Petrol Diesel Price Hike

জনতার আদালতে

এবং, যে ভাবে তিনি জনসমক্ষে অর্ধসত্য বক্তব্য পেশ করেছেন, সেটিও অতি পরিচিত ধরন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২২ ০৫:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজনীতি সত্য, জগৎ মিথ্যা। অতএব, প্রধানমন্ত্রী কোিভড সংক্রান্ত আলোচনার পরিসরটিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করতে ছাড়েননি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর ‘বৈঠক’ ছিল— অবশ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের শুধু দেখানোরই ব্যবস্থা ছিল, তাঁদের কথা শোনানোর সংযোগ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী যেমন ‘সংলাপ’ পছন্দ করেন, ঠিক তেমন ব্যবস্থা— যেখানে তিনি একাই ‘মন কি বাত’ শোনাবেন, বাকিরা নিতান্ত শ্রোতার ভূমিকায়। এই বৈঠকে তাঁর ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল টেলিভিশনে। এমন একটি বন্দোবস্তের মধ্যে প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ‘অনুরোধ’ করলেন, তাঁরা যেন পেট্রল-ডিজ়েলের উপর যুক্তমূল্য কর (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট) কমিয়ে মানুষকে রেহাই দেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, উত্তরপ্রদেশে এক লিটার পেট্রলের দাম যেখানে ১০৫ টাকা, কলকাতায় তার দাম ১১৫ টাকা। অর্থাৎ, ‘জনতার আদালতে’ সুকৌশলী আইনজীবীর মতো প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি মানুষের কথা ভাবে, আর বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি এই দুঃসহ সময়েও প্রবল কর আদায় করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব পরিসরই রাজনীতির, সব সুযোগই বিভাজনের। তাঁর আচরণ সর্বদা প্রধানমন্ত্রী-সুলভ, এমন দাবি করা মুশকিল। ফলে, দেশবাসীর এজলাসে বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনুরোধের ছলে আক্রমণ করতে তিনি দ্বিধা করেননি। এই এজলাসে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই, এ কথা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। রাজনৈতিক সৌজন্য যেখানে থমকে দাঁড়াতে বলে, প্রধানমন্ত্রী সেখানেই আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি স্বধর্মে স্থিত, সন্দেহ নেই। এই অসৌজন্যের, অনৌচিত্যের ক্ষতচিহ্ন যে গণতন্ত্রের সম্মানবৃদ্ধি করছে না, তাতে সম্ভবত তিনি বিচলিত নন।

Advertisement

তিনি যে অভিযোগটি করেছেন, তা-ও অনৈতিক। কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রল ও ডিজ়েলের উপর বিশেষ আমদানি শুল্ক এবং সেস বাবদ বিপুল রাজস্ব আদায় করে থাকে। নভেম্বর মাসে পেট্রল ও ডিজ়েলে লিটারপ্রতি পাঁচ ও দশ টাকা ছাড় দেওয়ার পরও এই দুই পণ্যে কেন্দ্রের নিজস্ব রাজস্বের পরিমাণ লিটারে ২৭ টাকা ও ২১ টাকার বেশি। আমদানি শুল্ক বাবদ আয় করা রাজস্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়, কিন্তু বিশেষ শুল্ক বা সেস-এর ক্ষেত্রে সেই দায় নেই। অর্থাৎ, অনুরোধের ছলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবিটি করছেন, তার মূল কথা হল, কেন্দ্র রাজস্ব আদায় করে যাবে নিজের মতো, কিন্তু রাজ্যগুলিকে ছাড় দিতে হবে। দাবিটির মধ্যে অনৌচিত্য প্রকট। বিশেষত যখন কেন্দ্রের কাছে রাজ্যগুলির বকেয়া পাওনার পরিমাণ বিপুল, এবং অভিযোগ যে, বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে পাওনা মেটাতে অনাবশ্যক দেরি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের ভঙ্গি এবং বক্তব্য, দু’টির একটিও অভূতপূর্ব নয়। এবং, যে ভাবে তিনি জনসমক্ষে অর্ধসত্য বক্তব্য পেশ করেছেন, সেটিও অতি পরিচিত ধরন। অবশ্য দুর্জনে বলতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রী সব সময় অর্ধসত্য বলেন না, কখনও কখনও নির্জলা মিথ্যাও বলে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন যেখানে দেশের আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তার, এবং তুমুল মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে নাগরিককে খানিক নিষ্কৃতি দেওয়ার, সেখানেও তিনি নিজের দায় স্বীকার না করে অন্যের ঘাড়ে দোষ ঠেলে দিচ্ছেন— তা দেখলে সংশয় হয় যে, রাজনীতি ব্যতীত আর সবই তাঁর কাছে গুরুত্বহীন। নচেৎ, তিনি স্বীকার করতে পারতেন, জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ না মেলা সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় বকেয়া না পাওয়া সত্ত্বেও রাজ্যগুলি যে ভাবে কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু, সেই সত্য উচ্চারণে যে রাজনীতির সাধনা হয় না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement