Migrant Labour Missing

নিখোঁজ পরিযায়ী

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবনতি এমনই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, দক্ষ, অর্ধদক্ষ, এমনকি অদক্ষ শ্রমিকরাও রুটিরুজির সন্ধানে ভিন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও পাড়ি দেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৯:১৩
Share:

ওয়েনাডে ধস। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেরই গন্তব্য কেরল। এ রাজ্যের শতাধিক পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করতেন ওয়েনাড়ের একটি বাগিচা সংস্থায়, যে ওয়েনাড় সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত। যে চারটি গ্রাম ধুয়েমুছে গিয়েছে, সেখানকার নিখোঁজ তালিকার অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের শ্রমিক বলে আশঙ্কা। কিন্তু সংখ্যাটি ঠিক কত, তাঁরা কোন জেলার বাসিন্দা, জীবিত থাকলে কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন— সেই সংক্রান্ত তথ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার যথাসাধ্য সংগ্রহ করেছে। তবু বেশ কিছু শ্রমিক নিখোঁজ। অতিমারি প্রমাণ করে দিয়েছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার কী অসহনীয় রকম উদাসীন। এই উদাসীনতার মূল্য প্রচুর শ্রমিককে দিতে হয়েছিল জীবিকার, এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণের বিনিময়ে। তাঁদের সংখ্যা, ক্ষতির পরিমাণ যে ঠিক কত, তার হদিস কোনও সরকারই দিতে পারেনি। অতঃপর চারটি বছর অতিক্রান্ত। এখনও পরিযায়ীদের নিরাপত্তা বিষয়ে যথাযথ তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি হয়নি, তা ফের প্রমাণিত হল।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবনতি এমনই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, দক্ষ, অর্ধদক্ষ, এমনকি অদক্ষ শ্রমিকরাও রুটিরুজির সন্ধানে ভিন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও পাড়ি দেন। যাওয়ার পথে বা কর্মস্থলে দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদের অসহায়তার বিষয়টি কিছু দিনের জন্য চর্চায় উঠে আসে। যেমন ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বা মিজ়োরামে নির্মীয়মাণ সেতু-দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুতে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসেছিল। কিন্তু পরিযায়ীদের বিষয়ে সরকারি স্তরে সুসংগঠিত কাজ এখনও ঢের বাকি। পরিযায়ী সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের জন্য নির্দিষ্ট পোর্টাল চালু করেছে। তাঁরা যাতে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান, তার জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চালু হয়েছে। সর্বোপরি, শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে
যাওয়া রুখতে ‘উৎকর্ষ বাংলা’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জেলাতেই তাঁরা যাতে কাজ পান, সে বিষয়ে শ্রম দফতরকে কাজে লাগানোর কথাও জানিয়েছে সরকার। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা, গতিবিধি, কর্মক্ষেত্র বিষয়েই সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে অন্য প্রকল্পগুলির গুরুত্ব কি খানিক লঘু হয়ে যায় না? এই কাজটি করা কি এতই কঠিন যে, বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও তা করা হয়ে ওঠে না?

ভোটের সময় সব দলই পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা ভেবে ব্যাকুল হয়, আর ভোট মিটলে তাঁদের ভুলে যায়। অথচ, পরিযায়ী শ্রমিকদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে বিপদের দিনে উভয় সরকারের আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সাহায্য পাঠানোর কাজটি সহজতর হয়, সহজ হয় বিপন্ন পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও। তা ছাড়া কর্মস্থলে এই শ্রমিকরা প্রায়শই নানাবিধ হেনস্থার সম্মুখীন হন। নিয়মিত বেতন, এমনকি থাকা-খাওয়া, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ন্যূনতম ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের সংখ্যা কম নয়। অথচ, সমগ্র বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে ধোঁয়াশা থাকায় কোনও কার্যকর পদক্ষেপ করা যায় না। নিজ রাজ্যের শ্রমিকদের একাংশের প্রতি সরকারের এই ঔদাসীন্য ভয়ঙ্কর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement