মহম্মদ মুইজ়ু। ছবি: সংগৃহীত।
মলদ্বীপের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে উদ্বেগের ছায়া দিল্লির অলিন্দে। দ্বীপরাষ্ট্রটির রাশ ‘দিল্লিঘেঁষা’ ইব্রাহিম সোলি-র হাতে থাকায় ভারত মহাসাগর অঞ্চল নিয়ে এ-যাবৎ কিছুটা স্বস্তিতে ছিল ভারত। কিন্তু তাতে বিরতি পড়তে চলেছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়ু-র আগমনে। তাঁর পূর্বসূরি ‘প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মলডিভস’-এর (পিপিএম) নেতা ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন-এর মতোই ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজ়ু। প্রেসিডেন্ট পদের প্রচারে তিনি শুধু সোলি প্রশাসনের দুর্নীতিই নয়, ভারতের উপরে সোলি-র অতি-নির্ভরতা এবং পরোক্ষে ভারতীয় সেনার উপস্থিতির কারণে দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্টের অভিযোগও এনেছিলেন। ইয়ামিনের সময়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের অন্তর্গত মলদ্বীপকে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করে চিন। ফলে, ক্ষমতায় আসার পরে মুইজ়ু যে পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন, তেমন আশঙ্কা প্রবল।
ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে বাণিজ্যিক সমুদ্রপথের কেন্দ্রে অবস্থিত মলদ্বীপ। তার উপর মালাবার উপকূলের নৈকট্যের কারণে ভূরাজনৈতিক এবং রণকৌশলগত দিক থেকে দ্বীপরাষ্ট্রটি এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে। এর মধ্যে গত এক দশকে জলদস্যু হামলা প্রতিরোধের নামে মহাসাগরে চৈনিক নৌসেনার গতিবিধি বৃদ্ধি এবং ভারত ও চিনের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে মলদ্বীপের প্রাধান্য বেড়েছে তরতরিয়ে। দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরে চিনের আধিপত্য প্রশমিত করতে মলদ্বীপের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অতীব প্রয়োজনীয়। এই অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র ‘সিকিয়োরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ (এসএজিএআর) এবং ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে মলদ্বীপকে গুরুত্বের কারণে সোলির শাসনকালে গত কয়েক বছরে বন্দর, বিমানবন্দর নির্মাণ থেকে গ্রেটার মালে কানেকটিভিটি প্রোজেক্ট-এ সহযোগিতার পাশাপাশি ঋণ মুক্তি সহায়তা-সহ আর্থিক সাহায্যও দিয়েছে ভারত। অতিমারি কালের মতো প্রয়োজনের মুহূর্তেও দ্বীপরাষ্ট্রটির পাশে থেকেছে তারা।
প্রতিরক্ষা সূত্রে মলদ্বীপকে দেওয়ার দু’টি হেলিকপ্টার এবং ডর্নিয়ার বিমান রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সে দেশে ভারতীয় সেনা আধিকারিকদের একটি দল মোতায়েন রয়েছে এক দশক ধরে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে দেশে সেনা রাখার অনুমতি আর না-ও পেতে পারে দিল্লি। তা ছাড়া চিনপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসায় চিনের কলকাঠিতে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে এ বার নতুন করে ভাবতে হবে ভারতকে। বিশেষত, ব্যক্তি-কেন্দ্রিক নীতির তুলনায় আরও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের দিকে নজর দিক তারা। লক্ষণীয়, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখারই ইঙ্গিত দিয়েছে দিল্লি। অন্য দিকে, মলদ্বীপের বর্তমান সরকারেরও মনে রাখা উচিত, ভারতের সঙ্গে তাদের আর্থিক, সাংস্কৃতিক এবং নিরাপত্তার সম্পর্ক গভীর, যা উপেক্ষা করার নয়। আর ভারতের উচিত ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা। চিনের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক দ্বৈরথে দিল্লির এমন কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয় যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে এত বছরে অর্জিত কৌশলগত অবস্থানের ক্ষতি ঘটাতে পারে।