Food Delivery Workers

দুর্বহ

দেশ জুড়ে যুবশক্তির এক বিরাট অংশ কাজ করছে পর্যাপ্ত অর্থ, সামাজিক সুযোগসুবিধা, নিরাপত্তা ও সর্বোপরি সম্মান ছাড়া, এ কি শেষ বিচারে সরকার তথা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:০৪
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঘরে বসে নামমাত্র সময়ে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হাতে পাওয়া যায় যাঁদের দৌলতে, সেই ফুড ডেলিভারি ও অন্য গিগ কর্মীদের নিয়ে করা এক জাতীয় সংস্থার সমীক্ষা-রিপোর্টে জানা গেল: ফুড ডেলিভারি কর্মীদের অন্তত ৩২% স্নাতক, ৬৭% এই কাজ করছেন আগের তুলনায় বেশি বা অতিরিক্ত রোজগারের আশায়। ৩১ শতাংশেরও বেশি কর্মী এ কাজ বেছে নিয়েছেন চার মাস কর্মহীন থাকার পর, ৯% অন্য কাজ হারিয়ে, ২৪% কর্মী গোড়া থেকেই এ কাজে। এত কিছুর পরেও, সপ্তাহে ছ’দিন অন্তত ১১ ঘণ্টা করে কাজ করেও তাঁদের মাসিক গড় আয় মাত্র ২০ হাজার! তথ্য নিষ্করুণ, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আটকায় না, যখন জানা যায় এঁদের সবেতন ছুটি, পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা ও অন্য আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই; ন্যূনতম নির্ধারিত বেতন-কাঠামো থেকে ওভারটাইম পেমেন্ট পর্যন্ত সবই কর্তৃপক্ষের হাতে, চাকরির নিরাপত্তাই নেই কোনও। এপ্রিলে নয়ডা-গুরুগ্রামে এক ডেলিভারি সংস্থার কর্মীরা পথে নেমেছিলেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডেলিভারি-প্রতি উপার্জন ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকায় নিয়ে এসেছিলেন। এঁদের নিত্যসঙ্গী সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপ, সময়ের তাড়া, এমনকি গন্তব্যে পৌঁছতে মোটরবাইকে বেলাগাম গতি তোলার নির্দেশও।

Advertisement

এই সবই সমাজের চোখে পড়ে না, কারণ পরিষেবা পৌঁছে-দেওয়া মানুষগুলির ব্যক্তিক বা সমষ্টিগত দুর্গতির খবর উপভোক্তারা রাখেন না, রাখলেও একে এই অর্থনীতি-কাঠামোর অনিবার্য বৈশিষ্ট্য বলে হাত ধুয়ে ফেলেন। অত্যল্প সময়ের চুক্তিভিত্তিক কাজের শ্রমবাজার নিয়ে যার কারবার, একুশ শতকের আন্তর্জাল-প্রযুক্তির হাত ধরে যার রমরমা, সেই ‘গিগ ইকনমি’-র কিছু চরিত্রলক্ষণ এগুলি বটেই, কিন্তু তাতে কর্তৃপক্ষের অতিনিয়ন্ত্রণ ও শোষণের ‘পাপ’ক্ষালন হয় না। তাঁরা জানেন যে, এই অর্থনৈতিক কাঠামোয় কর্মী তথা শ্রমশক্তির জোগান অনন্ত, জনাকয়েক বেগড়বাঁই করলে তাঁদের পত্রপাঠ বরখাস্ত করলেই হল, অচিরেই শূন্যস্থান পূর্ণ হয়ে যাবে বড় আর্থিক ক্ষতি ছাড়াই। উপরন্তু স্থায়ী বা সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের মতো এঁদের মাথার উপর দীর্ঘলালিত সংগঠনের ছাতা নেই, ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাপ-বেসড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কারস (আইএফএটি) এঁদের সকলের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেনি, খুচরো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছাড়া এই কর্মীদের বড় মাপের আন্দোলনও জমাট বাঁধতে পারে না তাই।

দেশ জুড়ে যুবশক্তির এক বিরাট অংশ কাজ করছে পর্যাপ্ত অর্থ, সামাজিক সুযোগসুবিধা, নিরাপত্তা ও সর্বোপরি সম্মান ছাড়া, এ কি শেষ বিচারে সরকার তথা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়? কর্মসংস্থান কোন রসাতলে গেলে দেশের অমূল্য মানবসম্পদকে মরিয়া হয়ে এই উপার্জনপথে আসতে হয়, দেশের উজ্জ্বল অর্থনীতি নিয়ে গর্ব করা কেন্দ্রীয় সরকার তার সদুত্তর দিতে পারবে কি? সমীক্ষা বলছে, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে ফুড ডেলিভারি কর্মীদের প্রায় সকলের রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমা কার্ড আছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কার্ড নেই ৮৮% কর্মীর। অর্থাৎ কেবল সুযোগসন্ধানী সংস্থা কর্তৃপক্ষের হাতেই নয়, এই কর্মীরা কেন্দ্র ও বহু রাজ্য সরকারেরও উপেক্ষা ও বঞ্চনার শিকার। শিক্ষার মূল্য নেই, চাকরির বাজার নেই, কাজ পেলেও আর্থ-সামাজিক প্রণোদনা নেই যাঁদের, সেই যুবশক্তি কোন ‘অমৃতকাল’-এর বার্তাবহ?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement