Agitation in Bangladesh

ক্ষোভাগ্নি

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, কারা এই ভাবে দেশকে একটি সম্পূর্ণ অরাজক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিল, তা তদন্তের মাধ্যমে বার করা হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫১
Share:

—ফাইল চিত্র।

আগুন জ্বলছে বাংলাদেশ জুড়ে। বিশেষত ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর, চট্টগ্রাম শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির লাগোয়া অঞ্চল ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। আন্দোলন, অবরোধ, বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। ছাত্র লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংরক্ষণবিরোধীদের সংঘর্ষে শ’তিনেক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন, অনেকেই গুরুতর ভাবে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য, পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্র। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে প্রতিবেশী দেশ হিসাবে উদ্বেগ জ্ঞাপন না করে উপায় নেই। বাংলাদেশ সরকার যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে বিবেচনা করছে— আশা রইল যে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে, স্বাভাবিক স্থিতি ফিরে আসবে। পুলিশের গুলিচালনায় হতাহতের ঘটনা নিশ্চয় অনভিপ্রেত, দুঃখজনক। এর আগেও শেখ হাসিনা সরকার অনেক কঠিন সময়ের দক্ষ মোকাবিলা করেছে, এ বারও তেমনটাই ঘটবে, আশা করা যায়। সঙ্গে এও আশা করা যাক যে, নাগরিক সমাজের দিক থেকেও আর একটু ধৈর্য ও আত্মসংযমের পরিচয় পাওয়া যাবে।

Advertisement

সংরক্ষণ যে কত সংবেদনশীল বিষয়, ভারতীয় মাত্রেই তা হাড়ে হাড়ে অবগত। সংরক্ষণ বিষয়ক সংঘর্ষ এ দেশে কেবল অতি পরিচিত নয়— সংরক্ষণকেন্দ্রিক একাধিক হিংসাকাণ্ড ভারতীয় রাজনীতিতে ইতিমধ্যে ঐতিহাসিক স্থান দখল করেছে। সেই বিপুল অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিবেশী দেশের দিকে তাকিয়ে আজ কেবল একটিই কথা বলার থাকে। এমন একটি বিষয়ে অমত-দ্বিমত না থাকাই আশ্চর্য, কিন্তু মতবৈষম্য যত দূরই হোক না কেন, উভয় পক্ষই যদি হিংসার আশ্রয় নেয়, এবং সেই হিংসা যদি সীমা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে সাধারণ মানুষের দুর্দশার আর শেষ থাকে না। ঠিক যেমন এখন ঘটছে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার ফলে। সুতরাং জনকল্যাণের দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনেই ফিরে যেতে হবে। এবং প্রশাসনের তরফেও অহিংস পথেই সেই জন-আন্দোলনের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া কোনও গত্যন্তর নেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারও এই বার্তাটিই দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, কারা এই ভাবে দেশকে একটি সম্পূর্ণ অরাজক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিল, তা তদন্তের মাধ্যমে বার করা হবে। কাজটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারের উত্তরাধিকারীদের জন্য যে সংরক্ষণের কথা উঠেছিল, তা ইতিমধ্যেই ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি হাই কোর্ট তাতে আবার নতুন করে স্বীকৃতি জানানোয় আবার বিষয়টি ক্ষোভ-ক্রোধ-উন্মাদনা তৈরি করে। তবে সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত আবারও স্থগিত করেছে, সরকারের আপিলের অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে ক্রোধের বিস্ফোরণ এতটা লাগামছাড়া হয়ে গেল কোন নেতৃত্বের উস্কানিতে, তা অবশ্যই জানা জরুরি। আজকাল সমাজমাধ্যমে বিবিধ রাজনৈতিক উস্কানি চট করেই এমন বিস্ফোরক হয়ে ওঠে। তাই বিরোধীপক্ষকে দায়িত্বসহকারে বিরোধিতার কাজটি করতে হবে। সাংবিধানিক পথ ছেড়ে দিয়ে যুবসমাজকে ব্যাপক ভাবে বিপথচালিত করা অতীব বিপজ্জনক। আশা করা যাক, সেই বিপদ থেকে রক্ষা মিলবে অচিরেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement