Wrestling Federation of India

শাস্তি

সার্বিয়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় কুস্তিগিররা যোগ দিতে পারবেন বটে, তবে তা ভারতীয় প্রতিযোগী রূপে নয়, নিরপেক্ষ প্রতিনিধি হিসাবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৫:০৭
Share:

ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনকে নির্বাসিত করেছে বিশ্ব কুস্তি সংস্থা। —ফাইল চিত্র।

এক মাসও বাকি নেই সার্বিয়ার বেলগ্রেডে কুস্তির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার, এই সময়েই খবর এল, ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনকে নির্বাসিত করেছে বিশ্ব কুস্তি সংস্থা, ফেডারেশনের সদস্যপদ আপাতত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য খারিজ। কারণ ঠিক সময়ে ফেডারেশনের নির্বাচন হয়নি। জাতীয় স্তরে যে কোনও ক্রীড়া সংস্থার ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন আন্তর্জাতিক নিয়ম মতে অবশ্যকর্তব্য, কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত হলে তবেই অর্থ বরাদ্দ, পরিকাঠামো, খেলোয়াড় তথা কুস্তিগিরদের নানা প্রতিযোগিতায় যোগদান-সহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। সেই গোড়ার কাজটিই জাতীয় কুস্তি সংস্থা করে উঠতে পারেনি, এমনকি বিশ্ব কুস্তি সংস্থার সময়মতো চেতাবনির পরেও।

Advertisement

ফলত যে চিত্রটি দেখা যাচ্ছে তা মোটেই সুখের নয়— সার্বিয়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় কুস্তিগিররা যোগ দিতে পারবেন বটে, তবে তা ভারতীয় প্রতিযোগী রূপে নয়, নিরপেক্ষ প্রতিনিধি হিসাবে। এমনকি, তাঁদের কেউ কোনও পদক জিতলেও, বিজয়ীর পোডিয়ামে সগর্বে দাঁড়ালেও বেজে উঠবে না ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। বিশ্ব স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেশের পরিচয়ই খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় প্রেরণা, সেই জায়গাটি মুছে যাওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছুই নয়। উপরন্তু বিশ্ব কুস্তিতে ভারতের মুখও পুড়ল, সাংগঠনিক গাফিলতি বা প্রশাসনিক নিয়মভঙ্গের জেরে নির্বাসন মানে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তিরও বিরাট ক্ষতি। তবে জাতীয় কুস্তি সংস্থা যে ঠেকেও শিখছে না তা তার আচরণেই প্রমাণ— এ বছরে দিল্লিতে কুস্তিগিরদের আন্দোলন চলাকালীনও বিশ্ব কুস্তির নিয়ামক সংস্থা ভারতকে ভর্ৎসনা করেছিল, শাস্তি দিয়েছিল। তার পরেও হুঁশ ফিরল না।

যে জাতীয় সংস্থা নিজের ক্রীড়াবিদদের যথাযোগ্য সম্মান দিতে ও রক্ষা করতে পারে না, তার কাছে নিয়মনিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, সহযোগিতার মতো শব্দ ও ধারণাগুলি সুদূরপরাহতই হওয়ার কথা। হয়েছেও তা-ই। জাতীয় কুস্তি সংস্থা নিয়ে নানা গোলমাল ও অভিযোগ, এ বছরের শুরু থেকেই বহু কুস্তিগির সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের যৌন নির্যাতন ও হুমকির বিরুদ্ধে দিল্লিতে আন্দোলন করেছিলেন। তা শুধু দেশে-বিদেশে খবরের শিরোনামই হয়নি, সাক্ষী মালিক বজরং পুনিয়া বিনেশ ফোগট-সহ বিশ্ব স্তরে বহু প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে পদকজয়ী কুস্তিগিরদের চূড়ান্ত অসম্মানের ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব। সভাপতি তার পরে অপসারিত হলেও জাতীয় সংস্থার সুমতি ফেরেনি, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপোষণের অভিযোগ এখনও অব্যাহত। তারই ছায়া পড়েছে জাতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন আবহে, সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা রাজ্যের কুস্তি সংস্থাগুলির অনিয়ম— যার জেরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাচনই করা যাচ্ছে না সময়ে। ক্রীড়া-প্রশাসনে রাজনীতির ছড়ি ঘোরানো, এবং রাষ্ট্রনেতা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তা দেখেও না দেখা, এই দুইয়ের শিকার হচ্ছে ভারতীয় কুস্তি। দেশের হয়ে কুস্তিগিররা পদক আনলে প্রধানমন্ত্রী সগর্ব টুইট করেন, ছবি তোলেন, কিন্তু এই ডামাডোলের বাজারে তাঁর অখণ্ড নীরবতাই সার। দেশ নিয়ে যাঁর গর্বের শেষ নেই, সেপ্টেম্বরে বিশ্ব কুস্তি প্রতিযোগিতায় কোনও ভারতীয় কুস্তিগির পদক পেলে তাঁকে জাতীয় পতাকাহীন দেখেও তিনি গর্ববোধ করবেন তো?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement