Women workers

মেয়েরা কোথায়?

মহিলাদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার কম কেন, তার কারণ স্বভাবতই বহুবিধ। অতিমারি-পরবর্তী পর্যায়ে মহিলা শ্রমিকদের মজুরির হার রীতিমতো কমেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩০
Share:

মহিলাদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার কম কেন, তার কারণ স্বভাবতই বহুবিধ। ফাইল ছবি।

২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২-এর জুন মাস অবধি দেশে কর্মসংস্থানের ছবিটি কেমন ছিল, তা কেন্দ্রীয় স্ট্যাটিস্টিকস অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস থেকে প্রকাশিত পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে থেকে স্পষ্ট। প্রথম সুসংবাদ, এই সময়কালে ভারতের গ্রাম এবং শহরাঞ্চল, উভয় ক্ষেত্রেই বেকারত্বের হার তার আগের বছরের তুলনায় কমেছে। গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার ৩.৩ শতাংশ থেকে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩.২ শতাংশে, শহরাঞ্চলে যা ৬.৭ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ। সমীক্ষার সময়কালটি দেখলে তার কারণ বোঝা সম্ভব। সমীক্ষাটি করা হয়েছে অতিমারির প্রবল ধাক্কা কেটে যাওয়ার অব্যবহিত পরেই, যখন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ফের গতিশীল হচ্ছিল। কিন্তু, গভীরতর প্রশ্ন হল, বেকারত্বের পরিসংখ্যান থেকে কি আদৌ কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির গোটা ছবিটা বোঝা সম্ভব? দেশে কর্মক্ষম বয়সভুক্ত জনগোষ্ঠীর যত জন কাজ খুঁজছেন, তার মধ্যে যত জন কাজ পাননি, শতাংশের হিসাবে সেই অনুপাতটিই হল বেকারত্বের হার। যত জন কাজ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছদ্ম বেকার কত জন, কত জন স্বনিয়োজিত, এই হিসাব বেকারত্বের হারে সব সময় প্রতিফলিত হয় না। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই হিসাবে শুধু তাঁরাই আছেন, যাঁরা কাজ খুঁজছেন— কর্মক্ষম বয়সের কত মানুষ আদৌ কাজ খুঁজছেন না, সেই হিসাবটি বেকারত্বের হারে ধরা পড়ে না। অতএব, কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র বুঝতে চাইলে অন্য মাপকাঠির দ্বারস্থ হওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

তেমনই একটি মাপকাঠি হল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট বা শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার। দেশের কর্মক্ষম বয়ঃসীমার মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠীর কত শতাংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় ভাবে কাজ খুঁজছেন, শতাংশের হিসাবে সেই অনুপাতটিকেই বলা হয় শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থব্যবস্থা যখন ভাল অবস্থায় থাকে, মানুষ যখন কাজ পাওয়ার আশা করেন, তখনই শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার বাড়ে। অতিমারি চলাকালীন এই হার তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হ্রাস পেয়েছিল, পরবর্তী কালে তা বাড়ে। দেশের কর্মক্ষম বয়ঃসীমায় থাকা মহিলাদের কত শতাংশ শ্রমশক্তিতে যোগ দিচ্ছেন, তা যে দেশের আর্থিক উন্নয়নের একটি বড় সূচক, সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা একমত। ভারত এই বিন্দুতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। বর্তমান সমীক্ষা জানাচ্ছে যে, ২০২১-২২ সালে গ্রামে এবং শহরাঞ্চলে মহিলাদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার যথাক্রমে ৩৬.৬ শতাংশ ও ২৩.৮ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ৭৮.২ শতাংশ ও ৭৪.৭ শতাংশ। এই বিপুল ব্যবধান বলে দিচ্ছে, দেশের সার্বিক শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ কাজের বাজারে আসছেই না। অর্থব্যবস্থায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। বর্তমানে ভারতের যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যাগত সুবিধা তৈরি হয়েছে, মহিলাদের শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার না বাড়লে তা খোয়া যাবে।

মহিলাদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার কম কেন, তার কারণ স্বভাবতই বহুবিধ। অন্যতম কারণ হল, অতিমারি-পরবর্তী পর্যায়ে মহিলা শ্রমিকদের মজুরির হার রীতিমতো কম থেকেছে। পরিস্থিতিটি ভারতের জন্য কেন অতি উদ্বেগজনক, তা পড়শি দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা সম্ভব। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই মেয়েদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে যোগদানের হার ৫০ শতাংশের বেশি; চিনে এই হার প্রায় ৭০ শতাংশ। বহু অর্থনীতিবিদের মত, ১৯৭০ এবং ১৯৮০-র দশকে পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানের পিছনে ছিল মেয়েদের শ্রমশক্তিতে যোগদানের হারে প্রভূত বৃদ্ধি। ঘরের পাশে বাংলাদেশে বর্তমানে সেই ঘটনা ঘটছে। ফলে, পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement