অধিকাংশ সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে প্লেটলেট অপ্রতুল।
অগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বরের শুরু— বঙ্গদেশে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়া রোগের মাহেন্দ্রক্ষণ। যুগ যুগ ধরে চলছে এই ট্র্যাডিশন, আরও কত যুগ চলবে তা বঙ্গশাসকরাই জানেন। কেননা, তাঁদের প্রবল উদাসীনতা ও অন্যবিধ কূটব্যস্ততার মধ্যে বিশেষ জায়গা পায় না সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধানের এই কার্যক্রম। সুতরাং, রুটিনমতোই কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে, এ বারেও বাড়ছে। পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে যে, কলকাতায় এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। উৎসব-অন্তে তা আরও বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এমন সময় জানা গেল যে, কেবল রোগপ্রতিরোধের কোনও ভাবনা নেই, তা-ই নয়, রোগ নিরাময় বিষয়েও কর্তারা নিতান্ত উদাসীন। অধিকাংশ সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে প্লেটলেট অপ্রতুল। আগামী কয়েক মাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে প্লেটলেটের চাহিদাও অনেক গুণ বাড়বে। হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে প্লেটলেট পাওয়া বা না-পাওয়া আক্ষরিক অর্থেই রোগীদের জীবন-মরণের প্রশ্ন। অথচ, প্লেটলেটের চাহিদা মেটাতে যে হারে রক্তদান শিবির করা প্রয়োজন, সেটাও করা হচ্ছে না। ফলে আগামী দিনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া যাবে, তাতেও গভীর আশঙ্কা।
এই রাজ্যে ডেঙ্গির চরিত্র প্রতি বছর এক থাকে না। কোনও বছর জুলাই থেকে রোগের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আবার কখনও সংক্রমণ ভয়ঙ্কর রূপে পৌঁছতে নভেম্বর মাস এসে পড়ে। ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া বছরের যে সময়েই চরম স্তরে পৌঁছাক না কেন, তার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। তার একটি দিক হল রক্ত ও প্লেটলেটের জন্য রক্তদান শিবিরের আয়োজন। অতিমারির সময় থেকেই এই রাজ্যে রক্তদান শিবির আয়োজনের সংখ্যা তুলনায় কমেছে। এই শিবিরের আয়োজন মূলত সামাজিক উদ্যোগের প্রশ্ন, ফলে এক বার তাতে ভাটা পড়লে ফের গতিবৃদ্ধি করা কঠিন হয়। অতএব, রক্তদান শিবির যাতে নিয়মিত চলতে থাকে, সেই সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বজায় রাখার কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। এ দিকে উৎসবের মরসুম যত এগিয়ে আসে, পাড়ার ক্লাবগুলির উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরের সংখ্যা ততই কমতে থাকে। ফলে, এই সময়টিতে রক্তের ঘাটতি মেটাতে সরকারি উদ্যোগে শিবিরের সংখ্যাবৃদ্ধি প্রয়োজন। বর্তমানে যেটুকু রক্তদান শিবির হচ্ছে, সেখানেও পরিষেবাগত গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। নিয়মানুযায়ী, সংগৃহীত রক্তের উপাদান চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পৃথকীকরণ করতে হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই নানা কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সংরক্ষণের পরিকাঠামোও সবল হচ্ছে না।
স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেও তৈরি থাকতে হবে ডেঙ্গির প্রাবল্যের জন্য। হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক শয্যার ব্যবস্থা, ডেঙ্গির রক্তপরীক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি, যাতে যত বেশি সম্ভব রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিহ্নিত করে যথাযথ চিকিৎসার অধীনে নিয়ে আসা যায়, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালানো, প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে রেখে সুসংহত িচকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, জনস্বাস্থ্যের প্রতিটি প্রশ্নেই প্রতিকারের চেয়ে আগাম প্রতিরোধ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। জল জমতে না দেওয়া, মশারি টাঙানোর মতো নাগরিক দায়িত্বগুলির বিষয়ে প্রচার চালানোও তার মধ্যে পড়ে বইকি।