kashmir

সংবাদের সুরক্ষা

ক্ষমতাসীন আপন সুরক্ষার তাগিদে সা‌ংবাদিককে অনুগত, সংবাদকে অসার করিয়া তুলিলে নাগরিকের নিরাপত্তা ব্যাহত হইতে বাধ্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৬
Share:

কাশ্মীরের সাংবাদিকদের দমন-পীড়নের খোঁজ লইতে একটি কমিটি গঠন করিয়াছে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। তিনটি সুপরিচিত সংবাদ সংস্থার তিন প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ সাংবাদিকের এই কমিটি কাশ্মীরের সাংবাদিকদের সহিত কথা বলিয়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁহাদের বিবিধ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করিবে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাইবার পরেও আক্ষেপ থাকিয়া যায়। এত জরুরি কাজে এত বিলম্ব কেন? কাশ্মীরে সাংবাদিকদের উপর পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর নানা প্রকার ভীতি প্রদর্শন ও চাপ সৃষ্টির ইতিহাস অতি দীর্ঘ, কিন্তু ৫ অগস্ট, ২০১৯ কেন্দ্র ৩৭০ ধারা খারিজ করিবার পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা বিশ্বের গণতন্ত্রে অভূতপূর্ব। এক নাগাড়ে ছয় মাস ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল। অতঃপর শ্লথগতি (টু-জি) ইন্টারনেট ফিরিলেও, দ্রুতগতি পরিবেষা ফিরিয়াছে দেড় বৎসর পরে। ইহাতে খবর সংগ্রহ এবং পরিবেশন কী উপায়ে হইয়াছে, সহজেই অনুমেয়। প্রবল নজরদারি চলিয়াছে সাংবাদিকদের উপরে। বহু সাংবাদিক বৈদ্যুতিন মেলে সংবাদ পাঠাইবার সাহস করেন নাই। কেহ ‘পেন ড্রাইভ’ যন্ত্রের সাহায্যে পাঠাইয়াছেন, কেহ স্বয়ং দিল্লি আসিয়া খবর লিখিয়াছেন। এত সাবধানতা সত্ত্বেও সাংবাদিকের ঝুঁকি কমে নাই। তাঁহাদের বিরুদ্ধে কখনও রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা, কখনও জাতীয় সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের মতো কঠোর ধারা প্রয়োগ হইয়াছে। প্রতিবাদ মিছিলের সংবাদ করিতে গিয়া সাংবাদিকও ‘প্রতিবাদী’ বলিয়া প্রহৃত হইয়াছেন, পরিচয়পত্র দেখাইয়াও রেহাই পান নাই। পুলিশ নানা অছিলায় বাড়ি তল্লাশি করিয়াছে, জিজ্ঞাসাবাদ করিতে ডাকিয়া প্রহার ও আটক করিয়াছে সাংবাদিকদের। এই সকল ঘটনার কিছুই গোপন নহে। তৎসত্ত্বেও প্রেস কাউন্সিল অনুসন্ধানের উদ্যোগ করে নাই, যত দিন না পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি চিঠি লিখিয়া সাংবাদিক নির্যাতনের তদন্ত দাবি করিলেন।

Advertisement

এই অনুসন্ধানের রিপোর্ট কতখানি নিরপেক্ষ হইবে, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যের পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি কত কঠোর হইতে পারিবে তাহার সমালোচনা, সেই বিষয়ে কাশ্মীরের সাংবাদিকদের একাংশ সন্দিহান। তাঁহাদের সংশয় অমূলক নহে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল-পরবর্তী অবস্থার ভয়াবহতা ভারতের সংবাদমাধ্যমে যথাযথ প্রতিফলিত হয় নাই, এই অভিযোগ বার বার উঠিয়াছে। কেন্দ্রের বয়ানকে সমর্থন করিয়া কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিবার দাবি করিয়াছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। অপর দিকে, পুলিশের সহিত স্থানীয়দের সংঘাত, বা সামরিক বাহিনীর দ্বারা নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর করিলে হয়রানির মুখে পড়িয়াছেন সাংবাদিকরা। তথ্য সংগ্রহে ক্রমাগত বাধা সৃষ্টি করিয়াছে প্রশাসন। কখনও ঘর হইতে বাহির না হইবার নির্দেশ হইতে সাংবাদিককেও রেহাই দেয় নাই, কখনও কার্ফুর অধীন এলাকায় প্রবেশপত্র দেয় নাই। এই বৎসর সাংবাদিকের সরকারি পরিচয়পত্র দিবার প্রক্রিয়াও স্থগিত করিয়াছে।

এই ভাবে সাংবাদিকতার কাজটিই ক্রমশ ‘অবৈধ’ তথা ‘অপরাধ’ প্রতিপন্ন করিবার প্রক্রিয়া সচল হইয়াছে কাশ্মীরে। ইহা কেবল কাশ্মীরের ঝুঁকি নহে, শুধু সাংবাদিকের সমস্যাও নহে। অমর্ত্য সেন বলিয়াছেন, গণতান্ত্রিক দেশে দুর্ভিক্ষ হইতে পারে না, কারণ খাদ্য সঙ্কটের সংবাদ প্রকাশিত হইলে সরকার তাহার প্রতিকারে বাধ্য হয়। খাদ্যের অধিকারের ন্যায়, মানবাধিকার তথা নাগরিক অধিকারও সুরক্ষিত রাখিতে প্রয়োজন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। ক্ষমতাসীন আপন সুরক্ষার তাগিদে সা‌ংবাদিককে অনুগত, সংবাদকে অসার করিয়া তুলিলে নাগরিকের নিরাপত্তা ব্যাহত হইতে বাধ্য। কাশ্মীরে যদি সংবাদমাধ্যমকে চুপ করাইতে সফল হয় সরকার, ভারত কি সুরক্ষিত থাকিতে পারে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement