Lok Sabha Election 2024

ভোটের অস্ত্র

নারীর ‘শ্লীলতাহানি’র বিষয়টি আসলে এখন ভোটের সময় বোমা বা বন্দুকের মতোই আরও একটি অস্ত্রে পরিণত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৪ ০৮:৩০
Share:

—ফাইল চিত্র।

নানা দিক থেকে ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচন ভারতীয় ইতিহাসে কলঙ্কের রেকর্ড তৈরি করে চলেছে। আগামী জুনে নির্বাচনের ফল যা-ই হোক না কেন, যে সব ‘অ-সামান্য’ ঘটনা এই ভোটপর্বে দেখা গেল, আশঙ্কা হয়, তার ফল ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হয়তো সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে। এক দিকে রয়েছে নির্বাচনী প্রচারে নেমে সংখ্যালঘু নিয়ে লাগাতার বিদ্বেষ ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছড়ানো। আগে এমন বিক্ষিপ্ত ভাবে হয়ে থাকলেও ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখে এমন বক্তব্য এক কথায় অশ্রুতপূর্ব। অন্য দিকে, রয়েছে নারী-নির্যাতনকে এত ব্যাপ্ত ভাবে ভোট-প্রচারে ব্যবহার করার একাদিক্রম নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালিতে ধর্ষণ বিষয়ক অভিযোগ এবং রাজভবনে খোদ রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নারী-নির্যাতনের অভিযোগ এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার ও বিরোধী, দুই দিক থেকে দুই বা ততোধিক আখ্যান ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাল মিলিয়ে চলেছে স্টিং ভিডিয়ো, স্থিরছবি ও বিবিধ তথাকথিত স্বীকারোক্তি। সংবাদমাধ্যম জুড়ে থাকছে ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, নারী-নির্যাতন হয়েছে কি হয়নি, হলে কী প্রকার ও কত দূর— তার বিচিত্র বৃত্তান্ত। গত সাত দশকের ইতিহাসে কোনও জাতীয় নির্বাচনের আবহে পশ্চিমবঙ্গের জনসমাজে এত নিম্নরুচি ও নীচ গোত্রের অভিযোগ ঘুরে বেড়িয়েছে বলে মনে করা যায় না। কোনও বিশেষ দলকে নয়, রাজনৈতিক সমাজকে সামগ্রিক ভাবে এর দায় নিতে হবে।

Advertisement

তবে ‘দায়’ নিয়ে যে তাঁদের কোনও চিত্তশুদ্ধি হবে, এমন আশা বাতুলতা। যে তৎপরতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ‘নির্যাতিতা’ নারীকে দলের প্রার্থী রূপে বরণ করেন, অন্য কাউকে ছেড়ে সরাসরি ওই প্রার্থীকে ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করার ব্যগ্রতা দেখান, তা বুঝিয়ে দেয়, ধর্ষণ যদি ঘটে থাকে, তা কতটাই তাঁর ও তাঁদের সঙ্কীর্ণ-স্বার্থ পূর্ণ করার উপযোগী। সন্দেশখালির আর সব ঘটনা ছাপিয়ে নির্যাতিতাকে একটি রাজনৈতিক সুযোগ করে তুলতে পেরে তাঁর দল কতটাই উপকৃত। প্রায় একই ভাবে, মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজভবনের অভিযোগকারিণীর প্রসঙ্গ তুলে বলেন মেয়েটির কান্না দেখে তাঁর বুক ফেটে যাচ্ছে, বুঝতে অসুবিধা হয় না নির্যাতনের বিষয়টি তাঁর কাছেও কত বড় রাজনৈতিক সুযোগ হিসাবে প্রতিভাত হচ্ছে। নতুবা পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি, সন্দেশখালি কখনও কোনও নির্যাতিতার দুঃখে যে নেত্রীর বুক বিদীর্ণ হয়নি— অন্তত তিনি তেমন কথা জনসমক্ষে বলেননি, বরং অভিযোগগুলিকেই মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন— রাজভবনের ঘটনায় তাঁকে এত শোকমুখর দেখা যাচ্ছে কেন?

নারীর ‘শ্লীলতাহানি’র বিষয়টি আসলে এখন ভোটের সময় বোমা বা বন্দুকের মতোই আরও একটি অস্ত্রে পরিণত। ভোটকালীন পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে সর্বাধিক হিংসাপরিকীর্ণ ভূমি, তাই এখানে এই নারী-কুনাট্যও আপাতত অন্তহীন। উন্নয়ন-কর্মসংস্থান দূরস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টি শতসহস্র যোজন দূরবর্তী, ভোট-মুখী সমাজের চতুর্দিকে কেবল ছড়িয়ে রয়েছে দুর্নীতি এবং বোমা, বন্দুক, হুমকি, শ্লীলতাহানির বাস্তব। কল্পনা করতে অসুবিধা হয় না যে, ক্রমশ নারী নিজে থেকেই আরও বেশি করে এই আখ্যানের অংশ হতে প্রস্তুত এবং উদ্‌গ্রীব হবেন, কেননা এটুকু ‘এজেন্সি’-তেই তাঁরা নিজেদের ‘ক্ষমতায়িত’ করতে চাইবেন, তাঁদের কাছে করণবাচকতা থেকে কর্তৃবাচকতায় উত্তরণের এটিই হবে সহজতম পথ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement