ঐতিহাসিক দায়

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুন্নত ও গরিব দেশগুলির উপর সর্বাধিক পড়িতে চলিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:২৭
Share:

কথা ছিল, উন্নত দেশগুলি প্রতি বৎসর দশ হাজার কোটি ডলার দান করিবে গরিব দেশগুলিকে, যাহাতে তাহারা নিজ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে কার্যকর ভাবে যুঝিতে পারে। ২০০৯ সালের সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয় নাই। সম্প্রতি হিসাব কষিয়া জানা গেল, ২০১৯ সাল নাগাদ সেই অর্থের পরিমাণ দাঁড়াইয়াছে ৭,৯০০ ডলারের সামান্য অধিক। সাহায্যের এহেন বহর দেখিয়া ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানাইয়াছেন, তিনি হতাশ। প্রতিশ্রুতি এবং তাহা পূরণের মধ্যের ফাঁকটি সুবিশাল। সর্বোপরি, অনেক উন্নত দেশ যে পরিমাণ সাহায্যের অঙ্গীকার করিয়াছে, তাহা পর্যাপ্তের ধারেকাছেও নহে। সুতরাং, তিনি পুনরায় আর্থিক সাহায্য বৃদ্ধির আবেদন রাখিয়াছেন।
জনসনের বক্তব্য শুনিয়া কিয়োটো প্রোটোকলের কথা স্মরণে আসিতে পারে। ‘ক্লিন ডেভলপমেন্ট মেকানিজ়ম’ নামক তাহার আন্তর্জাতিক প্রকল্পটির মূল কথা ছিল, উন্নততর দেশগুলি তুলনায় অনুন্নত দেশগুলির প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো খাতে লগ্নি করিবে, যাহাতে সেই দেশগুলি কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস করিতে সফল হয়। ইহারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়াছে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাবনাতেও। সেইখানেও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাহার ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করিবার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির নেতৃত্ব দানের কথা বলা হইয়াছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মোট পরিমাণের অধিকাংশের জন্যই দায়ী উন্নত দেশগুলি। অথচ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাহাদের যে পরিমাণ তৎপর হইবার প্রয়োজন ছিল, তাহা এযাবৎ কাল দেখা যায় নাই। ইহার মধ্যে আমেরিকার নামটি সর্বাগ্রগণ্য। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ দেশে কিয়োটো প্রোটোকল চালু করিতে অস্বীকার করেন। বারাক ওবামা উষ্ণায়ন রুখিবার ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ করিয়াছিলেন ঠিকই, কিন্তু ইহাও সত্য, তাঁহার নেতৃত্বে প্যারিস চুক্তিতে আমেরিকা স্বাক্ষর করিয়াছিল ২০১৫ সালে, তাঁহার মেয়াদকালের শেষের দিকে। এবং শেষ পেরেকটি পুঁতিয়াছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, কার্বন নিঃসরণ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত নীতির উপর কার্যত বুলডোজ়ার চালাইয়া। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য কিছু আশা জাগাইয়াছেন। অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির ইঙ্গিতও মিলিয়াছে। কিন্তু তাহা কত দূর কার্যকর হইবে, সময়ই বলিবে।

Advertisement

মনে রাখা প্রয়োজন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনুন্নত ও গরিব দেশগুলির উপর সর্বাধিক পড়িতে চলিয়াছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশ সেই পরিবর্তনের সাক্ষী। এবং এই প্রভাব শুধুমাত্র ঝড়, বন্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নহে। পানীয় জলের জোগান, খাদ্য উৎপাদন, জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্র বিপদের মুখে। সুতরাং, অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত না হইলে বিশ্বের এক বিরাট অংশ প্রবল আর্থিক এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইবে। যেমন— উপকূলের পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি ব্যর্থ হইলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি আটকানো যাইবে না। অ-সুরক্ষিত হইয়া পড়িবে উপকূলে বসবাসকারী মানুষ, শিল্প এবং সাধারণ পরিকাঠামোও। সুন্দরবন অঞ্চল ইহার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। সুতরাং, উন্নত দেশগুলিকে অগ্রসর হইতে হইবে, অবিলম্বে; পরিবেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement