Maid servant

অ-সুরক্ষিত

এখনও একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যে সমস্ত রাজ্যের গৃহসহায়িকাদের আনা হয় নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৩
Share:

ফাইল চিত্র।

তাঁহাদের কাজ গৃহকর্মে সহায়তা। অথচ, দীর্ঘ লকডাউনে সেই গৃহ-সহায়িকাদের এক বৃহৎ অংশ ন্যূনতম সামাজিক সহায়তাটুকু পান নাই বলিয়া অভিযোগ। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনাচক্রে তাঁহারা অতিমারির প্রথমার্ধের সেই নিদারুণ অভিজ্ঞতার কথা তুলিয়া ধরিলেন। লকডাউনে গণপরিবহণের চাকা স্তব্ধ হওয়ায় তাঁহারা কাজে যাইতে পারেন নাই। ফলে, চাকুরি গিয়াছে। বহু পরিবারই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখিবার তাগিদে গৃহসহায়িকাদের ছাঁটাই করিয়াছে। যাঁহারা কোনও ক্রমে টিকিয়া ছিলেন, তাঁহাদের বেতন কমানো হইয়াছে, গণপরিবহণে যাতায়াতে আপত্তি তোলা হইয়াছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভাইরাস ছড়াইবার দায়টি তাঁহাদের ঘাড়ে চাপাইয়া নানাবিধ হেনস্থা করা হইয়াছে।

Advertisement

তবে, এই চিত্র শুধুমাত্র অতিমারির দান বলিয়া ভাবিলে ভুল। ভারতে মহিলাদের এই সর্ববৃহৎ অসংগঠিত ক্ষেত্রটি দীর্ঘ দিন ধরিয়াই সর্বাধিক নিয়মহীনতা এবং শোষণের শিকার। এখনও একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যে সমস্ত রাজ্যের গৃহসহায়িকাদের আনা হয় নাই। সম্ভবত তাহার একটি কারণ, এই দেশে গৃহকর্মের সঙ্গে ‘শ্রম’ এবং ‘শ্রমিক’-এর ধারণাটিকে যুক্ত করিবার অনীহা। শ্রমিক বলিতে ভারতে এখনও প্রধানত কলকারখানা বা কোনও সংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথাই ধরিয়া লওয়া হয়। গৃহকর্মকে সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত বলিয়া ভাবা হয় না। সুতরাং, দুইটি আইনে ভারতে গৃহকর্মীদের ‘শ্রমিক’ পরিচিতি দেওয়া হইলেও তাঁহাদের অধিকারগুলি আইন দ্বারা সুরক্ষিত হয় নাই। কয় জন তাঁহার পরিচারিকাকে প্রতি সপ্তাহে এক দিন সবেতন ছুটি, বোনাস ইত্যাদি দিয়া থাকেন? বরং, চুক্তিপত্রের অনুপস্থিতিতে বিনা কারণে ছাঁটাই করা হয়, বেতন কমানো হয়। বেতনের পরিমাণ নির্ভর করে উভয় পক্ষের দর কষিবার ক্ষমতার উপর। তদুপরি, কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই যৌন হেনস্থার শিকার হইতে হয়। সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থাটুকুও তাঁহাদের জন্য নাই।

তামিলনাড়ু, কেরলের ন্যায় কিছু রাজ্যে ঘণ্টা প্রতি কাজের বিনিময়ে বেতন দানের নিয়ম চালু হইলেও পশ্চিমবঙ্গ এই ক্ষেত্রে বহু পিছাইয়া আছে। এই রাজ্যে এখনও কোনও নির্দিষ্ট আইন নাই। ফলত বহু আবেদন সত্ত্বেও ন্যূনতম কাজের সময় এবং বেতনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা যায় নাই। এমনকি কর্মক্ষেত্রে তাঁহারা নির্যাতনের শিকার হইলে অভিযোগ জানাইবার কোনও নির্দিষ্ট বিভাগও নাই। এমতাবস্থায় গৃহকর্মীদের সংগঠনের পক্ষ হইতে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে নির্দিষ্ট চুক্তিপত্র, বেতন, ৫৫ বৎসরের ঊর্ধ্বে যাঁহাদের বয়স, তাঁহাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা, মাতৃত্বকালীন ছুটি-সহ একগুচ্ছ দাবি জানানো হইয়াছিল। ইতিবাচক সাড়া এখনও মিলে নাই। মনে রাখা প্রয়োজন, তাঁহাদের এক বৃহৎ অংশই স্বামী পরিত্যক্তা, কেহ বিধবা, কাহারও একার রোজগারের উপর নির্ভর করে সমগ্র পরিবার। তথাপি, আইনি সহায়তা, মানবিকতার ন্যায় শব্দগুলি যেন তাঁহাদের জন্য প্রযোজ্য নহে। নারী দিবস উপলক্ষে কখনও আলোচনা-চক্রে, প্রবন্ধে তাঁহারা উঠিয়া আসেন ঠিকই, কিন্তু বৎসরভর ঘোর অন্ধকারটুকুই তাঁহাদের জন্য বরাদ্দ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement