Health

বাড়বাড়ন্ত

কিছু দিন আগেই কেরল সরকারের ঔষধ নিয়ন্ত্রক দফতর জানিয়েছিল তারা এই সংস্থার প্রচারিত ২৯টি বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দুর্মতির সঙ্গে শক্তিধরের সমর্থন যোগ হলে ঔদ্ধত্য মাত্রা ছাড়ায়— নীতিবাক্যের মর্মার্থ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি আয়ুর্বেদ সংস্থাকে ভর্ৎসনা করে বলেছে, রোগব্যাধি
সারানোর যে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনগুলি তারা ক্রমাগত প্রচার করে চলেছে, বারংবার বলার পরেও বন্ধ করছে না, তার প্রতিটির জন্য ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হতে পারে। এই দেশখ্যাত সংস্থাটির প্রধান, সাম্প্রতিক কালে ক্রমাগত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধাচরণ করে এসেছেন। বিরোধিতায় ক্ষতি নেই, কেউ তাঁর নিজস্ব মত-পথের কথা সগর্বে বলতেই পারেন, কিন্তু সে সব কথাবার্তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হলে সঙ্কট। কোভিডকালে টিকার বিরুদ্ধে, প্রকারান্তরে আধুনিক বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে তিনি ও তাঁর অনুগামীরা সরব হয়েছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস-সহ একগুচ্ছ রোগ ও শারীরিক অসুস্থতার নিদান হিসাবে এই সংস্থা প্রচার করে এসেছে তাদের নিজস্ব আয়ুর্বেদিক ‘ঔষধ’ ও পণ্যের; বলেছে, এগুলি ব্যবহারেই রোগ সেরে যাবে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, এই প্রচার জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, কারণ অগণিত সাধারণ মানুষ তাতে শুধু যে প্রভাবিত ও প্রতারিতই হচ্ছেন তা নয়, আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

Advertisement

কিছু দিন আগেই কেরল সরকারের ঔষধ নিয়ন্ত্রক দফতর জানিয়েছিল তারা এই সংস্থার প্রচারিত ২৯টি বিভ্রান্তিমূলক বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করছে। ভারত সরকারের ১৯৫৪-র ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ় (অবজেকশনেবল অ্যাডভার্টাইজ়মেন্টস) আইন অনুযায়ী এ-হেন রোগব্যাধির ‘নিরাময়’ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনী প্রচার বেআইনি ও নিষিদ্ধ। সরকারের নিষেধও হেলায় এড়াতে পারে যারা, তাদের ঔদ্ধত্য সত্যিই বিস্ময় জাগাতে পারত, তাদের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতার সংযোগসূত্রটি অজানা থাকলে। এই বিশেষ সংস্থার সঙ্গে উত্তরাখণ্ড রাজ্য সরকার— যে রাজ্যে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়— এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অন্তরঙ্গতা সুবিদিত; যোগশিক্ষা থেকে জনসংযোগ ও রাজনীতির পরিসরে এদের সহাবস্থান দেখা গিয়েছে বার বার, নানা সময়ে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই শাসক-ঘনিষ্ঠতাই সংস্থাটির রক্ষাকবচ। তা না হলে শীর্ষ আদালতের কঠিন তিরস্কারের পরেও এঁরা দাবিতে অনড় থাকতেন না, এই ঘটনাকে আধুনিক চিকিৎসকদের ‘যোগ ও আয়ুর্বেদ-বিরোধিতা’ বলে কুযুক্তি শাণাতেন না।

কেন্দ্রীয় সরকারের মৌনও হয়তো বুঝিয়ে দিচ্ছে সমগ্র ঘটনায় তাদের সমর্থন ও অবস্থান। আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে এই সরকারের দ্বিচারিতা আজ আর প্রচ্ছন্ন নয়, সে এক দিকে ‘চন্দ্রযান’-এর বাহবা কুড়োবে, আবার অন্য দিকে পাঠ্যবই থেকে মুছবে ডারউইনের তত্ত্ব; ডাক্তারির পাঠে আয়ুর্বেদ-সহ ভারতীয় বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিতে সওয়াল করবে, এবং কোনও সংস্থা রোগ নিরাময়ের ভুল, মিথ্যা ও বেআইনি দাবি করলেও তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে না। বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীকে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রাধিকার ও তাবৎ সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চিত্রটি আজ চোখের সামনে, এই ধরনের সংস্থা ও তাদের কর্ণধারের শ্রীবৃদ্ধিও একই অন্যায় সমর্থনের জোরে। একুশ শতকের ভারতে জনস্বাস্থ্যের জন্য তা বিপজ্জনক, আরও বড় ও সুদূরপ্রসারী ক্ষতি আধুনিকতার, বিজ্ঞানমনস্কতার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement