Illegal Fire Cracker Factories

বারুদের স্তূপ

বাজি তৈরির ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যাগুলিও উপেক্ষা করার মতো নয়। বাজির কারখানায় কর্মরতরা হাঁপানি থেকে চর্মরোগ-সহ নানা কঠিন অসুখে ভোগেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:০০
Share:

এ রাজ্যে বেআইনি বাজি তৈরির ঠেকগুলির কথা কারও অজানা নয়। প্রতীকী ছবি।

দীর্ঘ সময় ধরে একই অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে তা এক সময় স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়। তখন তা আর নতুন করে চমক জাগায় না। এবং তাকে প্রতিরোধের কাজটিতেও চরম ঔদাসীন্য জন্ম নেয়। পশ্চিমবঙ্গের অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণকে অনেকটা সেই গোত্রে ফেলা যায়। কিছু দিন অন্তর বিস্ফোরণের খবর মিলবে, কিছু জনের মৃত্যু ঘটবে, কয়েক জন চিরতরে পঙ্গু হয়ে পড়বেন, নিয়মমাফিক ধরপাকড় হবে, কঠোর নিয়ম তৈরির আশ্বাস মিলবে, এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় কিছুই না হয়ে পরবর্তী ঘটনার অপেক্ষায় দিন গোনা হবে— এই বৃত্তের যেন কোনও শেষ নেই। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং তিন জনের প্রাণহানি সেই দীর্ঘ তালিকায় এক সংযোজন মাত্র। এই ঘটনা মর্মান্তিক নিঃসন্দেহে, কিন্তু অস্বাভাবিক নয়।

Advertisement

অস্বাভাবিক যা কিছু, তা হল প্রশাসনিক আচরণ। এ রাজ্যে বেআইনি বাজি তৈরির ঠেকগুলির কথা কারও অজানা নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি, মহেশতলার বিভিন্ন জায়গা বেআইনি বাজি তৈরির তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে। সেই ঠিকানাগুলি কি এত দিনেও সরকারি দফতরে পৌঁছয়নি? লক্ষণীয়, করোনার পরে সরকার কোনও ব্যবসায়ীকে বাজি তৈরির অনুমতি দেয়নি। ফলে রাজ্যের যে কোনও জায়গায় বাজি তৈরির কাজই এখন বেআইনি। এই ফাঁকের সদ্ব্যবহার করে কার্যত নিয়মহীন, বেপরোয়া ভাবে চলছে বাজির অবৈধ কারবার। ন্যূনতম সুরক্ষাবিধিটুকুও মানা হচ্ছে না। এবং এই কারবার রুখতে যে কঠোরতা প্রশাসনিক তরফে প্রয়োজন ছিল, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। অবিলম্বে এই উদাসীনতার পরিবর্তন প্রয়োজন। শুধুমাত্র দুর্ঘটনার পর অথবা কালীপুজোর আগে ধরপাকড় করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। বেআইনি বাজির রমরমা রুখতে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আরোপ করে তাকে প্রশাসনিক নজরদারির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজন এই কারবারে শিশুশ্রমিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা। বস্তুত, এই অবৈধ কারবারের একটি বৃহৎ অংশ শিশুশ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল। যৎসামান্য মজুরির বিনিময়ে তাদের বারুদের স্তূপে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার এই অমানবিক রীতি কেন এত দিনেও বন্ধ করা গেল না, সেই কৈফিয়ত প্রশাসনকেই দিতে হবে।

বাজি তৈরির ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যাগুলিও উপেক্ষা করার মতো নয়। বাজির কারখানায় কর্মরতরা হাঁপানি থেকে চর্মরোগ-সহ নানা কঠিন অসুখে ভোগেন। বিশেষত, শিশুদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়। অথচ, উপযুক্ত সুরক্ষাকবচ ছাড়াই দিনের পর দিন তারা এই কাজ করে যায়। এই বিপজ্জনক পেশার কোনও বিকল্প পথের সন্ধান কেন এত দিনেও দেওয়া গেল না, সে কথাটিও ভাবা প্রয়োজন। বিশেষত, পরিবেশগত কারণে যেখানে যথেচ্ছ বাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এই রাজ্যে তার চাহিদায় ভাটা পড়ার লক্ষণমাত্র নেই। বরং বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে চোরাপথে বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে বাজি। এই ব্যর্থতা অতুলনীয়। বাজি শুধুমাত্র আমোদের বস্তু নয়, বহু জীবন এর কারণে সুতোয় ঝোলে। প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজ যত দ্রুত এই সত্যটি উপলব্ধি করবে, তত মঙ্গল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement