ফাইল চিত্র।
সুরাহার দাবি জানানো হইয়াছিল। কেন্দ্র রাজি হয় নাই। সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের জিএসটি পরিষদের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল-সহ বিরোধী শাসিত নয় রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা দাবি তুলিয়াছিলেন যে, প্রতিষেধক এবং কোভিড চিকিৎসার অত্যাবশ্যক সামগ্রীর উপর ধার্য জিএসটি শূন্য শতাংশে নামাইয়া আনিতে হইবে। কিন্তু কেন্দ্র তাহাতে সম্মত হয় নাই। আপাতত বিষয়টি আট সদস্যের এক মন্ত্রিগোষ্ঠীর পর্যালোচনাধীন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে নির্মিত প্রতিষেধকের উপর পাঁচ শতাংশ এবং ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের উপর ১২ শতাংশ হারে জিএসটি চাপানো হইয়াছে, স্যানিটাইজ়ারের ক্ষেত্রে ইহার পরিমাণ ১৮ শতাংশ।
কোভিড চিকিৎসার অত্যাবশ্যক সামগ্রীর উপর কর মকুব করিবার বিরুদ্ধে দুইটি যুক্তি পেশ করিয়াছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। প্রথমত, প্রতিষেধকের উপর ধার্য জিএসটির পরিমাণ সর্বনিম্ন। ভারতে যেহেতু কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি বহু ক্ষেত্রেই প্রতিষেধক ক্রয় করিয়া তাহা নাগরিকদের দিতেছে, ফলে প্রতিষেধক হইতে সংগৃহীত কর সরকারি কোষাগার হইতে ফের কোষাগারেই ঢুকিবে। দ্বিতীয়ত, প্রতিষেধকের উপর হইতে জিএসটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহৃত হইলে হিসাবে গোলমাল হইয়া যাইবে, ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট না মেলায় শেষ অবধি দেশজ প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাইবে। পরিণামে, জিএসটি মকুবের সুফলটুকু জনগণ অবধি পৌঁছাইবে না। এই কুযুক্তির দুইটি কাটান অর্থমন্ত্রীর হাতের কাছেই ছিল— এক, তিনি ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বাবদ অর্থ সরাসরি ভর্তুকি দিতে পারিতেন; দুই, কোভিড-পণ্যের উপর অতি স্বল্প— যেমন, ০.০১ শতাংশ— হারে জিএসটি আদায় করিয়া ব্যবস্থাটি চালু রাখিতে পারিতেন, আবার মানুষকে খানিক শ্বাস লইবার সুযোগও দিতে পারিতেন। কিন্তু, তাহাতে অর্থমন্ত্রীর প্রকৃত অভীষ্ট সিদ্ধ হইত না। গত আর্থিক বৎসরে জিএসটি আদায় আশানুরূপ হয় নাই। এই বৎসরও অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে বিভিন্ন রাজ্যে নূতন করিয়া বিধিনিষেধ আরোপিত হইয়াছে। এই অবস্থায় কর ছাড় দিয়া রাজকোষকে আরও শূন্য করিতে নারাজ।
কিন্তু, প্রশ্ন যেখানে নাগরিকের জীবনের, সেইখানেও কি সরকার রাজস্ব হইতে প্রাপ্ত লাভ-ক্ষতির হিসাব করিবে? সংক্রমণ এবং লকডাউনের কারণে অনিশ্চিত জীবিকার মাঝে পড়িয়া নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হইয়াছে। এমতাবস্থায় শাকের আঁটিটিও যাহাতে তাঁহাদের উপর না চাপে, তাহা সরকারকেই নিশ্চিত করিতে হইবে। যে সকল সামগ্রীর উপর শূন্য জিএসটি-র দাবি জানানো হইয়াছে, কোভিড-যুদ্ধে সেইগুলিই চিকিৎসক-সহ সাধারণ মানুষের একমাত্র হাতিয়ার। সুতরাং, সেইগুলি সহজলভ্য করিয়া তোলা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। পাঁচ শতাংশ হারে জিএসটি আদায় হইলে পণ্যের বিক্রয়মূল্য শেষ অবধি কতখানিই বা বাড়ে, তাহাতে পণ্যটি কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া যায় কি না, এই তর্কগুলি অনাবশ্যক। জিএসটি ছাড় দিবার যে প্রতীকী মূল্য, তাহার গুরুত্ব অপরিসীম। বিপ্রতীপে, কর আদায়ের জন্য সরকারের এই নাছোড় মনোভাব বলিতেছে, নাগরিকের মঙ্গলকামনার গুরুত্ব সরকারের নিকট যৎসামান্য। যে দেশে নাগরিককে টিকা কিনিয়া লইতে হইতেছে, সেখানে এই কথাটি খাঁড়ার ঘা-ই বটে।