Doctors

অ-সামান্য

চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি অতি স্পেশালাইজ়ড বা সুবিশেষ জ্ঞান, যাতে ডাক্তার ব্যতীত অন্য কারও অধিকার নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত বা প্রাইভেট প্র্যাক্টিসরত ডাক্তারদের পরিষেবার গুণমান সম্বন্ধে কি বিজ্ঞাপন দেওয়া চলতে পারে? জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল এই প্রশ্নটি বিচার করছে। কেউ বলতেই পারেন, নয় কেন? ডাক্তাররা একটি বিশেষ পরিষেবা বিক্রি করছেন; অন্যান্য পরিষেবার ক্ষেত্রে যেমন বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়, ডাক্তারদের ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন? যে কোনও পণ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য জ্ঞাপন অথবা সম্ভাব্য ক্রেতাকে ভুল পথে পরিচালিত করা অন্যায়— ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও ওই সীমাটুকু মানাই যথেষ্ট। যুক্তিটি যে আকর্ষণীয় তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু অন্য কোনও পরিষেবার সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবাকে এক করে দেখায় কিছু মূলগত সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, চিকিৎসা বিজ্ঞান একেবারে আক্ষরিক অর্থেই জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। অন্য কোনও পণ্য বা পরিষেবা যত মহার্ঘই হোক না কেন, সে ক্ষেত্রে ভুল সংশোধনের অবকাশ থেকে যায়। ভুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ক্ষতিপূরণই ধার্য হোক না কেন, তাতে প্রকৃত ক্ষতি কখনও পূরণ করা সম্ভব হয় না। অতএব, একটি মহামূল্য গাড়ি অথবা বিলাসবহুল হোটেল পরিষেবার সঙ্গেও একটি সাধারণ চিকিৎসা প্রক্রিয়ার তুলনা চলে না। বেসরকারি হাসপাতালে বা প্রাইভেট প্র্যাক্টিসে চিকিৎসকরা বাজারমূল্যে সেই পরিষেবা বিক্রি করলেও না। ফলে, অন্য পণ্য বা পরিষেবায় যদি বিজ্ঞাপন হতে পারে, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী ডাক্তাররাই বা বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না কেন, এই সরল যুক্তিটি পরিত্যাজ্য। চিকিৎসা অন্য কোনও পরিষেবার সঙ্গে তুলনীয় নয় বলেই।

Advertisement

দ্বিতীয় সমস্যা হল, চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি অতি স্পেশালাইজ়ড বা সুবিশেষ জ্ঞান, যাতে ডাক্তার ব্যতীত অন্য কারও অধিকার নেই। অতএব, কোনও চিকিৎসক তাঁর দক্ষতা বা বিশেষত্ব সম্বন্ধে যে বিজ্ঞাপন করছেন, তা কতখানি সত্য; বা কোনও বিশেষ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেই বিজ্ঞাপিত দক্ষতাটি কতখানি সুপ্রযোজ্য, সে কথা বোঝা সাধারণ মানুষের সাধ্যাতীত। এমনকি, যাঁরা ততখানি সাধারণ নন, তেমন শ্রেণির পক্ষেও ডাক্তারদের দাবির সত্য-মিথ্যা বা তাৎপর্য বোঝা কঠিন। এই দক্ষতা যে-হেতু সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পরিভাষায় যাকে বলে কোয়ান্টিফায়েবল তা নয়, ফলে দুই ডাক্তারের বিজ্ঞাপিত গুণাবলির মধ্যে তুলনা করাও সাধারণ মানুষের পক্ষে মুশকিল। ফলে, এই ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়াতে পারে অপতথ্যের বাহক।

জ্ঞানের সুবিশেষত্বের কথাটি অন্য অনেক পণ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে তার একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে— চিকিৎসার দুনিয়াটি এক অর্থে সঙ্ঘবদ্ধ; সব চিকিৎসকই তাঁদের পেশাদার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে, আশঙ্কা থেকে যায় যে, কোনও এক জন চিকিৎসকের অপতথ্যের যথেষ্ট প্রতিবাদ অন্য চিকিৎসকদের তরফে আসবে না। এমন প্রতিবাদও হতে পারে যা মূলত অসূয়াপ্রসূত। খেয়াল করে দেখার, ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা করছেন কি না, এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কখনও কোনও সংশয় সৃষ্টি হলে তার মীমাংসা হওয়া রীতিমতো কঠিন। তথ্যের অসমতা, ক্ষমতার উচ্চাবচতাজনিত সমস্যাগুলি যে ক্ষেত্রে স্বভাবতই রয়েছে, সেখানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরও জটিলতা সৃষ্টি করা উচিত হবে কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement