—ফাইল চিত্র।
বার্তা দিয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশস্ত লনে ছাত্রছাত্রীরা ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে রাত জাগছেন, দিনভর থাকছেন স্লোগানে ও গানে। এই সবই গাজ়া তথা প্যালেস্টাইনের উপর নেমে আসা ইজ়রায়েলি যুদ্ধ ও আগ্রাসনের প্রতিবাদে। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের এই ঘটনা আজ আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা গ্রহণ করেছেন: টেক্সাস, অ্যারিজ়োনা, সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে শুরু করে সর্বত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে ইজ়রায়েল-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আন্দোলন ছত্রভঙ্গের চেষ্টাও চলেছে: পুলিশি ধরপাকড়, ছাত্রদের গ্রেফতার, নিপীড়ন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাম কেটে দেওয়া বা বরখাস্তের মাধ্যমেও। গত দশ দিনে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ন’শো ছাত্রছাত্রী গ্রেফতার হয়েছেন। আন্দোলন থামেনি, ছড়িয়ে পড়েছে কানাডা, ফ্রান্সেও।
আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস আজকের নয়। নাগরিক অধিকার আন্দোলন, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন বা ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ছিলেন পুরোভাগে। সাম্প্রতিক ইজ়রায়েল-বিরোধী আন্দোলন তারই উত্তরাধিকার বললে অত্যুক্তি হয় না। ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলি লক্ষ করলেই তা বোঝা যাবে। তাঁদের বক্তব্য স্পষ্ট: গাজ়া বা প্যালেস্টাইনে ইজ়রায়েলের সামরিক কীর্তিকলাপ অক্ষুণ্ণ রাখার সঙ্গে যুক্ত, এমন যে কোনও সংস্থার সঙ্গে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে; ইজ়রায়েলি সরকার বা সংস্থার দেওয়া অর্থ— যা দিয়ে ইজ়রায়েলের সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত গবেষণা হবে— বন্ধ করতে হবে; ইজ়রায়েল থেকে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোন খাতে কী অর্থ আসছে তা জানাতে হবে স্পষ্ট ভাবে। এই দাবিদাওয়া ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বহতা ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস’ (বিডিএস) আন্দোলনেরই অন্য এক রূপ, যা ঘটছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের সহমর্মী শিক্ষক, কর্মী ও সাধারণ মানুষের সহযোগে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত এই দাবিগুলি মেনে নেননি, বরং ছাত্র-ধরপাকড়, গ্রেফতার ও বরখাস্তের মতো পদক্ষেপে তাঁদের অবস্থানও আন্দাজ করা যায়।
ছাত্রদের এই আন্দোলন এবং তার উপর নেমে আসা প্রত্যাঘাত চিনিয়ে দেয় ক্ষমতার আগ্রাসী মুখকে। বুঝিয়ে দেয়, কী ভাবে সে গ্রাস করতে চায় সমাজ ও জীবনের তাবৎ প্রতিষ্ঠানগুলি— উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তো অবশ্যই, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই যুগে যুগে মুক্ত বুদ্ধি ও প্রতিবাদী চেতনার গর্ভগৃহ। ক্ষমতার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রতিষ্ঠা দিতে সর্বদা পথ দেখিয়েছে আমেরিকার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকসমাজ, গড়ে তুলেছে ক্যাম্পাস আন্দোলন; সাধারণ মানুষ তাতে শামিল হয়েছে। এ-হেন উদাহরণ গত শতকের আমেরিকায় ভূরি ভূরি, তার ধারা বহতা এ কালেও। ঘরের কাছেও সমধর্মী দৃষ্টান্ত মিলবে, তবে তা হাতে গোনা, কারণ এখানে ক্যাম্পাসে ছাত্র আন্দোলন দূরস্থান, বিক্ষোভ দানা বাঁধলেই নেমে আসে ক্ষমতার খড়্গ। ক্ষমতার প্রতিস্পর্ধী, সচেতন, সরব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কী করে জনচেতনা জাগাতে পারে, আমেরিকার ছাত্ররা সেই পথটি আরও এক বার দেখালেন।