ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)। ফাইল চিত্র।
ভারতের মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়ে ফের উদ্বেগ দেখা দিল। দু’মাসের মধ্যে চল্লিশটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)। সংবাদে প্রকাশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ নানা রাজ্যে আরও একশোটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন খারিজ হতে পারে। এনএমসি-র পরিদর্শনে কলেজগুলির যে সব ত্রুটি ধরা পড়েছে, তার মধ্যে যেমন রয়েছে শিক্ষকের ঘাটতি, তেমনই সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা, কিংবা উপস্থিতি নেওয়ার জন্য আধার-সংযুক্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতির অভাব। প্রশ্ন হল, এ সবের কারণ কি কেবল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, না কি সরকারি নীতির সঙ্কট? ২০১৪ সাল থেকে ক্রমাগত মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, মেডিক্যাল আসনও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নত করে নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত নব্বইটিরও বেশি নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়েছে জেলায়। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমবিবিএস আসনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, স্নাতকোত্তর আসনের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, এবং মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ৩৮৭ থেকে ৬৫৪ হয়েছে। এতগুলি নতুন কলেজে যথাযথ পরিকাঠামো এবং যথেষ্ট শিক্ষকের জোগান হবে কী করে, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি। নানাবিধ ঘাটতির ফলে কতখানি খুঁড়িয়ে চলছে জেলার নতুন মেডিক্যাল কলেজগুলি, পশ্চিমবঙ্গের ‘রেফার রোগ’ থেকেই তার ইঙ্গিত মেলে।
একই সঙ্গে, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পদ্ধতি এবং বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভারতে এমনিতেই জনসংখ্যার নিরিখে এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা কম, তার উপর প্রায় সব রাজ্যেই চিকিৎসকরা প্রধানত বড় শহর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলিতে কাজ করতে চান। ফলে প্রত্যন্ত জেলাগুলিতে মেডিক্যাল কলেজ চালু করলেও সব পদে শিক্ষক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষক নিয়োগ করলেও তাঁদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। পরিদর্শন যখনই হবে, তখনই ঘাটতি ধরা পড়তে বাধ্য। ইতিপূর্বে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) পরিদর্শনে এই সমস্যাগুলিই ধরা পড়ত। এমসিআই-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এই ত্রুটিগুলি দর্শিয়ে কলেজের অনুমোদনের বিষয়ে অতি কঠোর ভাব দেখালেও, কাজের বেলায় প্রায়ই অতি শিথিল হতেন তাঁরা।
এখন এনএমসি-র মূল্যায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যেমন, দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসক-শিক্ষকদের উপস্থিতির পরিমাপ কেন করছে কাউন্সিল, যখন ওই সময়সীমার বাইরেও কাজ করেন অনেক চিকিৎসক? এই অনমনীয়তার ফলে বাস্তব চিত্র ধরা পড়ছে না। দ্বিচারিতার অভিযোগও উঠেছে, কারণ এক দিকে কাউন্সিল কলেজগুলির অনুমোদন বাতিল করছে, অন্য দিকে সেই সব কলেজে পড়ুয়াদের ভর্তিতে বাধা দিচ্ছে না। প্রশ্ন আরও আছে। যেমন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে কি? ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে গবেষণার সংখ্যা অতি সামান্য। আর কত দিন শূন্য পদ আর উপস্থিতির হার গুণে মেডিক্যাল শিক্ষার মান স্থির হবে?