৫১ শতাংশ ভ্রমণে টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন অনেক পর্যটক। প্রতীকী ছবি।
অতিমারিতে স্তব্ধ হয়েছিল পর্যটন, বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল এই ক্ষেত্রটি। গত দু’বছরে তা অনেকটাই পূরণ হয়েছে, জীবনে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরতেই মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন ভ্রমণে। ভারতে পর্যটন পরিষেবার মূল আর্থিক বিষয়গুলি, যেমন থাকার জায়গা, গাড়ি বুকিং ইত্যাদি ক্রমশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় হচ্ছে। বহু পর্যটক এখন আন্তর্জালে নিজেদের পছন্দ ও সাধ্যমতো বেড়ানোর জায়গা, হোটেল হোমস্টে গাড়ি ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করেন, ওয়েবসাইট বা ফোনে যোগাযোগ করে, ডিজিটাল ব্যবস্থায় টাকা পাঠিয়ে অগ্রিম বুকিং করেন। সরকার পরিচালিত পর্যটন-আবাসগুলি সরকারি বলেই এখনও ‘বিশ্বাসযোগ্য’, অসরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে ফোনে বা সমাজমাধ্যমে অন্য প্রান্তের তথাকথিত অচেনা মানুষটিকে বিশ্বাস করতেই হয়। এই বিশ্বাস, বা বিশ্বাসজাত অসতর্কতার সুযোগেই মাঝখানে ফাঁদ পাতে প্রতারকেরা। সাইবার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে, এমন একটি বহুজাতিক সফটওয়্যার সংস্থা সাতটি দেশের মোট সাত হাজার পর্যটককে নিয়ে সমীক্ষা করেছিল, তাদের রিপোর্টে উঠে এসেছে ভারতীয় পর্যটকদের উদ্বিগ্ন ছবি: ৫১ শতাংশ ভ্রমণে টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনলাইন জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, ভ্রমণ শুরুর আগেই অনলাইন টাকা খুইয়েছেন অনেকে, বুকিং-এর টাকা দিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন ২৭ শতাংশ, তথ্য চুরি গিয়েছে ৩৬ শতাংশ পর্যটকের ইত্যাদি।
ভারতের মতো দেশে পর্যটকেরা নানা আর্থ-সামাজিক অবস্থানভুক্ত। বহু মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ বছরভর পয়সা জমিয়ে সপরিবার এক-দু’বার বেড়াতে যান; প্রবাসী সন্তানের সঙ্গবঞ্চিত বৃদ্ধ মা-বাবা অনেক সময় মন ভাল রাখতে বেরোন তীর্থভ্রমণে। এই সব ক্ষেত্রেই চাকা গড়ানোর আগেই ডিজিটাল জালিয়াতির কারণে অর্থহানি হলে তা ভ্রমণের সাধ ও সাধ্য দুইয়ের উপরেই প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেয়— টাকা তো খোয়া যায়ই, নিবে যায় বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছাও। ডিজিটাল প্রযুক্তি বা লেনদেনে অনভ্যস্ত যে কেউ অতি সহজে প্রতারকের কবলে পড়তে পারেন, আন্তর্জালে হোটেল বা গাড়ি বুকিং-এর ফোন নম্বরে কারচুপি করে জালিয়াতেরা অনেক সময়েই নিজেদের ফোন নম্বরের ফাঁদ পেতে রাখে, যে কেউ তাঁদের খপ্পরে পড়তেই পারেন। ডিজিটাল পরিসরে তথ্য ও অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে যে তাঁরা সতর্ক নন, সমীক্ষায় স্বীকার করেছেন ৩১ শতাংশ ভারতীয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই জালিয়াতির সুরাহা হয় না। প্রযুক্তির দ্বারা নিমেষে তা সাধিত হয়, এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়তে পড়তেই দেখা যায় প্রতারকেরা পগার পার। উত্তরোত্তর এই প্রতারণা রূপ পাল্টাচ্ছে: পর্যটকেরা সাশ্রয়ের আশায় নতুন বা কমদামি হোটেল, নয়া বুকিং পরিষেবা বা নিত্যনতুন বেড়ানোর জায়গার খোঁজ করে থাকেন, দেখা যায় এই ‘নতুন’-এর মধ্যেই ঢুকে আছে জালিয়াতির ভূত। সবচেয়ে বড় কথা, এখনও পর্যন্ত এই সমস্যা পর্যটকের ব্যক্তিগত সমস্যা বলেই বিবেচিত; পুলিশ বা সরকার এগুলিকে ‘নাগরিক সমস্যা’ মনে করে না, সতর্কবার্তা দিয়েই কাজ শেষ। পর্যটকের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন তো আছে অবশ্যই, তবে সচেতন হওয়া দরকার প্রশাসনেরও। কোথায় কোন কুনাগরিক প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে, তাকে বাগে আনার পন্থা পরের কথা, খবরটুকু তো প্রশাসনের কাছে থাকবে!