G20 summit

জগৎসভায়

চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পরে বালি-তে এই প্রথম মুখোমুখি হলেন মোদী ও শি জিনপিং। কিন্তু সৌহার্দ বিনিময় ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ দেখা গেল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

সম্প্রতি বালি থেকে ফেরার পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে থাকল একটি বিশেষ প্রতীক— জি-২০ প্রেসিডেন্ট-এর হাতুড়ি। বিশ্বস্তরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে যে আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ সংস্থা, তার প্রধান নেতৃত্বের প্রতি সম্মানজ্ঞাপক প্রতীক এই হাতুড়ি। সদ্যসমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে জোটের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করে ভারত। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে দায়িত্ব শুরু, এবং ২০২৩ সালের শীর্ষ সম্মেলনটির আয়োজন দিল্লিতে। পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মধ্যে জি-২০’র প্রধান দায়িত্বভার বহন: বিশেষ সম্মানের বিষয় বলতেই হয়। সম্মানের সঙ্গে দায়িত্বেরও বিষয় বটে। সাম্প্রতিক কালে ভারত বারংবার ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কথা বলে উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বর হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বজোড়া ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন, আর্থিক মন্দা, ক্রমবর্ধমান খাদ্য এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি কুপ্রভাবের মতো বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সামনে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াকে সুষ্ঠু রূপদান জি-২০’র মতো গোষ্ঠীর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এক দিকে জলবায়ু পরিবর্তন, এবং অন্য দিকে পরিবেশবান্ধব নীতি রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অনুসন্ধানের মতো দুরূহ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের নেতৃত্বের কাজটি সহজ হবে না।

Advertisement

আরও একটি দুরূহ বিষয়: চিনের সঙ্গে কূট-সম্পর্ক চালনা করা। বস্তুত, চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পরে বালি-তে এই প্রথম মুখোমুখি হলেন মোদী ও শি জিনপিং। কিন্তু সৌহার্দ বিনিময় ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ দেখা গেল না। বহু দিন ধরেই ভারতের অবস্থান পরিষ্কার— ভারত-চিন সীমান্তে প্রাক্-এপ্রিল ২০২০ সালের পরিস্থিতি যত ক্ষণ না ফিরছে, তত ক্ষণ দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফেরা মুশকিল। এমন অবস্থায় মোদী যদি শি-র সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করার বিশেষ আগ্রহ দেখাতেন, তা হলে মনে করার সুযোগ ছিল যে, সীমান্ত পরিস্থিতি বিষয়ে ভারতের প্রকৃত অবস্থান আসলে ঘোষিত অবস্থানের থেকে নমনীয়। তবে, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক না হলেও চিনের সঙ্গে মৈত্রী বজায় রাখার দায় থেকেই যায় ভারতের কাছে। কাজটি সহজ নয়। বিশেষত আমেরিকা এবং চিনের প্রেসিডেন্ট যে ভাবে পার্শ্ববৈঠক করে নিজেদের কূটনৈতিক টানাপড়েন প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন, দিল্লিতে পরবর্তী সম্মেলনের আগে হয়তো একাধিক পার্শ্ববৈঠকে সেই নীতিই অনুসরণের চেষ্টা করতে হবে ভারতকেও। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখায় সতর্ক নজরদারিও চালিয়ে যেতে হবে।

সম্মেলনের বিবৃতিতে বিশ্ব-অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রয়োজনীয়তা, সুস্থায়ী উন্নয়ন, আরও কর্মসংস্থান তৈরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, এই সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার বদলে নিতান্ত সুপারিশ হিসাবেই রয়ে যায়। এটাই এই জোটের চিরকালীন দুর্বলতা। আগামী বছর দিল্লি সম্মেলনের প্রস্তুতি পর্বে দু’শোটিরও বেশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে চলেছে। ভারতের কাছে এটা পরিকাঠামোগত ভাবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে একই সঙ্গে সুযোগও— বিশ্ব দরবারে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র তুলে ধরার সুযোগ, গ্লোবাল সাউথের পক্ষ থেকে শান্তির দূত হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অবকাশ। দেশের অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র ও শান্তি যথেষ্ট মাত্রায় রক্ষিত হচ্ছে কি না, প্রধানমন্ত্রীকে তা-ও দেখতে হবে বইকি! বালি-তে প্রেসিডেন্ট পদ হস্তান্তরের সময়ে ভারতকে গণতন্ত্রের জননী হিসাবে উল্লেখ করেছেন মোদী। ভারতের জি-২০’র সভাপতিত্বের পরিসরটিতে দেশের মধ্যে সেই গণতন্ত্রের দাবি সুরক্ষিত ও সম্মানিত করাও এখন ভারত সরকারের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ নিশ্চয়ই। সেই চ্যালেঞ্জ কতটা মেটানো সম্ভব হবে, সেটাই এখন দেখার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement