Farmers' Protest

সীমাবদ্ধ

কৃষকদের দাবি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া, এই দুইয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতীয় কৃষির প্রকৃত সমস্যা। এমএসপি যে কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

আরও এক বার কৃষক আন্দোলন। আরও এক বার রাজধানীর সীমান্তকে কাঁটাতারে, কাঁদানে গ্যাসে, পুলিশের লাঠি-বেয়নেটে করে তোলা হল দুর্ভেদ্য। শাসক বিজেপির প্রতিক্রিয়াটি গত বারের সঙ্গে অভিন্ন, তাই দেখে যদি মনে হয় যে, আন্দোলনের চরিত্রটিও অভিন্ন, তা ভুল হবে। কোন কৃষক সংগঠনগুলি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে, তাদের রাজনৈতিক চরিত্র কী, কারা নেতৃত্বে রয়েছেন— প্রতিটি প্রশ্নেই ২০২০-২১’এর আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান দফার ফারাক রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ফারাক দু’টি ক্ষেত্রে— আন্দোলনের ভৌগোলিক পরিচয়, এবং তার দাবিদাওয়া। এ বারের আন্দোলনে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের কৃষকরা অনুপস্থিত; আছেন শুধু পঞ্জাবের কৃষকরাই। অন্য দিকে, গত বার মূল দাবি ছিল কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা ব্যতিরেকেই প্রণীত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার; এ বারের প্রধান দাবি ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা এমএসপি) সংক্রান্ত। আন্দোলনকারীরা যে-হেতু মূলত পঞ্জাবের বাসিন্দা, যে রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি এমনিতেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়; এবং আন্দোলনের দাবির চরিত্র এমনই যে, তার সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা বা বৃহত্তর রাজনৈতিক তাৎপর্য সীমিত— ফলে, এ দফায় বিজেপি অনেক নিশ্চিন্ত যে, লোকসভা নির্বাচনে এই আন্দোলনের প্রভাব তাদের বড় মাপের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে পারবে না। আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলিও সম্ভবত এ বিষয়ে সচেতন যে, এই দফার আন্দোলনটি ‘স্কেলেব্‌ল’ নয়, অর্থাৎ তার আড়ে-বহরে বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমিত। ফলে, কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছে, অর্থাৎ ডাল, তুলো-সহ কিছু পণ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এমএসপি-তে খরিদের নিশ্চয়তা— তাতে কৃষক নেতারা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

Advertisement

কৃষকদের দাবি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া, এই দুইয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতীয় কৃষির প্রকৃত সমস্যা। এমএসপি যে কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বেসরকারি ক্রেতাকে এমএসপি-তে ফসল কিনতে সরকার বাধ্য করতে পারে না। ফলে, সে ক্ষেত্রে দু’টি পথ থাকে— হয় সরকারকে সব ফসল কিনে নিতে হবে পূর্বনির্ধারিত মূল্যে; অথবা, কৃষকরা বাজারেই ফসল বেচবেন, এবং এমএসপি-র সঙ্গে বাজারমূল্যের যা ব্যবধান হবে, সরকার তা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে। কোনওটিই অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যের পক্ষে গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। কৃষকদের দাবি মেনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তিগুলি থেকে বেরিয়ে আসাও সমাধান নয়। কিন্তু, এর মধ্যে সমস্যার রূপরেখাটি নিহিত রয়েছে— ভারতীয় কৃষকরা বাজার ব্যবস্থায় যুঝে উঠতে পারছেন না।

এর সমাধান বাজারের বাইরে নয়, খুঁজতে হবে বাজার ব্যবস্থার মধ্যেই। প্রথমত চাষির সুরক্ষায় ফসল বিমার গুরুত্ব অসীম। অথচ, ক্ষতিপূরণে নানা অনিয়মের ফলে কেন্দ্রের বিমা প্রকল্পের চাহিদা কমেছে। সেই সঙ্গে দরকার মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির দাপট নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে কৃষকদের ন্যায্যতর মূল্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। কৃষিপণ্য ভিত্তিক বাণিজ্য এখন অতি লাভজনক, ফলে কৃষকদের সেই লাভের প্রত্যক্ষ ভাগীদার না হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু, তার জন্য জোগানশৃঙ্খলের সংস্কার প্রয়োজন, কৃষিতে বৃহৎ বিনিয়োগ প্রয়োজন। তার পথে রাজনৈতিক বাধা বাম এবং দক্ষিণপন্থী, উভয় দিকেই সমান। ভারতে কৃষির উৎপাদনশীলতাও বাড়াতে হবে। সেচের পরিকাঠামোর প্রসার, বীজ প্রভৃতির গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে অনেক বেশি অর্থব্যয় করা বিধেয়। কিন্তু, এই সংস্কারগুলি এখনও কৃষকদের দাবি তালিকায় স্থান পায়নি, সরকারেরও গা নেই। উভয় পক্ষই হাতে-গরম লাভের প্রত্যাশী। ফলে, ভারতীয় কৃষকদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এমএসপি বৃদ্ধির দাবির গণ্ডিকে অতিক্রম করতে পারে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement