India-Sri Lanka Relation

প্রতিবেশীর পাশে

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন আরও সহজতর করার উদ্দেশ্যে ইউপিআই ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৪
Share:

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণের বছরখানেকের মধ্যেই ভারতে সম্প্রতি ঝটিকা সফর করে গেলেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। এই এক বছরে সে দেশে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই— বিভিন্ন শহরে খাবার ও জ্বালানির জন্য সাধারণ মানুষের লম্বা সারি আর চোখেই পড়ে না, প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের আন্দোলন এখন স্তিমিত, রাজনৈতিক স্থিতিও ফিরেছে অনেকখানি। তবে এখনও কাটেনি আর্থিক সঙ্কট। এর মাঝে এই সফর দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার কাছেই সুযোগ এনে দিয়েছে নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার। যদিও দেখা গেল, যৌথ বিবৃতিতে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্য এবং আর্থিক সম্পর্কের বিষয়গুলি। দুই দেশের সামুদ্রিক ও আকাশ সংযোগ আরও উন্নত করতে পড়শি দ্বীপরাষ্ট্রে আরও বন্দর এবং বিমানবন্দর নির্মাণে নতুন বিনিয়োগের আভাস পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি তামিলনাড়ুর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার উত্তর এবং পূর্ব অংশগুলির যোগাযোগ বাড়াতে এই অঞ্চলে পুনরায় ফেরি পরিষেবা চালু করতে আগ্রহী দুই দেশই। জোর দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সংযোগের বিষয়ে, যার সূত্রে সে দেশে বায়ু এবং সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্লান্ট গড়ে তুলতে শ্রীলঙ্কাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ভারত। অন্য দিকে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেন আরও সহজতর করার উদ্দেশ্যে ইউপিআই ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, বাণিজ্যিক লেনদেনে অভিন্ন মুদ্রা হিসাবে ভারতীয় টাকা ব্যবহারেও সায় দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

Advertisement

ভূ-রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক কালে পড়শি দ্বীপরাষ্ট্রটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে ভারত। ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতি এবং ‘সিকিয়োরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ (সাগর) লক্ষ্য নিয়ে বিবৃতির সময়ে শ্রীলঙ্কাকে এই দুই ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলে আখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এ-ও বলেন যে, দুই দেশের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থ একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তার সূত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। বলা বাহুল্য, সেই কারণেই গত বছর তাদের ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে ৪০০ কোটি আমেরিকান ডলার অর্থসাহায্য দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। অথচ, যে চিনকে সাম্প্রতিক কালে ভারতের তুলনায় বেশি প্রাধান্য দিয়ে এসেছিল তারা, সেই চিন কিন্তু শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং বেজিং-এর অবস্থানে বহু মাসের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার থেকে অর্থসাহায্য আটকে গিয়েছিল তাদের। তাই, এ-হেন সাহায্যের পরও গত অগস্টে যখন চিন নিয়ন্ত্রিত হাম্বানটোটা বন্দরে চিনেরই একটি নজরদারি জাহাজকে ঢুকতে অনুমতি দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, তখন দ্বীপরাষ্ট্রটির ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি দিল্লি। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার যে মোট বকেয়া ঋণ রয়েছে, তার প্রায় কুড়ি শতাংশই চিনের কাছে। ফলে, এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা এই শ্রীলঙ্কার পক্ষে সম্ভব হবে না। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যপূরণে চিন আগামী দিনে শ্রীলঙ্কার উপরে রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে পিছপা হবে না। তাই, শ্রীলঙ্কাকে চিনের ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন থেকে দূরে রাখাই ভারতের প্রধান লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement