয়।

দরিদ্র দেশগুলি যুঝিতে পারিবে কম, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। তবে কিনা, দারিদ্র দিয়া সবটুকু অক্ষমতা বা অপারগতা ব্যাখ্যা করা যায় না। ভারতে যাহা কোনও মতেই গত দেড় বৎসরে করা যায় নাই, সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিরা যে নির্দেশ দেড় বৎসর পরে দিতেছেন, সেই ধরনের বিভিন্ন প্রচেষ্টা কিন্তু অন্য কিছু তথাকথিত দরিদ্র দেশে দেখা গিয়াছে— বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট হইতে পরিষ্কার। যেমন দূরদর্শনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা— ভারত করে নাই, বাংলাদেশ করিয়াছে। বারমুডার মতো দেশে স্কুল হইতে মাসে ‘লার্নিং মেটেরিয়াল’ প্যাকেট করিয়া ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছানো হইয়াছে— ভারতে এমনটা ভাবাও যায় নাই। ভুটান প্রায় সমস্ত স্কুল-ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে মোবাইল ডেটা সরবরাহের ব্যবস্থা করিয়াছে। পিএম কেয়ার্স-এর দেশ তাহা করিতে পারে নাই, করিবার চেষ্টাটিই দেখায় নাই। আসল কথাটি সম্ভবত দারিদ্র কিংবা সচ্ছলতা নহে, অন্য কিছু। নাগরিকের প্রতি রাজনীতির দায়বোধ, সরকারি দায়িত্বের স্বীকৃতি, নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা: ভারতে ইহার কোনওটিই যে নাই— তাহা কি কেবল দারিদ্র দিয়া ব্যাখ্যা করা চলে? বিশেষজ্ঞরা বলিতে পারিবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement