Balochistan Liberation Army

জটিল জালে বদ্ধ

দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে অঞ্চলের খনিজ সম্পদের সিংহভাগের উপরে দখল তো বটেই, আলাদা রাষ্ট্রেরও দাবি তুলে আসছে বিএলএ-র মতো বিচ্ছিন্নবাদীরা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৭:১৬
Share:

সন্ত্রাস আবার, আবারও পাকিস্তানের মাটিতে। সপ্তাহখানেক আগেই আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ ভ্রমণে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। এর ঠিক পরেই কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী যাত্রিবোঝাই জাফর এক্সপ্রেসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে পণবন্দি করল ওই অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী সন্ত্রাসবাদী দল বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। জঙ্গিদের অন্যতম দাবি ছিল, বালুচিস্তানের রাজনৈতিক বন্দি এবং জঙ্গি সদস্যদের মুক্তি। প্রত্যুত্তরে এক ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনা তিন শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২৬ জন যাত্রী ও নিরাপত্তা রক্ষী-সহ ৩৩ জন জঙ্গির। এর আগেও একাধিক বার এই ট্রেনটিকে নিশানা করেছে বিএলএ। গত নভেম্বরে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা-হামলা চালায় তারা, যার জেরে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়। তবে, এই সন্ত্রাসহানার চরিত্র এবং মাত্রা, দুই-ই দেশের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা বিভাগের দুর্বলতাকেই প্রকট করেছে, যা বালুচিস্তান তো বটেই, দেশের অন্যত্রও জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সত্যি।

Advertisement

লক্ষণীয়, পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ হওয়ার পাশাপাশি বালুচিস্তান দেশের অন্যতম খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চলও বটে। দেশের সবচেয়ে কম জনবহুল এই প্রদেশটি মূলত জাতিগত বালুচ সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল, যাঁরা বহুকাল ধরেই পাকিস্তান প্রশাসনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক শোষণ এবং রাষ্ট্রীয় দমনের অভিযোগ তুলে আসছেন। তাঁদের দাবি, পাকিস্তান সরকার এই অঞ্চলে বিপুল খনিজ সম্পদ লুট করলেও, তার সিকিভাগও সুযোগসুবিধা দেয়নি স্থানীয়দের, যার জেরে অঞ্চলটি আজও অনুন্নত ও দরিদ্র কবলিতই থেকে গিয়েছে। স্থানীয় অসন্তোষ দমন করতে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ নাগরিককে বলপূর্বক গুম, নির্যাতন, এমনকি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় আজ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে অঞ্চলের খনিজ সম্পদের সিংহভাগের উপরে দখল তো বটেই, আলাদা রাষ্ট্রেরও দাবি তুলে আসছে বিএলএ-র মতো বিচ্ছিন্নবাদীরা। পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) নির্মাণ ঘিরে সেই সংঘাত বেড়েছে। সিপিইসি এবং প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চিনা আধিকারিকদের হামলার নিশানা বানিয়েছে বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি, যাঁদের অভিযোগ, প্রকল্পের অজুহাতে এই অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তুলতে চাইছে চিন।

১৯৬৫ সালের সেই কালান্তক ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের ষাট বছরে দাঁড়িয়ে বোঝা যায়, এতগুলি দশক পরেও কত তীব্র দুই দেশের দ্বৈরথ, সন্ত্রাস-প্রশ্ন। সাম্প্রতিক ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে পাকিস্তান। দিল্লি সে অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করেছে। এক দিকে গত দশকাধিক কাল ধরে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস প্রভাবিত রাষ্ট্রগুলির তালিকায় প্রথমের দিকে রয়েছে পাকিস্তান। অন্যের দিকে আঙুল তুলে কি নিজের অসুখ সারাতে পারবে তারা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement