PM Narendra Modi

অস্ত্র

এই নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের একটি বড় দিক হল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের অধীনে ৮০ কোটি ভারতীয়কে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৯:০৬
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

তথ্য কোন কাজে লাগে? প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পারিষদ শমিকা রবিকে প্রশ্ন করলে তিনি বলতেও পারেন যে, তেমন বিশেষজ্ঞের হাতে পড়লে তা বিদ্বেষের অস্ত্র হয়ে উঠতে সক্ষম। সেই কাজ তিনি করে দেখিয়েছেন— লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন রাশিবিজ্ঞানের নিয়মের অবিশ্বাস্য অপপ্রয়োগ করে তিনি এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যার মূল প্রতিপাদ্য হল, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভারতের জনসংখ্যায় হিন্দুদের অনুপাত যে হারে কমেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মুসলমানদের অনুপাত। তথ্যকে অস্ত্রে পরিণত করার এই বিপজ্জনক খেলাটি দেখে কারও মনে হতেই পারে যে, সব তথ্যের ক্ষেত্রে তা হলে সরকার কৃপণ নয়— যে ‘তথ্য’-এ তাদের রাজনৈতিক লাভ, তা তারা বিলক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। অবশ্য, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার যে বেহাল তারা করতে সক্ষম হয়েছে, তাতে লাভজনক তথ্য ‘নির্মাণ’ করা ভিন্ন গতি নেই। সে কারণেই ভোগব্যয় সংক্রান্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্য সম্পূর্ণ চেপে যাওয়া হল, এবং লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে প্রকাশ করা হল ভোগব্যয় সংক্রান্ত এক বিচিত্র পরিসংখ্যান, যাতে দারিদ্র মাপার মাপকাঠিই গুলিয়ে গেল। প্রকাশিত হল মাল্টি-ডাইমেনশনাল পভার্টি ইন্ডেক্স, দারিদ্র পরিমাপের ক্ষেত্রে যাকে প্রধান সূচক বলার কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। এক কালে ভারতের পরিসংখ্যান পরিকাঠামো গোটা দুনিয়ায় দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল— প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া সেই পরিকাঠামো ভারতীয় অর্থব্যবস্থার উন্নতিতে প্রশ্নাতীত ভূমিকা পালন করেছে। পরিসংখ্যানকে রাজনীতির বিষয়বস্তু বানানোর উদগ্র তাগিদে বর্তমান সরকার সেই গৌরবকে যমুনার কালো জলে বিসর্জন দিয়েছে।

Advertisement

এই নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের একটি বড় দিক হল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের অধীনে ৮০ কোটি ভারতীয়কে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা। ভারতে কোভিড শংসাপত্রেও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপা হয়, ফলে করদাতাদের পয়সায় দেওয়া সংবিধানস্বীকৃত খাদ্যের অধিকারের অন্তর্গত রেশনের ব্যাগেও প্রধানমন্ত্রীর মুখচ্ছবি থাকলে আশ্চর্য হওয়ার কারণ নেই। এমনকি, ইউপিএ আমলে আইন করে যা নাগরিকের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল, সেই খাদ্যকে নরেন্দ্র মোদীর বদান্যতা হিসাবে দেখানো যায় কী ভাবে, সে প্রশ্নও নাহয় মুলতুবি থাক। কিন্তু, এই প্রশ্ন করা প্রয়োজন যে, এই ৮০ কোটি প্রাপককে চিহ্নিত করা হল কী উপায়ে? এখানেই তথ্যের গুরুত্ব। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২০১৩ সালে এই প্রাপকদের চিহ্নিত করা হয়েছিল— গ্রামাঞ্চলের ৭৫% নাগরিক, এবং শহরাঞ্চলের ৫০% নাগরিক এই রেশন পাওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন। গড়ে, ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিকের অধিকার এই রেশন। অতিমারির সময় সেই তালিকাটিকে অবিকল ব্যবহার করা হয় অন্ন যোজনার প্রাপক নির্ধারণ করতে। এ দিকে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের লোকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৫ কোটি। সহজ পাটিগণিতের হিসাব অনুসারে, আরও অন্তত ১০ কোটি লোকের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল রেশনের প্রাপক-তালিকায়। সংখ্যাটি সম্ভবত আরও বেশি, কারণ এই একই সময়কালে আর্থিক অসাম্য বেড়েছে, ফলে জনসংখ্যায় দরিদ্র মানুষের অনুপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর অতি অহঙ্কারের অন্ন যোজনা থেকে বাদ পড়ছেন অন্তত ১০ কোটি মানুষ। কেন? কারণ, ২০২১ সালের জনশুমারি হয়নি। এখনও যে হিসাব চলছে, তা ২০১১ সালের পরিসংখ্যানের উপরে ভিত্তি করে। তথ্যের গুরুত্ব এখানেই যে, সেই তথ্য না থাকলে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে যান এমন বহু মানুষ, যাঁদের স্বার্থরক্ষা রাষ্ট্রের প্রাথমিকতম কর্তব্য হওয়া বিধেয়। কিন্তু, এই জমানায় তথ্য অস্ত্র, তা তো উপশম নয়। ভোটের প্রচারে কাজে লাগছে, এটাই এ জমানায় তথ্যের একমাত্র গুরুত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement