Krishnamurthy Subramanian

যুগান্তকারী?

দেশবাসী যদি বিভ্রান্ত বোধ করেন, তাঁহাদের সহায় হইতে সচেষ্ট মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫১
Share:

অর্থমন্ত্রী বলিয়াছিলেন, তিনি এমন বাজেট পেশ করিবেন, যেমনটি গত একশত বৎসরে কেহ দেখে নাই। প্রধানমন্ত্রী বলিলেন, গত এক বৎসরে অর্থমন্ত্রী যে চার-পাঁচটি ‘মিনি বাজেট’ পেশ করিয়াছেন, বার্ষিক বাজেটটিকেও তাহার পরিবর্ধন হিসাবে দেখাই বিধেয়। এই দুই সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী বক্তব্যের মধ্যে দাঁড়াইয়া দেশবাসী যদি বিভ্রান্ত বোধ করেন, তাঁহাদের সহায় হইতে সচেষ্ট মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন। ২০২১ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা-য় তিনি অসংখ্য বার ‘ভি-শেপড রিকভারি’ কথাটি ব্যবহার করিয়া বুঝাইতে চাহিয়াছেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের টেস্ট সিরিজ় জয়ের ন্যায় ভারতের অর্থব্যবস্থাও কোভিড-যুদ্ধ জিতিয়াই ফেলিয়াছে। কথাটির মূলে আছে একটি পূর্বাভাস— আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারেরও, কেন্দ্রীয় সরকারেরও— যে, আগামী অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার বিশ্বে সর্বাধিক হইবে। চিন অপেক্ষাও বেশি। এই কথাটি যে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাবাদের তুলনায় অনেক বেশি বর্তমান সম্বন্ধে নেতিবাচক মন্তব্য, কথাটি রাজনীতিকরা না বুঝিলেও অর্থশাস্ত্রী বিলক্ষণ জানেন। ভারতের বর্তমান অবস্থা অতি ভয়ানক— ফলে, আগামী বৎসরের বৃদ্ধির হারে ‘লো বেস এফেক্ট’-এর কথাটি কোনও ভাবেই ভোলা চলে না। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা সত্যই ১১.৫ শতাংশ হারে বাড়িলেও বৎসর শেষে জিডিপির অঙ্কটি কোভিড-পূর্ব জিডিপির স্তরের সামান্যই উপরে থাকিবে। তবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যে গতি আসিতেছে, তাহাও সত্য।

Advertisement

এই আশ্চর্য দোলাচলের মধ্যে দাঁড়াইয়াই আজ বাজেট পেশ করিবেন নির্মলা সীতারামন। ‘যুগান্তকারী’ বাজেট করিবার পথে তাঁহার বৃহত্তম বাধা, সরকারের হাতে টাকা নাই। সুব্রহ্মণ্যন যদিও বলিয়াছেন যে, ঋণ বা রাজকোষ ঘাটতির পরোয়া না করিয়াই খরচ করিয়া যাইতে হইবে, সেই পরামর্শটি আর্থিক সমীক্ষায় যতখানি সুন্দর, বাজেটের নথিতে ততখানি নহে। রাজস্বের ঘাটতি অর্থমন্ত্রীকে বিলক্ষণ ভাবাইবে। সুতরাং, তাঁহার প্রধানতম দায়িত্ব হইল, হাতে থাকা টাকাকে কোন পথে খরচ করিলে তাহা একই সঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির পথ সুগম করিবে, এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াইবে, তাহা নির্ধারণ করা। এক্ষণে ভুলিলে চলিবে না যে, কোভিড-১৯’এর মোকাবিলায় গত দশ মাসে তাঁহারা যতগুলি সিদ্ধান্ত লইয়াছেন, তাহার অধিকাংশই দরিদ্রতর জনগোষ্ঠীগুলির পক্ষে মর্মান্তিক হইয়াছে। তাঁহাদের শুশ্রূষা প্রয়োজন। বিভিন্ন রাজ্যে কর্মসংস্থান যোজনায় চাহিদাবৃদ্ধিতে স্পষ্ট, এখনও বহু মানুষ নিজেদের পরিচিত পেশায় ফিরিতে পারেন নাই। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াইতে সরকার ব্যয় করিলে তাহাতে যেন কর্মসংস্থান হয়, সেই কথাটি মাথায় রাখিতে হইবে। পাশাপাশি, চুয়াইয়া পড়া উন্নয়নের ভরসায় না থাকিয়া মানুষের হাতে সরাসরি টাকার জোগানেরও বন্দোবস্ত করিতে হইবে। গত কয়েক মাসে সরকার এই কাজটিতে আশ্চর্য অনীহা দেখাইয়াছে। ‘যুগান্তকারী’ বাজেটের প্রয়োজন নাই, মানুষের প্রকৃত প্রয়োজনের কথা ভাবিলেই যথেষ্ট হইবে। দুনিয়ার সর্বাগ্রগণ্য আর্থিক শক্তি হইয়া উঠিবার খোয়াব ফিরি না করিয়া অর্থমন্ত্রী যদি প্রকৃত শুশ্রূষায় মনোনিবেশ করেন, তাহাতেই অর্থব্যবস্থার মঙ্গল। তবে, তাঁহারা যে ভঙ্গিতে অর্থব্যবস্থা পরিচালনা করেন, তাহাতে আশা করিতে ভয় হয়। এই বাজেটও যদি কথামাত্রসার হয়, বিপদ গভীরতর হইবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement