Climate Change

উত্তাপের সীমা

দূষণকারী থেকে দূষণহীন শক্তির দিকে যাত্রা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। উন্নত দেশগুলি তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে বাস্তবিক ভারতের মতো দেশকে টাকা জোগাবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ০৮:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

নির্বাচনী প্রচারের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ধরিত্রীর উত্তাপ নজরে না থাকা আশ্চর্য নয়, তবে সঙ্কট সে দিকেও কিছু কম নয়। ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম ছিল গত দু’হাজার বছরের উষ্ণতম, সম্প্রতি তা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাচীন গাছের গুঁড়ির অভ্যন্তরের বৃত্তগুলির সাক্ষ্য থেকে অতীতের সঙ্গে এই তুলনা সম্ভব হয়েছে। তদুপরি, আধুনিক যন্ত্র দিয়ে গত ১৭৪ বছর ধরে মাপা হচ্ছে তাপমাত্রা। ২০১৬ এবং ২০২০, এ-তাবৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মিলেছে যে দু’টি বছরের গ্রীষ্মকালে, তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে ২০২৩। তাপের এই তীব্রতা আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে, তা প্রায় নিশ্চিত। এমন পরিস্থিতি ঘটতে পারে, সে বিষয়ে বহু আগে থেকেই সতর্ক করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো যায়নি। তার সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা বেড়েছে, যার জন্য গত বছর তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দীর্ঘ খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে প্রাক্-শিল্পায়ন যুগের থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস অধিকের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকে ধরে রাখার লক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল, কারণ সেই সীমা পেরিয়ে গেলে মানব অস্তিত্ব সঙ্কটাপন্ন হতে পারে। এক দশক পূর্ণ হওয়ার আগেই সেই সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে, গত বছর বিশ্বের তাপ ছিল ১৮৫০-১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রার থেকে ২.০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। হিমবাহের গলন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, অরণ্যের দ্রুত হ্রাস— এই সবই বড়সড় বিপর্যয়ের দিনের দিকে ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি তীব্র হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার লড়াই। বিশেষত তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি জলের আকাল মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি-সহ বহুবিধ জীবিকা বিপন্ন। অতএব দলীয় নির্বাচনকে ছাপিয়ে উঠছে আরও বড় এক নির্বাচন— পরিবেশ রক্ষার দ্বারা প্রাণী-জগৎ রক্ষার জন্য শেষ চেষ্টা করবে ভারত, না কি জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত বিপর্যয় অনিবার্য জেনে নিশ্চেষ্ট থাকবে?

Advertisement

সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি রায়ে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা ভারতবাসীর মৌলিক অধিকার— জীবনের অধিকার এবং সাম্যের অধিকার, এই দুই নিরিখেই তা মানতে হবে। অধিকার রক্ষা যে-হেতু সরকারের কাজ, তাই এ বিষয়ে কী উদ্যোগ করা হচ্ছে, সে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী প্রচারে জলবায়ু বা পরিবেশের কথা শোনা যায়নি, তবে ইস্তাহারে প্রায় সব দলই সে প্রসঙ্গ এনেছে। বিশেষত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কম করার লক্ষ্যের কথা বলেছে প্রধান দলগুলি। বিজেপি এবং কংগ্রেস, দু’টি দলই ২০৭০ সালকে শূন্য কার্বন নিঃসরণের (নেট-জ়িরো) লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেছে। বিজেপি ২০৪৭ সালকে ‘শক্তি স্বাধীনতা’-র বছর বলে ঘোষণা করেছে। বিপুল পরিমাণে সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়তে চায় বিজেপি। তাতে যেমন দূষণকারী শক্তির ব্যবহার কমবে, বিদেশ থেকে তেলের উপর নির্ভরতাও কমবে। কংগ্রেস তৈরি করতে চায় এক বিশেষ তহবিল, যা দূষণহীন শক্তির দ্বারা চালিত শিল্প, কৃষি প্রভৃতির পরিকাঠামো তৈরি করবে, এবং ‘সবুজ অর্থনীতি’-তে ব্যাপক নিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে। অন্য দলগুলিও নানা গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছে।

দূষণকারী থেকে দূষণহীন শক্তির দিকে যাত্রা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। উন্নত দেশগুলি তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে বাস্তবিক ভারতের মতো দেশকে টাকা জোগাবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। একটা কথা স্পষ্ট— দারিদ্র ও অসাম্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে হবে। অনুন্নত অর্থনীতিতে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব আরও তীব্র। তাপপ্রবাহ কৃষক ও শ্রমিক, উভয়েরই রোজগার কমাচ্ছে, খাদ্যসঙ্কট ডেকে আনছে। সুযোগের দরজা বন্ধ হচ্ছে। যে সামান্য ফাঁকটুকু রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করতে চাই সুপরিকল্পিত নীতি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement