Narendra Modi-Mamata Banerjee

ঝালাপালা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিও দাবি, উন্নয়নের প্রকল্প দিয়ে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চেয়ে জনস্বার্থকে পণবন্দি করবেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪২
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (বাঁ দিকে) এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের রাগ সংসদে যেন না দেখান তাঁরা। এই সুপরামর্শ তাঁকেই ফিরিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা বলতে পারেন, রাজনৈতিক বিরোধিতার দ্বেষ প্রশাসনের ক্ষেত্রে দেখাবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিও দাবি, উন্নয়নের প্রকল্প দিয়ে নির্বাচনে বাজিমাত করতে চেয়ে জনস্বার্থকে পণবন্দি করবেন না। দলীয় রাজনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার পরিণাম কত ভয়ানক হতে পারে, কেবল গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প বন্ধ হওয়াই তার নিদর্শন। যদি কখনও যথাযথ সমীক্ষা হয়, তা হলে প্রকাশ হবে, রাজনৈতিক তরজায় কাজ হারানোর জন্য কত পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত বেড়েছে। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, গ্রামে প্রাথমিক চিকিৎসা, পানীয় জলের সরবরাহ, গৃহহীনের আবাস— পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নানা ধরনের প্রাপ্য সুবিধা আটকে যাচ্ছে ভোটসর্বস্ব রাজনীতির ফাঁসে। অসার, একঘেয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুনে শুনে রাজ্যবাসীর কান ঝালাপালা— কেন্দ্র অভিযোগ করছে রাজ্যের দুর্নীতির, আর রাজ্য অভিযোগ করছে কেন্দ্রের বঞ্চনার। একে ‘বিতর্ক’ বলাও বাড়াবাড়ি, এ কেবল অসার ঝগড়া। ‘হ য ব র ল’ গল্পের উধো আর বুধো যেমন কেবলই নিজের বোঁচকা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়েছিল, তেমনই কেন্দ্র আর রাজ্যও বোধবুদ্ধিহীন স্বার্থ-তাড়নায় ব্যর্থতার দায় একে অপরের উপর চাপিয়ে চলেছে। দারিদ্র নিরসন, নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা, উন্নয়ন প্রকল্পের রূপায়ণ— প্রশাসনের মৌলিক চাহিদাগুলি কী করে পূরণ হবে, সে প্রশ্নও উঠছে না। প্রায় দু’বছর রাজ্যের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের গতি রুদ্ধ হয়েছে এমন টানাপড়েনে। কোনও পক্ষই নিরসনের কোনও পথ খোঁজার চেষ্টা করেনি। এখন সাধারণ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে, অতএব আগামী পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে অচলাবস্থা কাটবে, তার সম্ভাবনা কম। পরস্পরকে দুষে বাগাড়ম্বরেই দিন কাটাবেন নেতারা, তার সম্ভাবনাই বেশি।

Advertisement

এর ফল কী হতে পারে, তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির খাতে টাকা বন্ধ হওয়া। কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে এ রাজ্যের গ্রামে ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ ভবনগুলির রং হলুদ-খয়েরি হবে, না কি নীল-সাদা, কী নাম লেখা থাকবে তার গায়ে, তা নিয়ে বিবাদে প্রায় আটশো কোটি টাকা বরাদ্দ বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। রাজ্যের যুক্তি, রঙে হেরফেরের জন্য কেন স্বাস্থ্যের বরাদ্দ বন্ধ হবে? কেন্দ্রের যুক্তি, রাজ্য কেন নির্দেশ মানবে না? আসল প্রশ্ন, দুই নির্বাচিত সরকারের কী অধিকার রয়েছে ভোটদাতাদের অধিকার লঙ্ঘন করার? গ্রামীণ স্তরে চিকিৎসা সারা দেশেই উপেক্ষিত, আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির প্রায় কোনও সুবিধাই গ্রামের মানুষ পান না। যদি বা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে স্বাস্থ্যের সামগ্রিক রূপটি পরিষেবার আওতায় আনার সূচনা করল, বিধিলঙ্ঘন নিয়ে তরজার জেরে তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছল না। আবাস এবং পানীয় জলের প্রকল্পও এ ভাবে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, এবং স্থগিত হয়েছে।

অথচ যে সব ব্যর্থতা নিয়ে দু’পক্ষই অস্বস্তিতে, সেগুলো কেউই তুলছে না। যেমন, কৃষকের আয় দ্বিগুণ বা তারও বেশি করার অঙ্গীকার করেছিল দুই সরকারই, কাজের বেলায় তা ঘটেনি। অপুষ্টি নিরসনেও কেন্দ্র ও রাজ্যের সাফল্যের থেকে ব্যর্থতাই বেশি। হতাশার ছবি প্রকট হয়েছে স্কুল শিক্ষায়। সর্বোপরি, কর্মহীনতা ও বেকারত্ব কমানোর অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার। এখন দু’পক্ষই নিয়োগ বাড়ানোর চাইতে অনুদান বিতরণের দিকে ঝুঁকেছে। একই সঙ্গে, নাগরিকের জীবনের মান ও জীবিকার সংস্থান সম্পর্কিত তথ্যের প্রকাশে দু’পক্ষই নারাজ। এ সবের পরিণাম কী? আলোচনায় দু’পক্ষই অনাগ্রহী, বিপুল নীরবতা ভরানো হচ্ছে অক্লান্ত বাগ‌্‌যুদ্ধ দিয়ে। কর্মহীন, অধিকার-বঞ্চিত নাগরিকের কথায় কর্ণপাত করার সময় নেই কারও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement