Nirmala Sitharaman

দায় রাজ্যেরই

এই সংযোজনে যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে, এমন কোনও কথা বলা যাবে না। মহাভারত এবং বাজেট-ভাষণ, দুই-ই যুগে যুগে রকমারি প্রক্ষেপের শিকার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

অন্তর্বর্তী বাজেট-ভাষণের ‘অমৃতকাল’ অধ্যায়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন, “ভারতের আর্থিক অগ্রগতিতে পূর্বাঞ্চল এবং তার অধিবাসীরা যাতে প্রবল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে, আমাদের সরকার সে দিকে জোরদার নজর দেবে।” কী ভাবে? উত্তর মেলেনি। বাজেট-বক্তৃতার ‘পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন’ শীর্ষক অংশটি ওই একটি বাক্যেই সমাপ্ত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলতে পারেন, এই বাজেট পূর্ণাঙ্গ নয়, সুতরাং বিশদ প্রস্তাবনার অবকাশ তাঁর ছিল না। নাগরিক প্রশ্ন করবেন, তা হলে পূর্বাঞ্চলের কথা আদৌ বলা হল কেন? এই প্রশ্নের সৎ উত্তর অর্থমন্ত্রীর পক্ষে মুখ ফুটে বলা সম্ভব নয়। এক কথায় সেই উত্তর হল: নির্বাচন। লোকসভা ভোট আসছে। ‘আমাদের সরকার’কে ফিরিয়ে আনার মহান ব্রত যথাসাধ্য পালন করতে হবে। পূর্ব ভারতে শাসক দলের নির্বাচনী প্রচারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করা ব্রত পালনের অঙ্গ। বাজেট-ভাষণের ওই বাক্যটি তার অন্যতম উপচার। দলনেতারা অতঃপর নিশ্চয়ই পূর্বাঞ্চলের মানুষকে নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতে থাকবেন। এই আহ্বানের সূত্র ধরে ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’ নামক খুড়োর কলটি দেখাতেও সুবিধা হবে। সুতরাং প্রাক্-নির্বাচনী বাজেটের আরও নানা অঙ্গের মতোই ওই বাক্যটিও সংযোজিত হয়েছে।

Advertisement

এই সংযোজনে যে মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে, এমন কোনও কথা বলা যাবে না। মহাভারত এবং বাজেট-ভাষণ, দুই-ই যুগে যুগে রকমারি প্রক্ষেপের শিকার। বিশেষত ভোট সামনে এলে বাজেটে নানা ধরনের আকর্ষণী বাক্যরাজি প্রক্ষেপ করার ঐতিহ্য সব জমানাতেই চলে আসছে। তদুপরি, যে কোনও সরকারের যে কোনও বাজেটেই সমস্ত অঞ্চলের জন্য নানা বরাদ্দ থাকে, থাকতে বাধ্য। সেগুলিকে দরকার মতো ‘অগ্রাধিকার’ হিসাবে দেখাতে চাইলে ঠেকায় কে? বস্তুত, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিবের বক্তব্য থেকেও প্রকৃত সত্য সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। পূর্বাঞ্চলের জন্য এখন নতুন কী করা হবে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছেন, “পূর্ব ভারতে এমনিতেই অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে।” অর্থাৎ, যা এমনিতেই চলছে, যা গতানুগতিক, অর্থমন্ত্রী তাকেই চকচকে মোড়কে পেশ করেছেন। প্রশ্ন হল, পূর্ব ভারতের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারি উদ্যোগ বাস্তবে কতখানি হচ্ছে বা হবে? অর্থ সচিব প্রত্যাশিত ভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা বলেছেন, সার কারখানা, গ্যাসের পাইপলাইন বা রেলের লোকোমোটিভ নির্মাণের নতুন উদ্যোগের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। এবং, এই অঞ্চলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার কী করছে সেই প্রশ্নের উত্তরে, প্রত্যাশিত ভাবেই আশ্বাস দিয়েছেন, “ভবিষ্যতে এ বিষয়ে রূপরেখা স্পষ্ট হবে।” এক কথায়, খুড়োর কল।

এখানেই পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের সামনে কঠোর এবং কঠিন বাস্তব। ইঞ্জিন যেমনই হোক, আর্থিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ভরসা করে বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, রাজ্যের অগ্রগতি রাজ্যের উপরেই নির্ভর করছে। যথেষ্ট বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং সেই বিনিয়োগকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের কাজে লাগানো, এই দু’টি কাজই অত্যন্ত জরুরি। গভীর দুশ্চিন্তার কারণ এই যে, পশ্চিমবঙ্গ দীর্ঘদিন যাবৎ সেই কাজে ব্যর্থ, এবং ব্যর্থতার মাত্রা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির প্রকোপ তার একটি দিক, অন্য দিকে আছে শিক্ষার সর্বস্তরে ক্রমিক অবনতি। এই সঙ্কটের প্রথম ও প্রধান দায় অবশ্যই রাজ্যের শাসক দল এবং তার নেতৃত্বের, এক যুগের বেশি সময় ধরে যাঁরা ক্ষমতায় আসীন। রাজনীতিকরা নির্বাচনী অঙ্কের বাইরে বেরোবেন না, সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু সেই অঙ্কটিকে দৈনন্দিন তরজার গ্রাস থেকে উন্নয়নের পরিসরে প্রসারিত করা জরুরি। রাজনীতিকদের সেই কাজে বাধ্য করার দায় নাগরিক সমাজকেই নিতে হবে। যথার্থ অগ্রগতির অন্য কোনও পথ নেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement