ফাইল চিত্র।
ঝাড়গ্রামে ৭৯টি কোচিং সেন্টার খুলছে সেখানকার পুলিশ প্রশাসন। ‘দিশা’ নামে এই প্রকল্পের অন্তর্গত গ্রামের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির স্কুলপড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ মিলবে। কথা সেটা নয়, কথা হল— এর জন্য ৪৫৭ জন পুলিশকর্মী বহাল হয়েছেন। নিযুক্ত কর্মীদের অন্য কোনও কাজ দেওয়া হবে না। হঠাৎ কেন এই কাজে পুলিশের নিয়োগ? সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে সন্দেহজনক মাওবাদী কার্যকলাপের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। বেশ কিছু মাওবাদী পোস্টার এবং একটি ল্যান্ডমাইন লালগড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু ঠিক কারা এই কার্যকলাপের পিছনে রয়েছে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা মেলেনি। বিশেষত স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে পুলিশ এই বিষয়ে কোনও সূত্র পায়নি। তাই স্থানীয়দের সঙ্গে জনসংযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থানীয় সমস্যা এবং দাবিদাওয়া সম্পর্কে আভাস পেতেই এই কোচিং সেন্টারের উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনাটি কৌতূহলপ্রদ, কার্যকারণটি তো বটেই। স্থানীয়দের সাহায্য না পাওয়া থেকে স্পষ্ট যে, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকাতেই জনগণের সঙ্গে এই বিচ্ছিন্নতা— অর্থাৎ পরিস্থিতির দায় পুলিশ-প্রশাসনেরই। পুলিশের প্রধান কাজ হল আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম দমন করা। কিন্তু রাজ্যবাসী জানেন, সেটিই সবচেয়ে অপ্রধান কাজ হয়ে পড়েছে, এমনকি কোনও কাজই হয়ে উঠছে না অনেক সময়। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে ব্যস্ত, অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশ করতে ব্যস্ত, দুর্নীতিতে ডুবতে ব্যস্ত। এর মধ্যে জনসাধারণের হেনস্থা হওয়ার খবর এলে অনেক সময়ই তারা সময়াভাবে মন দিতে পারে না। সুতরাং, আইনরক্ষক হিসাবে গ্রহণযোগ্যতাও দ্রুত তলানিতে চলে যায়। মানুষ যে পুলিশের উপরে ভরসা করতে পারে না— তা শোনা এবং জানা কথা। তাই জনসংযোগ গড়ে তোলা নিয়ে পুলিশের মধ্যে যে অধুনা উদ্বেগ কাজ করছে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই!।
বিস্ময় অন্যত্র। জনসংযোগ করতে হবে বলে পুলিশের কাজ এ বার থেকে পড়ানো? আর কোনও পন্থা নেই? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০২০-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় অনুমোদিত পুলিশের অনুপাত যেখানে ১৫৭.৩৮ হওয়া উচিত, সেখানে রয়েছে ১০০.৫৩। অর্থাৎ, প্রয়োজনের তুলনায় আইনরক্ষকের সংখ্যা কম। যঁারা আছেন, তাঁরাও কাজে মন দেন কম। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার মাধ্যমেই জনসংযোগ করলে হয় না? পুলিশের ভাবমূর্তির উন্নতি করতে হলে পুলিশকে পুলিশের কাজটি করেই তা আদায় করা বাঞ্ছনীয় নয় কি? সমাজে তো প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা সামলায়, শিক্ষক শিক্ষাদান করেন— এতেই সমাজের মঙ্গল। এতেই সুযোগ তৈরি হয় শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের, আবার এতেই পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরার সম্ভাবনা। নিজের কাজের বাইরে গিয়ে কখনও শিক্ষক, কখনও ফুটবলার কিংবা কখনও প্রবীণদের বাজার-সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পুলিশ যদি ভাল পুলিশ হতে চায়, তার মতো বিপজ্জনক আর কী হতে পারে?