প্রতীকী ছবি।
অবশেষে স্কুল খুলিল রাজ্যে। বৎসরকাল পূর্বে অতিমারির প্রকোপে বন্ধ হইয়াছিল, লকডাউন পর্বে অনলাইন পন্থায় গয়ংগচ্ছ ভাবে চলিতেছিল, শেষাবধি পুরাতন পরিসরে ফিরিল। স্কুলপড়ুয়াদের প্রতিষ্ঠানে যাইবার বিষয়টি অবশ্য পুরাপুরি অভিভাবকবৃন্দের সম্মতির উপরেই রাখা হইয়াছে। রাখাই সঙ্গত, কেননা সংক্রমণের বিপদ এখনও কাটে নাই, অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইবার আশাও নাই। সমস্যা হইল, যে সকল ছাত্রছাত্রী স্কুলে যাইবার সম্মতি পাইল না, তাহাদের জন্য এখনও ক্লাসঘরের বিকল্প জানা নাই। এবং বাস্তব বলিতেছে, অনলাইন ও ক্লাসঘর যুগপৎ সামলাইবার ন্যায় পরিকাঠামোও রাজ্যের প্রত্যেকটি সরকারি স্কুলে নাই। পঠনপাঠন শুরু করিবার ক্ষেত্রে তাই উহাই সর্বোত্তম চ্যালেঞ্জ। পশ্চিমবঙ্গ স্কুলশিক্ষা দফতরের যুগোপযোগী হইয়া উঠা আশু কর্তব্য। সমগ্র বিশ্বেই শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হইয়াছে ইন্টারনেট, অনলাইন পন্থার অভিমুখে অনপনেয় যাত্রা করিয়াছে শিক্ষাব্যবস্থা— ইহা দ্রুত অনুধাবন করা প্রয়োজন। তদনুসারে বন্দোবস্ত বিধেয়।
এগারো মাস পরে স্কুল খুলিবার প্রেক্ষিতে কলেজ না খুলিবার সিদ্ধান্ত প্রবল বিতর্কের জন্ম দিয়াছে। কিন্তু স্কুল ও কলেজের মূলগত যে ফারাকটি প্রশাসন বুঝিয়াছে, সমালোচকেরা সম্ভবত বুঝেন নাই। স্কুলপড়ুয়ারা মূলত স্থানীয় বাসিন্দা; কলেজে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশ হইতেও ছাত্রছাত্রীরা পাঠগ্রহণ করিতে আসেন। আবাসিকদের জন্য যে ব্যবস্থা করিতে হয়, অতিমারির আবহে তাহার আয়োজন অত্যন্ত কঠিন, আদর্শ বিধি পালন সম্ভব না হইলে অসঙ্গতও বটে। অর্থাৎ, হস্টেল বিষয়টির উপস্থিতি দুইয়ের ভিতর তফাত করিয়া দিতেছে। অবশ্য সরকারকেও বুঝিতে হইবে যে, অনাদি অনন্তকাল কলেজ বন্ধ রাখা কোনও সমাধান হইতে পারে না। শিক্ষামন্ত্রী বলিয়াছেন, আসন্ন সিমেস্টার প্রসঙ্গে আগামী মাসে ফের বৈঠকে বসিবে প্রশাসন। আশা করা যায়, তত দিনে বিকল্প ব্যবস্থা সন্ধানের প্রয়াস হইবে। স্রেফ পদ্ধতিগত কারণে সময়ের অপচয় ঘটিবে না। স্কুল ও কলেজের অমিল হস্টেলে, মিল অনলাইনে। কলেজেও এই ব্যবস্থা চিরস্থায়ী, বিকল্প খুঁজিবার ক্ষেত্রে তাহা বিবেচনায় রাখা আবশ্যক।
আক্ষেপের কথা, অনভিপ্রেত রাজনীতির পরশে পুরা বিতর্কটি ভ্রান্ত অভিমুখে অপসৃত হইতেছে, অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের আবর্তে ঘুরপাক খাইতেছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের সিদ্ধান্ত লইয়া প্রশ্ন তুলিতেই পারে। কিন্তু যখন বিশ্বের কোনও প্রান্তেই শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণত চালু হয় নাই, কিংবা হইলেও সংক্রমণের প্রকোপে ফের ঝাঁপ ফেলিতে হইয়াছে, তখন স্কুল-কলেজ খুলিবার জন্য এহেন চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? লক্ষণীয়— পশ্চিমবঙ্গে যাহারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলিতে উদ্গ্রীব, তাহাদের শাসনাধীন কোনও রাজ্যে তাহা খোলে নাই; বহু চেষ্টা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় শিক্ষাঙ্গনগুলির দরজাও বন্ধ রহিয়াছে। দোষের ভাগিদার প্রশাসনও। কেন ভোটের কারণ দর্শাইয়া সিদ্ধান্ত লইতে এই গড়িমসি? সকল পক্ষকেই বুঝিতে হইবে, প্রশ্নটি সমাজের ভবিষ্যতের, আসন্ন নির্বাচনে ভোট বাড়াইবার নহে। এই পরিস্থিতি রাজনীতির ঊর্ধ্বে। রাজ্যবাসী আশা করিবে, ক্ষুদ্র স্বার্থের বশবর্তী হইয়া বিরোধিতা করিবে না বিরোধীরা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে না সরকারও।