School Closed

বিকল্প নাই?

রাজ্য প্রশাসনে হয়তো উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির অভাব নাই, কিন্তু প্রশাসন শিক্ষাগ্রহণ করিতে অসমর্থ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:০৬
Share:

স্কুল বন্ধ, চলছে ভোট। —ফাইল চিত্র।

পুরনির্বাচনের কাজে স্কুল ভবন ব্যবহৃত হইতেছে, তাই পরীক্ষা পিছাইয়াছে, মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ হইতেছে পাড়ার ক্লাব হইতে। দক্ষিণ কলিকাতার একটি স্কুলের এই পরিস্থিতি রাজ্যবাসীকে ফের বুঝাইয়া দিল, রাজ্য সরকারের প্রাধান্যের বিচারে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার স্থান কোথায়। পঠন-পাঠন, পরীক্ষাগ্রহণ হইলে ভাল, না হইলেও ক্ষতি নাই, ইহাই প্রশাসনের উপযুক্ত মনোভাব বটে। করোনা অতিমারিতে প্রায় দুই বৎসর সরকারি নির্দেশে স্কুলগুলি বন্ধ থাকিবার পরে খুলিয়াছে, তাহাও মাত্র কয়েক সপ্তাহ, মাত্র কয়েকটি শ্রেণির জন্য। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা এত দিন স্কুলে ‘প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস’ করিবার সুযোগ পায় নাই, পরীক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অনলাইনে ক্লাস করিবার ব্যবস্থা করিতে না পারিবার জন্য পাঠ্যক্রম আয়ত্ত করিতেও পারে নাই। ইহার মধ্যেই ফের পুরসভার নির্বাচনের জন্য কলিকাতার বেশ কিছু স্কুলকে কার্যত অধিগ্রহণ করা কি এতই জরুরি হইয়া পড়িয়াছিল? স্কুল শিক্ষকরাই প্রশ্ন তুলিয়াছেন, এই বৎসর বিশেষ পরিস্থিতিতে কি বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না? নিশ্চয়ই ছিল। ইহার অপেক্ষা অনেক কঠিন ও জটিল কাজ এই সরকার করিয়াছে। সরকারি ভবন হইতে, অথবা কোনও বেসরকারি পরিকাঠামোকে সাময়িক ভাবে গ্রহণ করিয়া নির্বাচন পরিচালনা একেবারেই অসম্ভব ছিল, এমন কল্পনা করা কঠিন। বিকল্পের কথা ভাবা হয় নাই, কারণ সরকার তাহার প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে করে নাই। ভোট আসিয়াছে, ভোট। এখন কি শিক্ষা লইয়া মাথা ঘামাইবার সময়?

Advertisement

স্কুল ফের বন্ধ হইতে দেখিয়া রাজ্যবাসীও শিক্ষা পাইয়াছেন। তাঁহারা বুঝিয়াছেন, একটি নির্বাচন জয়ের উদ্দেশ্য পরবর্তী নির্বাচন জিতিবার প্রস্তুতি। নাগরিকের প্রয়োজন পূরণ, মানব উন্নয়ন, এই সকলই বিপুল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর সামান্য শাকের আঁটি। শিশুশিক্ষা জাতির জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হইতে পারে, ভোট টানিবার কাজে তাহার উপযোগিতা কতটুকু? তাই অতিমারি কালে বহু শিশু পড়া ভুলিয়াছে, অনলাইন ক্লাস করিবার সুযোগ পায় নাই, ছাত্র পরিণত হইয়াছে দিনমজুরে, সেই সংবাদ সরকারকে বিচলিত করে নাই। স্কুল বন্ধ রাখিয়া বিধানসভা নির্বাচন হইল, অতঃপর পুরনির্বাচনের জন্য ফের বন্ধ হইল স্কুল— যেন পঠনপাঠন শিক্ষা দফতরের ইচ্ছাধীন, দেশে শিক্ষার অধিকার বলিয়া কোনও আইন নাই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশের ‘টেস্ট’ পরীক্ষা পিছাইয়া গেলে তাহাদের ক্ষতি হইতে পারে কি না, এমনকি সর্বভারতীয় বোর্ডের স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীরা ফের পরীক্ষা দিতে পারিবে কি না, তাহা লইয়া সরকার চিন্তিত নহে। অফলাইন ক্লাস শুরু না হইতেই ফের অনলাইনে ফিরিলে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটিবে কি না, সে প্রশ্নও প্রশাসকদের দ্বিধান্বিত করিতে পারে নাই।

রাজ্য প্রশাসনে হয়তো উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তির অভাব নাই, কিন্তু প্রশাসন শিক্ষাগ্রহণ করিতে অসমর্থ। না হইলে তাহাদের এত দিনে বুঝিবার কথা যে স্কুলগুলি সরকারি দফতর নহে, স্কুলশিক্ষক সরকারি কর্মচারী নহেন, এবং পঠনপাঠনের নিয়মিত কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ অনৈতিক। নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের স্পর্শ হইতে শিক্ষাকে মুক্ত রাখিতে হইবে। স্কুল বন্ধ হইলে নির্বাচনের প্রকৃত উদ্দেশ্য— সুপ্রশাসন— নিরর্থক হইয়া যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement