durga puja

বিকল্প উৎসব

চার দিনের শখ মিটাইতে গিয়া ভবিষ্যৎকে শোকস্তব্ধ করিবার অর্থ নাই, এই বৎসর ধৈর্য ধরিলে আগামী বৎসর উৎসবের হর্ষ দ্বিগুণ হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৩
Share:

রাশ টানিবার নির্দেশ আসিয়াছে দিল্লি হইতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জারি করা নূতন নির্দেশিকায় রাজ্যগুলিকে আসন্ন উৎসব মরসুমে বিধিনিষেধ আরোপে কঠোর হইতে বলা হইয়াছে— বিশেষত দেশের যে ২৩টি জেলায় কোভিড সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে জনসমাগম এড়াইবার নিদান। তালিকায় কলিকাতাও, তাই দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সতর্কবার্তা। বিগত গ্রীষ্মে অতিমারির দ্বিতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতা ভুলিবার নহে। অদূর অতীত হইতে শিক্ষা লইলে মঙ্গল।

Advertisement

মনে রাখিবার, গত বৎসর পশ্চিমবঙ্গে দুর্গোৎসব ছিল স্তিমিত। আদালতের রায়ে মণ্ডপগুলি ছিল কন্টেনমেন্ট জ়োন, দর্শনার্থীর প্রবেশাধিকার ছিল না। বহু পূজা উদ্যোক্তা বিকল্প বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন— মণ্ডপের বাহিরে বড় পর্দায় প্রতিমা দর্শন, আন্তর্জালে অঞ্জলি, ঘরে ঘরে প্রসাদ পৌঁছানো, শমিত সিঁদুরখেলা, অতিনিয়ন্ত্রিত বিসর্জন ইত্যাদি। উৎসব-উন্মুখ শহর ও রাজ্য েদখিয়াছিল, পরিস্থিতিবিশেষে— এবং প্রয়োজনে— উৎসবকে বিকল্প ছাঁদে গড়িতে হয়, গড়িয়া লওয়া যায়। তাহাতেও শেষরক্ষা হয় নাই, অতিমারি পরে ভীষণাকার লইয়াছে। এক বৎসর পরে এখন সার্বিক চিত্রটি হয়তো খানিক উজ্জ্বল, কিন্তু ভবিষ্যতরঙ্গের শঙ্কা নির্মূল হয় নাই, কেন্দ্রের চেতাবনিতে তাহারই প্রতিধ্বনি। পশ্চিমবঙ্গবাসীর বুঝা দরকার, নির্দেশিকা সব রাজ্যের জন্য এক বটে, কিন্তু দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশের দশেরা আর এই রাজ্যের দুর্গোৎসবের ভিতর ফারাক রহিয়াছে। অন্য রাজ্যে যাহা ধর্মকেন্দ্রিক সমাগম, এখানে তাহা ধর্ম ছাপাইয়া পরিবার-সমাজ-সংস্কৃতি ঘিরিয়া এক বৃহত্তর উৎসব, স্রেফ চার দিনের পূজা নহে। ইহা সনিষ্ঠ আরাধনা, আনন্দমেলাও; আচারের অনুষ্ঠান, অনিয়মেরও প্রশ্রয়। সেই জন্যই পূজার কয়দিন এত বাঁধভাঙা জনস্রোত, বহুপ্রতীক্ষিত বার্ষিক উৎসবে অন্তর হইতে যোগ দিবার, যুক্ত হইবার টানেই।

এবং সেইখানেই অতিমারিকে টানিয়া আনিবার মস্ত ঝুঁকিটিও। তাহা এড়াইতে কলিকাতা ও রাজ্যবাসীর এই বার সময় হইয়াছে উৎসব উদ্‌যাপনের বিকল্প খুঁজিবার। পথে বাহির হইয়া সমষ্টিতে মিলিবার আনন্দের বিকল্প হয় না, সেই সত্য মাথায় রাখিয়াই এই অপ্রিয় অথচ নূতন যুগসত্যকে সহজে লওয়া চাই: উৎসবে আনন্দ উপভোগের ধারায় বদল আনিতে হইবে। আন্তর্জালে প্রতিমাদর্শনে হয়তো সেই তৃপ্তি নাই, স্মার্টফোনে মন্ত্র শুনিয়া অঞ্জলি দিয়াও সুখ হয় না, তবু আর কোন কোন উপায়ে বিপদ না ডাকিয়া আনিয়াই আনন্দও করা যায়, তাহা ভাবিতে হইবে। বহিরঙ্গকে একেবারে কমাইয়া দিয়া অন্তরঙ্গকে আপন করিয়া লওয়া যায়, রাতভর সবান্ধব বা সপরিবার শহরভ্রমণে ভিড় না বাড়াইয়া গৃহমধ্যে বা ছোট পরিসরে স্বজন-বন্ধুদের সহিত আলাপে-ভোজনে খুশি কম পড়িবে না। অতিমারির আবহে সুস্থ থাকিবার গরজেই এই সমস্ত কিছু। চার দিনের শখ মিটাইতে গিয়া ভবিষ্যৎকে শোকস্তব্ধ করিবার অর্থ নাই, এই বৎসর ধৈর্য ধরিলে আগামী বৎসর উৎসবের হর্ষ দ্বিগুণ হইবে। বস্তুত, বাঙালির নিকট ইহা এক আত্মপরীক্ষার লগ্নও হইতে পারে— নিয়ম মানিয়া, সাবধানে থাকিয়াও যে আনন্দ হয়, তাহা নিজের কাছে প্রমাণ করিতে হইবে। আসন্ন উৎসবে নিজেকে পাল্টাইতে হইবে, উৎসবের ধ্রুপদী ধারণাকেও। সসম্মানে পাশ করিলে আগামী জীবন উৎসবমুখর হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement